Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » সুশীলা || Sabitri Das

সুশীলা || Sabitri Das

জন্মের পর বড়ো আদরে নাম রেখেছিলে সুশীলা,
আশা ছিল -‘এ মেয়ে রাখবে নামের মর্যাদা!”
তা রেখেছি বৈকি,তাদের ইচ্ছে আর আমার নামের মর্যাদা রাখতে কী না করেছি আমি !
ঠিক যেমনটি দেখলে লোকে সুশীলা বলে তারিফ করবে ঠিক তেমনটিই তো করে এসেছি এযাবৎ,প্রাণপণে সত্যিকার সুশীলা হয়ে উঠতে।
সর্বাঙ্গে আমার সংস্কারের আবরণ!
বর্মের মতো ঘিরে থাকতো সর্বদা।
বসন্তে বাতাস যখন মনের আঁচল দুলিয়ে দিতে চাইতো, প্রাণপণে ধরতাম আঁকড়ে ।
বুকের ভেতর রঙীন প্রজাপতি গুলো ডানা ঝটপট করে উড়তে চাইলে জোর করে শান্ত করে দিতাম তাদের ।
সাতরঙা রামধনু হাতছানি দিয়ে ডাকতো ! সেই ডাক উপেক্ষা করা সহজ ছিল না বলে আকাশ পানে চোখ তুলতাম না পর্যন্ত।

সুবোধ্য সুশীলা আমি!
‘কি করতে নেই ‘ আর ‘কি করতে হয়’ সেই সুদীর্ঘ রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে নিঃশ্বাস ফেলতেও ভয় পেতাম।
শালুক আর কলমী লতার ঘ্রাণে ভেজা আমার লাজুক কিশোরী বেলাটুকুর অবসর মিলতে না মিলতেই আমি প্রকৃতই সুশীলা হয়ে উঠতে লাগলাম।
সুশীলা আমি, আরও সুশীলা হতে হতে সুশীতল হয়ে উঠলাম।
সবাই শান্তি পেলে আমার ছায়ায় বসে।আর আমি!

তোমরা বলতে ‘পরায়া ধন’ তাই একদিন কনকাঞ্জলি দিয়ে সব ঋণ শোধ করে চলে গেলাম কারো ‘আপনার ধন’ হতে।
ভাবলাম এবার বুঝি আকাশের রামধনু আসবে নেমে, স্বপ্নের প্রজাপতি গুলো উড়ে উড়ে বেড়াবে বুকের মাঝে! প্রতীক্ষায় রইলাম বসে।
হায়রে ভাগ্য! অঞ্জলি পেতে ভিক্ষে চেয়েছি কতবার! মুষ্টি ভিক্ষাটুকুও মিলল না তবু।
তোমরা বললে-‘যে সয়, সে রয়।’
আর কত সইবো মা!আমার আকাশ ছোটো হতে হতে শ্বাসবায়ু টুকুও যে আর পাই না!
আজ তবে কেন বুকের ভেতর থেকে দলা পাকানো কান্না বুক ঠেলে বেরিয়ে আসতে চায়!কর্তব্য কর্মের আড়ালে সুপ্ত যে প্রেম, তার মর্যাদা দিতে এগিয়ে এলো না কেউ। একটিবারও বললো না তো কেউ-‘ ভালোবাসি’
অপ্রাপ্তিগুলো বুকের ভেতর থেকে উঠে এসে বলে যায়- ‘কী হলো,তোমার আত্ম ত্যাগের পুরাণ পড়েছে কেউ কোনোদিন! বুঝেছে তোমাকে?’
না কেউ বোঝেনি, কেউ বাড়িয়ে দেয়নি তার আশ্বাস ভরা দুটো হাত।
‘সুবোধ্য সুশীলা কেমন আছো তুমি?’গলায় জোর এনে বলতে যাই, ‘ভালো আছি আমি, খুব ভালো আছি।’
পারি না, মা চেষ্টা করেও পারি না! দলা পাকানো কান্না গুলো গিলে ফেলে কোনোমতে বলতে চেষ্টা করেও পারিনা।
বুকের ভেতরটা খান খান হয়ে ভেঙে পড়ে।
পাঁজরের হাড় খসিয়ে দিয়ে যায়, পুঞ্জীভূত বেদনার স্তূপ শুরু করে গলতে!
প্রবল জলোচ্ছ্বাস প্লাবনের আকারে ভাসিয়ে দিতে চায় সর্বস্ব! জ্বলন্ত সব প্রশ্নগুলো গলন্ত সীসার মতো আছড়ে পড়তে চায় আমার পৃথিবী জুড়ে । মোচড় পড়ে বুকের ভেতর, কেন! কেন! কেন! সর্বাঙ্গ ঘুলিয়ে দেওয়া কান্না পাক দিয়ে উঠে আসে পেটের ভেতর থেকে , প্রচণ্ড বিবমিষা!
ইচ্ছে করে দুমড়ে মুচড়ে ,পুড়ে খাক হয়ে যাওয়া সুশীলাকে দাঁড় করিয়ে দিই তোমাদের সামনে! দাঁড় করিয়ে দিই সেই সব প্রশ্নের মুখোমুখি, ইচ্ছে হয় টান মেরে খুলে ফেলি সুবোধ্য সুশীলা নামের আদ্যন্ত মিথ্যে মুখোশ খানা!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress