রামায়ণ : সুন্দরাকাণ্ড – হনুমানের লঙ্কায় প্রবেশ ও চামুণ্ডীর সহিত সাক্ষাৎ এবং চামুণ্ডার লঙ্কা ত্যাগ করিয়া কৈলাসে গমন
এইরূপে গেল বীর লঙ্কার ভিতর।
কত স্থানে কত দেখে, বর্ণিতে বিস্তর।।
কাঞ্চন রতন মণি স্ফটিকে নির্ম্মাণ।
পুরশোভা দেখিয়া বিস্মিত হনুমান।।
গড়ে প্রবেশিয়া দেখে পবন-নন্দন।
বিশ্বকর্ম্মা নির্ম্মিত সে অদ্ভুত রচন।।
মহাভয়ানক মূর্ত্তি সম্মুখে প্রচণ্ডা।
বামহাতে খর্পর দক্ষিণ হাতে খাণ্ডা।।
দুই চক্ষু ঘোরে যেন দুই দিবাকর।
ব্রহ্ম-অগ্নি হেন তেজ অতি ভয়ঙ্কর।।
লোল জিহ্বা পৃষ্ঠে জটা বিকট দশন।
হাঁড়িয়া মেঘের বর্ণ দেখিতে ভীষণ।।
ব্যাঘ্রচর্ম্ম পরিধান গলে মুণ্ডমালা।
মাণিক-কুণ্ডল কর্ণে যেন চন্দ্রকলা।।
দেখিয়া চিন্তিত অতি বীর হনুমান।
যোড়হাতে বলেন দেবীর বিদ্যমান।।
শাস্ত্রে শুনিয়াছি আমি চামুণ্ডার কথা।
শিবের প্রেয়সী তুমি, কেন আছ হেথা।।
তোমারে দেখিয়া আমি বড় পাই ডর।
কি করিণে আছ মাতা লঙ্কার ভিতর।।
চামুণ্ডা বলেন, আমি শঙ্করের সতী।
তাঁহার আজ্ঞায় মম লঙ্কায় বসতি।।
সৃজেন যখন ব্রহ্মা স্বর্ণ-লঙ্কাপুরী।
সেই কাল হৈতে আমি লঙ্কা রক্ষা করি।।
করিলাম জিজ্ঞাসা শিবের শ্রীচরণে।
থাকিব কতেক কাল রাবণ-ভবনে।।
শঙ্কর বলেন, থাক এই সঙ্খ্যা তার।
যত দিন নাহি হয় রাম-অবতার।।
জন্মিবেন রাম দশরথের ভবনে।
তাঁর পত্নী সীতাদেবী হরিবে রাবণে।।
সীথা অন্বেষণে রাম পাঠাবেন চর।
তার নাম হনুমান, আকারে বানর।।
যখন দেখিবে লঙ্কাগত হনুমান।
তখন ছাড়িয়া লঙ্কা আসিবে স্বস্থান।।
সেই হতে রাখি আমি স্বর্ণ-লঙ্কাপুরী।
হনুমানে না দেখিয়া যাইতে না পারি।।
কাহার সেবক তুমি কোথা তব ঘর।
কিমতে তরিলে তুমি অলঙ্ঘ্য সাগর।।
হনুমান বলে, আমি রামের কিঙ্কর।
সুগ্রীবের পাত্র আমি পবন-কোঙর।।
সীতা অন্বেষণে আইলাম লঙ্কাপুরী।
শ্রীরামের দূত যেই তেঁই সিন্ধু তরি।।
শুনিয়া হনুর কথা চামুণ্ডার হাস।
লঙ্কায় দেখিয়া তারে গেলেন কৈলাস।।