কী আর করতে পারতে তুমি, কি-বা করতে পারতাম আমিই তখন?
চারদিকে ছড়ানো সন্ধ্যা আর তার হিংস্র নীতিমালা;
একটা মুমূর্ষ পাখি থেকে থেকে চিৎকার করছিলো তীক্ষ্ণ সাইরেনে।
নিষেধ রাস্তায় নামা, বাইরে চোখ ফেলা; তুমি-আমি, সে-সন্ধ্যায়,
কী আর করতে পারতাম পরস্পরের দিকে চেয়ে থাকা ছাড়া?
কিছুই ধরতে না-পেরে, কাঁপছিলো সমস্ত শহর, প’ড়ে যাচ্ছিলে তুমি
মাটির বাড়ির মতো, আমি ধ’সে পড়ছিলাম শহিদ মিনার।
বাইরে ছড়ানো সন্ধ্যা আর তার হিংস্র নীতিমালা : কী আর করতে
পারতাম আমরা পরস্পরকে দৃঢ়-তীব্র আলিঙ্গনে ধ’রে রাখা ছাড়া?
তখন শরাইখানা বন্ধ, অপেক্ষাগারে জলের একটা ফোঁটাও ছিলো না।
তোমার পায়ের পাতা থেকে উঠে আসছিলো ঝকঝকে লাল তৃষ্ণা,
আমার মগজের নালি বেয়ে নেমে আসছিলো সুদীর্ঘ বোশেখি পিপাসা।
কী আর করতে পারতাম আমরা, সাইরেন-ঘেরা নির্জন সন্ধ্যায়,
পরস্পরের ঠোঁটে ঠোঁট দিয়ে রক্তের গভীরতম কুয়ো থেকে
মেদিনীর সবচেয়ে ঠাণ্ডা জল অবিরাম পান করা ছাড়া?
শয্যা দূরের কথা, দশদিগন্তে নড়োবড়ো একখানা বেঞ্চও ছিলো না।
চারদিকে ছড়ানো রাত্রি, সান্ধ্য আইন, রাইফেল, হিংস্র নীতিমালা।
স্যাঁৎসেঁতে মেঝে একনায়কের মতোই পাষণ্ড : কী আর করতে পারতাম
আমরা, রাজিয়া, পরস্পরের শরীরকে জাজিম করে সারাঘর তাপে ভ’রে
সারারাত প্রথমবারের মতো সত্যিকার অবিচ্ছেদ্য ঘুম যাওয়া ছাড়া?