Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » সারদাদাদার সত্য গল্প || Pramatha Chaudhuri

সারদাদাদার সত্য গল্প || Pramatha Chaudhuri

আপনাদের কাগজের পুজোর সংখ্যার অঙ্গ পুষ্ট করবার জন্য আমাকে একটি গল্প লিখতে অনুরোধ করেছেন।

গল্প লেখা অন্তত আমার পক্ষে কোনো কালে সহজ ছিল না; এখন তো কষ্টকরই হয়েছে।

রবীন্দ্রনাথের মতো নবনব-উন্মেষশালিনী বুদ্ধিতে আমি বঞ্চিত। উপরন্তু আমি এখন যুগপৎ জরাগ্রস্ত ও রোগগ্রস্ত। তার পর একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় আমার বুদ্ধিসুদ্ধি লোপ পেয়েছে।

এ অবস্থায় এমন গল্প লেখা সম্ভব নয় যে কথা লোকের মনোরঞ্জন করবে। স্ফূর্তি যখন অন্তরে নেই তখন তা বাইরে প্রকাশ করব কি করে?

ধরুন যদি আমার বয়েস তেয়াত্তর না হত, আর আমার মন যদি আত্মব থাকত—তা হলেও এ যুদ্ধের দিনে কোন্ বিষয়ে গল্প উদ্ভাবন করা যেত? ফরাসীদেশের প্ৰসিদ্ধ ছোটো গল্প লেখক গী দ্য মোপাসাঁর গল্পের পটভূমিকা হচ্ছে ফ্রান্স ও জার্মানীর যুদ্ধ। কিন্তু তখন ফ্রান্সে সত্যি যুদ্ধ হচ্ছিল। আর ভারতবর্ষে যুদ্ধ আজও আসে নি; এসেছে যুদ্ধের ভয়।

এ অবস্থায় লিখতে পারি সারদাদাদার মুখে শোনা একটি গল্প। তিনি কখন কোন্ বিপদে পড়েছিলেন এবং কি উপায়ে সে বিপদ থেকে উদ্ধার পেয়েছিলেন তারই গল্প তিনি বলতেন।

এখন দু কথায় সারদাদাদার পরিচয় দিই। তিনি আমার আত্মীয় কিন্তু কি সম্পর্কে আমিও জানি নে, অপর কেউও জানে না। তবে তিনি আমার মামার শালা বা পিসের ভাই নন। সে যাই হোক, তিনি গল্প বলতে পারতেন ও আমাদের তা শোনাতে পারতেন। তাঁর মুখে শোনা দুটি গল্প আমি ইতিপূর্বে লিপিবদ্ধ করেছি।

একবার তিনি ভুলক্রমে থার্ডকেলাসের বদলে ফার্স্ট কেলাসের গাড়িতে উঠেছিলেন—আর সে কামরায় ফার্স্টক্লাস ভূতের হাতে পড়ে নাস্তানাবুদ হয়েছিলেন ও গাড়ি থেকে নেমে জেলে গিয়েছিলেন। তার পর জেল থেকে বেরিয়ে তাঁর বৈরাগী জন্মায় আর তিনি কাশীতে গিয়ে ধূমানন্দ স্বামীর পরামর্শে পানানন্দ স্বামীর কাছে সন্ন্যাসীর দীক্ষা নেন। ফলে তিনি জন্মের পূর্বে যে খুন করেছিলেন, সেই খুনের আসামী হন। কিন্তু খুন হয় অসিদ্ধ—প্রমাণাভাবে; তাই তিনি বেকসুর খালাস পেলেন।

আজ যে গল্পটি বলতে যাচ্ছি সেটি যখন শুনি তখন আমার বয়েস চৌদ্দ। গল্পটি যে ভালো লেগেছিল, তার প্রমাণ আজও সেটি মনে আছে।

সেকালে সাহিত্যিকরা ছোটোগল্প লিখতেন না। রবীন্দ্রনাথ তাঁর গল্পগুচ্ছ লিখেছেন এর বহু পরে।

আমার কাঁচা বয়েসে গল্পটি যখন ভালো লেগেছিল, তখন আশা করছি একালের ছেলেমেয়েদেরও তা ভালো লাগতে পারে। পুজোর সময় সকলেই তো নাবালক হয়।

