রামায়ণ : সুন্দরাকাণ্ড – হনুমানের লঙ্কায় যাত্রা ও মালঝাঁপ
সর্ব্ব-গুণপাত্র বায়ুপুত্র সিন্ধু লঙ্ঘিবারে।
তবে করি লীলা বাড়াইলা আপন কায়ারে।।
তবে অসাধ্বস হল দশ যোজন বিস্তার।
আর মহাবল সুদীঘল দ্বিগুণ তাহার।।
করি দরশন তারে মন করে হেন জ্ঞান।
যেই সেই গিরি শিরোপরি আন গিরিমান।।
তাহে দুনয়ন বিরোচন সব প্রকাশয়।
কিবা নাসারব শুনি সব নির্ঘাত মানয়।।
দিব্য রোমগুচ্ছ দীর্ঘপুচ্ছ শিরোপরি লোলে।
যেন মেরুগিরি শৃঙ্গোপরি নাগরাজ দোলে।।
সেই কপিবর-কলেবর-ভরে সে ভূধর।
নাহি সহিবারে পারে বারে করে থর থর।।
তাহে তরুগণ আন্দোলন করে ঘনে ঘন।
তাহে পুষ্প ঝরে, বুঝি বীরে করয়ে বর্ষণ।।
আর কত বৃক্ষ লক্ষ লক্ষ উপাড়ি পাড়য়।
তাহে নানা পাখী ছাড়ি শাখী আকাশে উড়য়।।
তাহে কত শৃঙ্গ পাই ভঙ্গ ভূতলে পড়িলা।
তায় কত দুষ্ট পশু নষ্ট কষ্টেতে হইলা।।
তাহে পায় ভীতি কত হাতী কাতর হইয়া।
করে পলায়ন ছাড়ি বন চীৎকার করিয়া।।
আর কত করী প্রাণে মরি উচ্চ হতে পড়ে।
তাহে হল হত পশু কত যে ছিল নিয়ড়ে।।
ইথে হল এক পরতেক মহৎ আশ্চর্য্য।
কিবা করি স্থানে হল প্রাণে শূণ্য সিংহবর্য।।
কিবা জগৎ প্রাণ সুসন্তান কলেবর ভরে।
নাহি সহিবারে সে শিখরে চড় চড় করে।।
তাহে পাই চাপ যত সাপ বিবরে আছিল।
তারা পেয়ে ত্রাস মহাশ্বাস ছাড়িতে লাগিল।।
তবে মহাবীর হয়ে স্থির উচ্চ কর্ণ করি।
করি মহাদম্ভ দিলা লম্ফ শ্রীরাম ফুকারি।।
সেই মহাবর লোক সবে ক্ষণে আচ্ছাদিল।
যেন কল্পকালে কুতূহলে জলদ গর্জ্জিল।।
সেই শব্দ শুনি যত প্রাণী করে টলমল।
হল অচেতন যত জন ভয়েতে বিকল।।
তাহে কপিগণ ঘনে ঘন জ্য়ধ্বনি করে।
দুই শব্দে মিলি গেলা চলি দশ দিগন্তরে।।
সেই মহাবীর মারুতির গতিবেগ দেখি।
তার উপমান মরুত্বান পবনেরে লিখি।।
সেই বেগ বৃক্ষ লক্ষ লক্ষ না পারি সহিতে।
তারা বীরবায় পাছে যায় ব্যোম উপরিতে।।
মনে এই লিখি তারা দেখি প্রবাসী তাহায়।
যেন বন্ধুজন দুঃখী মন অনুব্রজি যায়।।
আর কত হাতী শৃঙ্গ তথি উড়িয়া চলিল।
তারা কত দূর গিয়া পরে জলেতে পড়িল।।
তবে বিনা লক্ষ্যে অন্তরীক্ষে মারুতি উঠিল।
করি নিরীক্ষণ সব জন স্তম্ভিত হইল।।
আহা কিবা শোভা পায় কপি আকাশোপরে।
যেন মেরু গিরি পক্ষ ধরি পড়য়ে অম্বরে।।
তাঁর বাহুদ্বয় প্রকাশয় সঘনে দোলয়।
যেন নাগরাজ গিরিরাজ উপরে শোভয়।।
তাঁর ঊর্দ্ধদেশে কিবা ভাসে পুচ্ছ উচ্চতর।
যেন ভাদ্রমাসে সুপ্রকাশে ইন্দ্রধ্বজবর।।
তাঁর অঙ্গগণ সমীরণ হেন তেজে বয়।
যার শুনি রব লোক সব নির্ঘাত মানয়।।
সেই বেগবান মরুত্বান লাগয়ে যাহারে।
সেই কোনমতে স্বস্থানেতে স্থির হতে নারে।।
সেই সমীরণ বেগে ঘন সব আকর্ষিত।
তার পাছে পাছে কাছে কাছে চলিল ত্বরিত।।
আর বহুতর ধরাধর সাগরে পড়িল।
কত ব্যোমচারী সিন্ধুবারি মাঝারে ডুবিল।।
আর সিন্ধুজল কল কল করে অতিশয়।
সেই উত্তরল জল স্থল অবধি কাঁপয়।।
তাহে স-মকর জলচর যাবৎ আছিল।
তারা পেয়ে ভয় অতিশয় দূরে পলাইল।।
তবে ক্রমে ক্রমে উঠে ব্যোমে পবন-নন্দন।
হল প্রথমেতে তার মাথে মুকুট তপন।।
পরে সে তরণি কণ্ঠমণি সমান শোভিলা।
পরে দুই পদ কোকনদ ভূষণ হইলা।।
হেন রূপ মারুতির বীরপণা নিরীক্ষণে।
পাই মহাতুষ্টি পুষ্পবৃষ্টি করে দেবগণে।।
তবে এইমতে আকাশেতে চলিলা বানর।
কিবা প্রেমভরে চিন্তা করে রামে বীরবর।।