এই তো বিষাদ ভোরবেলা হেঁটে গেল একাকিনী
সুষময়; রাখাল আসেনি আজ এই খোলা পথে
ভুল ক’রে ফেলে রেখে বটমূলে বাঁশি তার। নেই
অন্য কেউ এ মুহূর্তে উদাস গলিতে। দোতলার
ছোট ঘর থেকে একজন অসুস্থ মানুষ দ্যাখে
আকাশ, গোলাপ, কাক, শালিকের নাচ, ভেজা গাছ।
লোকটা নিভৃতে ব’সে ছবি দ্যাখে, ছবি আঁকে আর
মাঝে-মাঝে আঁক কষে হিজিবিজি কী জানি কিসের
ঘোরে, ফের মুছে ফ্যালে। নীরবে তাকায় ছবিটির
নৈর্ব্যক্তিক ভগ্নাংশের দিকে। ভাবে, সে, শৈশব তার
কেটেছে পাখির ডিম সংগ্রহের বাসনায় আর হারিকেন
জ্বেলে নামতার নূপুরের তালে দিব্যি দুলে দুলে।
কৈশোরে লোকটা জেনেছিল ক্রমে পাটীগণিতের
উজ্জ্বল যাদব চক্রবর্তী নন তত ভীতিপ্রদ,
যত তাঁর হাত ধ’রে ঘুর সিঁড়ি ভাঙার সময়
মনে হয়। শুধু অভিনিবেশের কেন্দ্রে ঈগলের
চোখ রাখলেই বেশ দীক্ষা মিলে যায়। লোকটার
হিশেবের খাতা তবু প্রমাদের কাঁটার মাদুর।
লোকটা অসুস্থ বড়, বিশেষ চেয়ারে একজন
বিজ্ঞানের প্রভু লগ্ন সারাক্ষণ ঘাতক পীড়ায়,
যিনি শুদ্ধ গণিতের দেয়ালি জ্বালিয়ে সময়ের
ইতিহাসে জাগান নতুন শিহরণ। গণিতের
কিরণে নির্মম ব্যাধি স্বৈরাচার ভুলে থাকে;
আজো তিনি ক্রীড়াশীল মোহনীয় সংখ্যার খেলায়।
বিশ্বময় সংখ্যাগুলো হীরের কুচির মতো নাচে
প্রতীকের রূপ ধ’রে। এ গ্রহ ক্রমশ পাল্টে যাচ্ছে
সাইবারনোটিকস্ তত্ত্বের স্ফুরণে; সে লোকটা
কেমন বিস্ময়ে দ্যাখে বিবাগী কবির মানসীও
তীক্ষ্ম নাক, আয়ত চোখের নম্র বিভাবরী নিয়ে
পরিস্ফুট গণিতের ঔরসের মোহন আভায়।
লোকটা নিমগ্ন সুন্দরের ধ্যানে, ভেসে ওঠে তার
দু’চোখে, সুদূর নীলিমার বীথিকায় পরস্পর
হাত ধ’রে নাচে অবিরত সঙ্গীত, কবিতা আর
বিশুদ্ধ গণিত, শোনে গোলাপ বলছে মৃদু স্বরে
‘আমিই গণিত আর গণিতই গোলাপ গূঢ় এক
ঝলসিত তরঙ্গের ভেতরে সৃজনে উন্মুখর!