কথারম্ভ

এখন গল্পটি শুনুন। সারদাদাদা বললেন-আমার বয়েস যখন ষোলো, তখন আমি চণ্ডীপুরের জমিদারের বাড়ি থাকতুম। চণ্ডীপুরের জমিদারদের ছোটো তরফের বড়োবাবু আমার ভগ্নীপতির ভগ্নীপতি। অভদ্র ভাষায় বলতে হলে, আমি ছিলুম তাঁর শালার শালা। সে সময়ে ছোটো তরফের ভগ্নদশা; তালুকমুলুক সব গিয়েছে, বাকি আছে শুধু কর্তাবাবুর বুকের পাটা

বাবুর চেহারা ছিল যথার্থ পুরুষের মতো। তাঁর বর্ণ ছিল উজ্জ্বল শ্যাম, নাক ছুরির মতো, ঠোঁট কাঁচির মতো, চোখ তেজালো আর দেহ বলিষ্ঠ

তাঁর পিতৃদত্ত নাম ছিল ক্রিংকারি। কিন্তু লোকে তাঁকে খুনকারীবাবু বলত। তাঁর পিতা ছিলেন পঞ্চমকার সাধক- ঘোর তান্ত্রিক—তিনি নাকি একটি কাজিয়ায় একজন লেঠেলকে খুন করেছিলেন বলে। করেছিলেন কি না জানি নে কিন্তু করা সম্ভব। কারণ তিনি চমৎকার লাঠি খেলতেন, তলওয়ার খেলতেন, সড়কি খেলতেন, আর তীরন্দাজ ছিলেন পয়লা নম্বরের

তিনি খুনের আসামী হয়েছিলেন এবং তাঁকে দায়রা সোপর্দ করা হয়েছিল। জুরিরা তাঁর রাজপুত্রের মতো চেহারা দেখেই তাঁকে বেকসুর খালাস দেয়।

এর পর তিনি ঘর থেকে বড়ো একটা বেরোতেন না—ঘরে বসেই যোগ অভ্যাস করতেন। তাতে তাঁর দেহ আরো সুন্দর, আরো বলিষ্ঠ হয়।

তিনি কাউকেও ভয় করতেন না, ফলে তাঁকে সকলেই ভয় করত—আর তাঁর পাওনাদারেরা তাঁকে বাঘের মতো ডরাত

চণ্ডীপুর একটি নদীর ধারে অবস্থিত। সে নদী ছোটোও নয়, বড়োও নয়— মাঝারি গোছের। বর্ষাকালে নদীতে অগাধ জল থাকত আর গ্রীষ্মকালে থাকত শুধু বালির চড়া, তখন এপার ওপার হেঁটে যাতায়াত করা যেত।

চণ্ডীপুরের বগলে মামুদপুর নামে ছিল একটি ছোট্ট গ্রাম। সেখানে বাস করত একদল দুর্ধর্ষ মুসলমান; তারা সব যেমন জোয়ান, তেমনি লড়াক্কে।

তার গায়ে নদীর ধারে ছাতিমতলায় ছিল সরকারের থানা, আর অপর পারে ছিল সাপুর। এই সাপুরে নকুড় সা নামে একজন প্রকাণ্ড ধনী ছিলেন। তিনি এ অঞ্চলের জমিদারদের টাকা ধার দিতেন চড়া সুদে।

ক্রিংকারিবাবু নকুড় সার কাছে মবলক টাকা ধার নিয়েছিলেন, কিন্তু সে ধার শুধতে পারেন নি।

নকুড় সা তাঁর কাছ থেকে পাওনা টাকা আদায় করতে পারেন নি খুনকারীবাবুর ভয়ে; কিন্তু হামেসা হাত জোড় করে তাগাদা করতেন। নকুড় সা ছিলেন ঘোর বৈষ্ণব আর তাঁর গো-ব্রাহ্মণে ছিল অগাধ ভক্তি। তিনি ধনী হলেও ব্যবহারে ছিলেন অতি গরিব।

ক্রিংকারিবাবুর দুটি প্রভুভক্ত অনুচর ছিল, মবু ও আগারী। দুজনেই মামুদপুরের বাসিন্দা।

মবু আন্দামানফেরত। আগারী ছিল ছোকরা। এখনো তার জেলে যাবার বয়েস হয় নি। দুজনেই নকুড় সার উপর ভয়ংকর রাগ ছিল—ক্রিংকারিবাবুকে টাকার জন্য উৎপাত করে বলে।

আগারী আমাকে একদিন বললে যে, মবু ও সে নকুড় সার বাড়িতে রাত্তিরে যাবে, তার কত টাকা আছে দেখবার জন্য। মবু নাকি জেল থেকে মন্ত্র শিখে এসেছে- যে মন্ত্রের বলে তালা খোলা যায়। আমার তখন বয়েস অল্প, ষোলোর বেশি নয়; তাই তাদের সঙ্গে যাবার লোভ হল। নকুড় সার টাকা দেখবার জন্য ততটা নয়, যতটা মবুর মন্ত্রশক্তি দেখবার জন্য।

তার পর একদিন অমাবস্যার রাত্তিরে আমরা তিনজন মাইলখানেক পায়ে হেঁটে নকুড় সার বাড়িতে গেলুম রাত দুপুরে। দেখলুম এ বাড়ির অন্ধি-সন্ধি মবুর মুখস্থ। তার তোষাখানার তালা খুললে মবু-মন্ত্রবলে কি যন্ত্রবলে বুঝতে পারলুম না। ঘরে ঢুকে দেখি দেদার দশমণী চালের বস্তা দিয়ে চাপা লোহার সিন্দুক। সেই-সব সিন্দুকের ভিতর নাকি নকুড় সার সোনারুপোর টাকা আছে।

মবুর কাছে কিসের গুঁড়ো ছিল। সে সেই গুঁড়ো মেঝেতে ছড়িয়ে দিলে আর দেশলাই দিয়ে জ্বালিয়ে দিলে—ঘর আলো হয়ে উঠল। মবু আগারিকে হুকুম দিলে—চালের বস্তার পেট ফাঁসিয়ে দেও। আগারি কোত্থেকে একখানি ছোরা বার করে সে হুকুম তামিল করলে। চাল চারি দিকে ছড়িয়ে পড়ল আর গুঁড়োর আগুন নিবে গেল।

এমন সময় কি যেন আমার পায়ে কামড়ালো, আমি অমনি চীৎকার করে উঠলুম। মবু আমার পায়ে হাত দিয়ে বললে, “সাপে নয়, তোমাকে কোনো যন্ত্রে কামড়েছে। আমরা চললুম। বাবুকে গিয়ে বলি যে, নকুড় সা তোমাকে ধরে নিয়ে গিয়ে কয়েদ করেছে। তিনি এখনি এসে তোমাকে খালাস করবেন।” এই বলেই তারা অন্তৰ্ধান হল— বোধ হয় নজরবন্দীর কোনো মন্ত্র পড়ে।

আমি যন্ত্রণায় বেজায় চীৎকার করতে লাগলুম। মিনিটখানেকের মধ্যে নকুড় সা লণ্ঠন হাতে করে তোষাখানায় ঢুকেই বললেন—এ ভূত! আর ভূতের ভয়ে একা ঘরে থাকতে পারবেন না বলে বাড়ির মেয়েছেলেদের ডাকলেন। তার পরেই নকুড় সার বাড়ির কালো কালো মোটা মোটা বেঁটে বেঁটে বউ-ঝিতে ঘর ভর্তি হয়ে গেল। তারা ঘরে ঢুকেই আমাকে এক নজর দেখে বললে, “এতো ভূত নয়, দেবতা—স্বয়ং কার্তিক!”

সেকালে আমার বর্ণ ছিল গৌর, মাথায় ছিল একরাশ কোঁকড়া চুল, তার উপর আমি ছিলুম দীর্ঘাকৃতি; আর আমার নাকচোখ ব্রাহ্মণের যেমন হওয়া উচিত তেমনি। তার পর তারা আবিষ্কার করলে যে, ইঁদুর-মারা জাঁতিকলে আমার পায়ের বুড়ো আঙুল আটকে গিয়েছে।

আমার গলায় অবশ্য ছিল ধবধবে পৈতে। নকুড়গিন্নি তাই দেখে বললেন যে, ভূতও নয়, দেবতাও নয়, ব্রাহ্মণ-সন্তান। অমনি মেয়েরা সব আমাকে মাটিতে পড়ে প্রণাম করলে।

নকুড় সা জিজ্ঞেস করলে, “আপনি এখানে এলেন কি করে?”

গিন্নি বললেন, “আগে ওর পা থেকে জাঁতিকল খোলো। তার পর সে-সব কথা হবে।”

নকুড় সা বললেন, “ওটি খোলা হবে না, কেননা ঐটিই হচ্ছে এ ডাকাত-ধরার প্রধান প্রমাণ।”

গিন্নি বললেন, “জাঁতিকলে ইঁদুর নয়, ডাকাত ধরা পড়েছে—এ কথা শুনলে লোকে যে হাসবে।”

এর পর মেয়েরা আমার পা ধরে টানাটানি করতে লাগল, শেষটা একজন দাসী এসে একবার টিপতেই জাঁতিকলটা খুলে গেল।

কিন্তু আমাকে তারা বাড়ির ভিতরেই বন্ধ করে রাখল নকুড় সার হুকুমে।

সীতা যেমন লঙ্কার চেড়ীর দ্বারা পরিবৃত ছিলেন, আমিও তেমনি নকুড় সা’র বউ- ঝির দ্বারা পরিবৃত হলুম। কিন্তু এরা সে জাতের মেয়ে নয়—অতিশয় শান্তশিষ্ট। দাসীটি আমার বৃঙ্গাঙ্গুলি জাঁতিকল থেকে খালাস করে যখন জল দিয়ে ধুয়ে দিল, তখন তারা সে জল আমার পাদোদক বলে পান করবার জন্য ব্যগ্র হয়ে উঠল।

দাসীটি বললে, “ও পা-ধোওয়া জল তো শুধু জল নয়, ওর ভিতর রয়েছে মরা ইঁদুরের জমাট রক্ত। ইঁদুরের রক্ত কেউ খায় না।”

আঙুলটি কাটে নি, থেঁৎলে গিয়েছিল, তাই দাসীটি নারকেলের তেলে চোবানো ন্যাকড়া দিয়ে সেটি বেঁধে দিলে।

নকুড় সা আমাকে জিজ্ঞেস করলে, “এখানে এলেন কি করে?”

গিন্নি বললেন, “ব্যথা একটু কমতেও দেও, তার পর ওর কুষ্ঠি কেটো। দেখছ-না এখনো ব্রাহ্মণসন্তান কেঁপে কেঁপে উঠছে? জাঁতিতে আঙুল কাটলে কি কষ্ট হয় তা আমরা তো জানি। তোমরা শুধু ছুরি দিয়ে কলম কাটো আর কাঁচি দিয়ে কাগজ কাটো; জাঁতি দিয়ে সুপারি আর বঁটি দিয়ে তরকারি কাটতে তো জান না। সুতরাং আঙুল কাটার সুখও জান না।”

তবু নকুড় সা আমাকে জেরা করতে লাগলেন। আমি প্রথমে চুপ করে রইলুম। শেষটা বললুম, “আমি চণ্ডীপুরের ক্রিংকারিবাবুর আত্মীয়। তাঁকে খরব পাঠিয়ে দিন, তিনি এসে আপনার সকল জেরার উত্তর দেবেন।”

ক্রিংকারিবাবুর নাম শুনেই নকুড় সা’র মুখ শুকিয়ে গেল ও তিনি জ্বরের রোগীর মতো কাঁপতে শুরু করলেন। তিনি বললেন, “আমি বাঘের বাসায় লোক পাঠাতে পারব না, তার চেয়ে আপনাকে ছেড়ে দিচ্ছি।”

আমি বললুম, “আঙুল-কাটা পা নিয়ে আমি হেঁটে যেতে পারব না—আপনি পাল্কি- বেহারার বন্দোবস্ত করুন।”

তিনি বললেন, “এত রাত্তিরে বেহারা পাব কোথায়? কাল সকালে আপনাকে বিয়ের বরের মতো পাল্কিতে করে পাঠিয়ে দেব। আপনার কোনোই কষ্ট হবে না। আমার দাসী আপনাকে সমস্ত রাত বাতাস করবে, আর আমার মেয়েরা আপনার পায়ে তেল দেবে।”

আমি শুতে রাজি হলুম না, বসে বসেই রাত কাটার স্থির করলুম।

ঘণ্টাখানেকের মধ্যে স্বয়ং ক্রিংকারিবাবু তাঁর টাট্টু ঘোড়ায় চড়ে নকুড় সা’র বাড়িতে উপস্থিত হলেন। বাঁ কোমরে তলওয়ার ঝোলানো, আর ডান হাতে ঘোড়ার চাবুক। আর তার সঙ্গে এলেন ছাতিমতলার থানার দারোগা তারণ হালদার, মবু ও আগারি আর দুজন ভোজপুরী কনস্টেবল। তিনি এসেই জিজ্ঞাসা করলেন, “সারদা কোথায়?”

নকুড় সা তাঁকে প্রণাম করে যে ঘরে আমি কয়েদ ছিলুম সেই ঘরে কাঁপতে কাঁপতে নিয়ে এল—আর তার সঙ্গে এল নকুড় সা’র কর্মচারী রামকানাই সরকার।

দারোগা বললেন, “এই চোরাই মালের খদ্দের নকুড় সা শেষটা ছেলে চুরি করতেও শুরু করেছে?—এবার বেটাকে দশ বৎসরের জন্য শ্রীঘরে পাঠাব।”

তার পর আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন—”আপনাকে ধরলে কি করে?”

আমি বললুম, “আমার ঘুমের ঘোরে হেঁটে বেড়ানোর রোগ আছে। আমি ঘুমচ্ছি ও বেড়াচ্ছি—এমন সময় এরা আমাকে ধরে নিয়ে এসেছে, আর আমার বুড়ো আঙুল জাঁতিকলে পুরে দিয়েছে। যন্ত্রণায় আমি জেগে উঠলুম। উঠে দেখলুম—রামকানাই সরকার আমার পায়ে জাঁতিকল এঁটে বসিয়ে দিচ্ছে।”

রামকানাই সরকার বললে, ছোকরা পাকা চোর, তার উপর পাকা মিথ্যেবাদী। তোষাখানায় ঢুকে সিন্দুক খোলবার চেষ্টা করছিল, এমন সময় ইঁদুর-মারা জাঁতিকলে ওর পা ঢুকে যায়। ও অমনি চীৎকার করতে শুরু করলে, আর বাড়ির মেয়েরা ওকে ধরে নিয়ে এল। আমি বাড়ির ভিতর যাই-ই নি।”

ক্রিংকারিবাবু এ কথা শুনে সপাৎ করে তাকে এক ঘা চাবুক মারলেন আর বললেন, “ফের যদি কথা কও তো তলওয়ারের এক চোটে তোমাকে দু টুকরো করে ফেলব।”

রামকানাই অমনি ভূঁয়ে লুটিয়ে কাঁপতে শুরু করল। দারোগাবাবুর হুকুমে, নকুড় সা’র হাতে হাতকড়া দেওয়া হল; পায়ে বেড়ি দেওয়া হল না। দারোগাবাবু বললেন, “ওর পায়ের বুড়ো আঙুলও জাঁতিকলে ঢুকিয়ে দেও।”

তার পর শুরু হল ওদের কান্নাকাটির পালা। শেষটা দারোগাবাবুকে নগদ হাজার টাকা দিয়ে নকুড় সা উদ্ধার পেলে। আর আমি ক্রিংকারিবাবুর টাট্টুতে চড়ে বাড়ি ফিরে এলুম।

এই ব্যাপারে স্ত্রীলোকদের মায়ামমতা আর সুদখোরদের ভীরুতার পরিচয় পেলুম। আর সেই সঙ্গে সারদাদাদা যে পাকা মিথ্যেবাদী তাও জানতে পেলুম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *