Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » সাতবহনা || Manisha Palmal

সাতবহনা || Manisha Palmal

সুবর্ণরেখার বাঁকে বাঁকে রয়েছে কতনা লোকায়ত দেবদেবীর থান বা আটন। তাঁদের পরান কথা এই বিশাল চর ভূমিকে এক অপার্থিব মায়ায় জড়িয়ে রেখেছে। তেমনই কিছু লোক দেবীর পরান কথা শোনাই আজ।
” সাতবহনা”— অর্থাৎ সাত বোনের কাহিনী!
নয়াগ্রাম এর ডাহি গ্রামের” মা সাঁতাই বুড়ি”– এঁদের অন্যতম।
ভসরাঘাট থেকে সুবর্ণরেখা নদী পেরিয়ে নয়া গ্রামে প্রবেশমুখে নদীর গর্ভে দেবীর থান। কোন আচ্ছাদিত মন্দির নেই। প্রাচীর ঘেরা বেদির ওপর হাতি ঘোড়ার ছলনে পুজো। মা এখানে গ্রাম চন্ডী হিসেবে পুজো পেয়ে থাকেন। “সাঁতাই বুড়ি” আসলে সাঁতারে বুড়ি” — যিনি সুবর্ণরেখার করাল গ্রাস থেকে আর্তকে রক্ষা করেন। এই দেবী সম্পর্কে নানা উপকথা শোনা যায় এলাকার মানুষের মুখে। জনশ্রুতি যে মা রোজ রাতে বেড়াতে বের হোন আর মাকে যাতে কেউ দেখতে না পায় তাই এলাকা দিয়ে যাবার আগে গলাখাঁকারি দিতে হয় যাতে মা নিজেকে আড়ালে সরিয়ে নিতে পারেন। কথিত আছে একজন এটা না করায় মায়ের হাতের চড় খেতে হয়েছিল তাকে– এমনই মানুষের বিশ্বাস! মায়ের নাম করে খরস্রোতা নদী নাকি “ভাসা শিলা” চড়ে পার হয়ে ছিলেন একজন! তিনি মাকে”দামুজুডি” পাঁঠা বলি দিয়ে পুজো দিয়েছিলেন।” দামুজুডি “পাঁঠা বলি অর্থে পাঁচ থেকে সাতটি পাঁঠা। এই দেবীর পুজো হলেন দন্ডছত্রী মাঝি বা নৌকা চালকেরা। এরাই মায়ের দর্শন পান তাই এরাই দেহুরী। জনৈক অভিমুন্য ভূঁইয়া এই পূজার প্রচলন করেন।
শনি ও মঙ্গল বারে নিত্য পূজার সাথে সাথে মকর সংক্রান্তিতে হয় বাৎসরিক উৎসব। বসে গ্রামীণ মেলা। পুজোর নৈবেদ্য হিসেবে নারকেল ফলমূল পায়েস এমনকি ঝারি ভোগ অর্থাৎ মদ ও উৎসর্গ করা হয়। উৎসর্গ করা হয় “ছলন “অর্থাৎ মাটির হাতি ঘোড়ার মূর্তি! সুতোতে ঢিল বেঁধে ও মানত করে সবাই। আশা পূর্ণ হলে পুজো দিয়ে মানত রক্ষা করে। কেউ ছলনা উৎসর্গ করে কেউ বলি না দিয়ে মায়ের উদ্দেশ্যে পাঁঠা মোরগ বা ডাকুয়া ছেড়ে দেন ,পায়রা উড়িয়ে দেন!
এলাকার মানুষের বড় আপন এই লোক দেবী!
সাতবহনার অপর দেবীরা হলেন—-
1) নদীর অপর পাড়ে আটাঙ্গা গ্রামের রুকনি বুড়ি
2) ঝাড়েশ্বর পুরের বাসুলি বুড়ি
3) নয়াগ্রামের মহাকুলদের পুকুরে কেতকী বুড়ি
4) কুড়চিবনীর খরকাই বুড়ি
5) জামিরাপালের কুঙারসাই বুড়ি
6) রামেশ্বর নিমাই নগরের দুয়ারসিনি বুড়ি!

দুয়ারসিনি বুড়ি— রামেশ্বর মন্দিরের সোপানতলে তেঁতুল বাঁশ চরলা, শ্যাওড়া গাছের বেষ্টনীতে রয়েছেন মা দুয়ারসিনি। ছলন স্তূপের আবেষ্টনী বিরাট উঁচু। মাঝে মায়ের মুন্ড মূর্তি। মুক্তির দুপাশে পাহাড়প্রমাণ ছলনস্তূপ। এখানেও শনির মঙ্গলবারে এমনি পূজা ও মানত রক্ষার পূজা হয়। ছলন বেঁধে মানত করা ও ছলন উৎসর্গ করে মানত রক্ষা— লৌকিক রীতিতে পূজা হয় অব্রাহ্মণ দেহুরীর দ্বারা। মকর সংক্রান্তিতে হয় বাৎসরিক উৎসব ও মেলা। পাখপাখালির কলকাকলিতে মুখরিত মায়ের আটন। তেঁতুল বাঁশের ঘন বেষ্টনীতে শালিক টিয়া , বেনে বউ এর মজলিস। সুবর্ণরেখার চরভূমি হওয়ায় জলের পাখির মেলা ।জলপিপি পানি কাক বক ও দেখা যায়। পাডের পাকুড়গাছে গাংচিল বসে। বড় অনাবিল শান্তির পরিবেশ। দূর থেকে ভেসে আসে মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনি। বাউল বাতাসে সে স্বর হওয়ার ভেসে চলে দেব দেউলের ধ্বজাছুঁয়ে আটনের গাছগাছালির মাথাকে নাড়িয়ে দূরে নদীর চরে বেনা ঘাসের জঙ্গলে। জল জঙ্গল একসাথে কেঁপে ওঠে অপার্থিব মায়ায়। দিনমণি অস্তাচলগামী হন। রাক্ষসী বেলার লালিমা গ্রাস করে সর্ব চরাচর কে। আকাশে ফুটে ওঠে তামসী তপস্বিনীর জপমালার মোতির মত একটি দুটি তারা। আঁধারের মায়াবী ওড়না মুখে টেনে জাদুকরী আবেশে ঢাকা পড়ে নদী চর—- চাঁদকে সাক্ষী রেখে শুরু হয় নিশি জাগর কাব্যের।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress