Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » সাহেব বিবি গোলাম || Bimal Mitra » Page 45

সাহেব বিবি গোলাম || Bimal Mitra

ছোটবৌঠান সেদিন কী রাগই করেছিল যে। বললে— একদিন তুই ‘মোহিনী-সিঁদুর’ কিনে দিয়েছিলি তাই ছোটকর্তাকে ফিরে পেয়েছি—কিন্তু আর কোনো দিন কোনো জিনিষ চেয়েছি তোর কাছে?

ভূতনাথ অপরাধীর মতো চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল।

বৌঠান আবার বললে—শুধু তোর কাছে কেন, কারো কাছেই আর কোনোও দিন কিছু চাইব না ভূতনাথ—চাওয়ার দিন আমার ফুরিয়ে গিয়েছে, এবার ছোটকর্তার অসুখটা ভালো হয়ে গেলেই আমি সুখী, আর কিছু কামনা নেই আমার, তোরা সবাই বেইমান।

ভূতনাথ তবু চুপ করে রইল।

তারপর বৌঠান আবার বলেছিল—তোর যদি কোনো কষ্ট হয়ে থাকে, আমাকে বলিসনি কেন? এখানে খাওয়া-দাওয়ার কোনো অসুবিধে হচ্ছে? শোয়া-থাকার কোনো অসুবিধে?

ভূতনাথ তবু চুপ করে রইল! আজ বৌঠানের মুখের যেন বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। চোখ দুটো লাল জবাফুলের মত। সারাদিন ধরে বোধহয় মদ খেয়েছে। বিছানার ওপর পা ছড়িয়ে বসে আছে। পায়ে আলতা পরেছে। এখনি এই বিকেলবেলা বুঝি খোঁপা বেঁধেছে। পাতা কেটেছে। কপালে সিঁদুরের টিপ লাগিয়েছে। নাকে হীরের নাকছাবি। বৌঠানের সুডৌল শরীর যেন টলোমলো করছে নেশার ঘোরে।

অথচ কী এমন বলেছিল ভূতনাথ! ভূতনাথ শুধু বলতে এসেছিল-সে দেশে যাবে।

কেন দেশে যাবে, ক’দিনের জন্যে যাবে তা না জেনেই অনেক গুলো কথা শুনিয়ে দিলে বৌঠান।

বৌঠান বললে—কেউ তোকে কিছু বলেছে? আমি যতদিন আছি কেউ তোকে কিছু বলুক দিকি? দারোয়ান দিয়ে তাকে গলা ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দেবো না এখনি—এ-বাড়িতে হাজার গণ্ডা লোক রয়েছে কী জন্যে? বসে-বসে তত সব মাইনে খাচ্ছে—বড়বাড়ির কর্তারা কি মরেছে। তারপর চিৎকার করে ডাকলে-বংশী

বৌঠানের চিৎকার সমস্ত ফাঁকা বাড়িটায় যেন একবার প্রতিধ্বনি তুললো।

বংশী এল। বৌঠান বললে–সরকার মশাইকে বলগে যা, ভূতনাথের জন্যে জামা-কাপড় যা দরকার যেন সরকারী তহবিল থেকে দেয়, আর আমার নামে খরচার খাতায় লিখে রাখে।

-আমি এখুনি যাচ্ছি ছোটমা।

—আর শোন?

বংশী থমকে দাঁড়ালে আবার।

-–মিয়াজানকে গাড়ি জুততে বল—আমি বেরোববা?

–তুমি বেরোবে ছোটমা?

–হ্যাঁ, বেরোবো, বসে-বসে সব মাইনে খাচ্ছে, কোনো কাজ নেই, এতগুলো লোক কী করে সারাদিন, আমি হিসেব চাই, ছোটকর্তার অসুখ বলে সবাই ফাঁকি দিতে আরম্ভ করেছে নাকি?

তারপর ভূতনাথকে ডেকে বললে—সেজেগুজে তৈরি হয়ে নে—আমার সঙ্গে যাবি তুই ভূতনাথ!

ভূতনাথের কেমন ভয় করতে লাগলো। বললে—কোথায়?

—বরানগরে।

ভূতনাথ কিছু বলতে যাচ্ছিলো কিন্তু বংশী চুপি-চুপি বললে— বলুন-হ্যাঁ, যাবো।

বাইরে এসে ভূতনাথ বললে—বৌঠান কি কিচ্ছু জানে না বংশী? বাড়ি বিক্রি হবার কথা শোনেনি নাকি?

বংশী বললে—নেশা হলে আজ্ঞে কিছু মনে থাকে না ছোটমা’র। ওই যে গাড়ি বার করতে বললে আমাকে–তা কোথায় গাড়ি, বাড়ি যে ফাঁকা হয়ে গিয়েছে, বিধু সরকার মেজবাবুর সঙ্গে যে কবে চলে গিয়েছে গরাণহাটায়, ছোটমা’র কিছু আর খেয়াল নেই শালাবাবু।

ভূতনাথ বললে—যদি আমাকে ডাকে আবার?

বংশী বললে—আর ডাকবে না শালাবাবু, ঘুমিয়ে পড়লেই সব ভুলে যাবে, কৈানো খেয়াল থাকবে না, দেখলেন না সে-রকম সাজ-গোজেরও বাহার নেই, কোথায় কী গয়না টাকাকড়ি আছে, তাও মনে থাকে না, ওই চিন্তা আলতা পরিয়ে চুল বেঁধে দিয়েছে, গা ধুইয়ে দিয়েছে তাই অমন দেখছেন—কিন্তু নিজের কিছু খেয়াল নেই।

ভূতনাথের চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে আসতে চায়। বৌঠান জানেও না বড়বাড়ির কী সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে। জানতে চায়ও না বোধহয়। মনে হয়—সব তেমনি আছে বুঝি। তেমনি একান্নবর্তী পরিবার। তেমনি লোকজন, চাকর, ঝি, গাড়ি, ঘোড়া, পাল্কি, বেহারা, বাগান সব আছে। অন্দরমহলের পর্দার আড়ালে থেকেথেকে বাইরের জগতের কোনো খবরই রাখবার প্রয়োজন মনে করে না। ভাবে এখনও বুঝি দেউড়িতে পাহারায় দাঁড়িয়ে আছে ব্রিজ সিং বন্দুক নিয়ে। এখনও সুখচর থেকে টাকা আসে। এখনও হুকুম করলেই তামিল করবার লোক এসে হাজির হবে।

বংশী বলে—আমরা দুই ভাই বোনে দুজনকে দেখছি শালাবাবু, আমি দেখি ছোটবাবুকে আর চিন্তা দেখে ছোটমাকে। নেশার ঘোরে মাঝে-মাঝে কত বকে চিন্তাকে, বলে—আজকাল সবাই ফাঁকি দিচ্ছে কাজে—তা জানে না তো আমরা মাইনের লোভে কাজ করছি না এখানে—মাইনে যে কতদিন পাইনি তার তো হিসেব নেই।

—মাইনে না পেয়ে এ-রকম কতদিন চালাবে বংশী?

—আর জন্মে বোধ হয় ছোটবাবুর কাছে দেনা করেছিলাম আজ্ঞে। তাই শোধ করছি খেটে, দেশে যে কী করে সব চালাচ্ছে ভগমান জানে। বিয়ে করে এস্তোক কত বছর যে আর দেশে যাইনি, আমার শ্বশুর যেতে লিখেছে বার-বার, কী করে এ-অবস্থায় যাই বলুন তো। তা ছোটমাও আর বেশিদিন বাঁচবে না হুজুর, ওই নেশার ঘোরেই একদিন অজ্ঞান হয়ে দম বেরিয়ে যাবে, দেখবেন।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress