Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » সাগর কেন লোনা ? || Upendrakishore Ray Chowdhury

সাগর কেন লোনা ? || Upendrakishore Ray Chowdhury

এক যে ছিল রাজা, তার নাম ফ্রদি। তার ছিল একটা যাঁতা, তাকে বলত গ্রত্তি। সে যাঁতা যেমন তেমন যাঁতা ছিল না, তাকে ঘুরিয়ে যে জিনিস ইচ্ছা, তাই তার ভিতর বার করা যেত।

কিন্তু ঘোরাবে কে? সে যাঁতা ছিল পাহাড়ের মত বড়। রাজার চাকরেরা সেটা নাড়তেই পারল না। রাজার দেশে যত জোয়ান ছিল, সকলে হার মেনে গেল, সে যাঁতা কিছুতেই ঘুরবার নয়।

রাজার মনে বড় দুঃখ। ভেবেছিলেন, যাঁতা ঘুরিয়ে কত হীরা-মাণিক বার করে নেবেন। কিন্তু, হায়! যাঁতা আর ঘুরল না!

এমনি করে দিন যায়। তারপর একবার বিদেশে গিয়ে তিনি দুটি দানবের মেয়েকে দেখতে পেলেন। তারা দুটি বোন। একজনের নাম মেনিয়া, আর একজনের নাম ফেনিয়া। তারা চলতে গেলে মাটি কাঁপে, বসতে গেলে গর্ত হয়ে যায়। তাদের দেখে রাজা ভাবলেন-‘এইবার আমার যাঁতা ঠেলাবার লোক জুটেছে।’

তখন রাজা খুশি হয়ে মেনিয়া-ফেনিয়া কিনে নিয়ে দেশে ফিরে এলেন। এসেই তাদের দুজনকে যাঁতার কাছে নিয়ে গিয়ে বললেন- ‘ঠেল, ঠেল, ঠেল। সোনা বেরোক, রূপো বেরোক, ঠেল, ঠেল!’

মেনিয়া আর ফেনিয়া যাঁতা ঠেলতে লাগল আর গাইতে লাগলঃ-

‘আয় সোনা-হুঁই রে হাঁ!
আয় রূপো-হুঁই রে হাঁ!
ফ্রদির ঘরে-হুঁই রে হাঁ!
সিন্দুক ভরে হুঁই রে হাঁ!’

দেখতে দেখতে সোনা-রূপোয় রাজার বাড়ি ভরে গেল, তবু খালি বলেন-‘ঠেল, ঠেল, ঠেল!’

দিনের পর দিন যাঁতা ঠেলতে ঠেলতে মেনিয়া-ফেনিয়া কাহিল হয়ে পড়ল, তাদের পিঠে ধরে গেল, অবশ হয়ে এল, তবু রাজা খালি বলছেন-‘ঠেল, ঠেল, ঠেল!’ তখন কাজ ত করিয়ে নেবেই। কিন্তু মনে মনে তাদের বড্ড রাগ হল।

একদিন রাজা খাওয়া দাওয়া সেরে ঘুমিয়ে আছেন, মেনিয়া-ফেনিয়া যাঁতা ঠেলছে। ঠেলতে ঠেলতে তারা বলল-‘দাড়াও, এই বেলা একটু মজা দেখাচ্ছি!’ বলে তারা গাইতে লাগল-

‘আয় ডাকাত-হুঁইরে হাঁ!
হাজার হাজার-হুঁইরে হাঁ!
মার মার-হুঁইরে হাঁ!
লাগা আগুন-হুঁইরে হাঁ!’

অমনি হাজারে হাজারে ডাকাত এসে দেশ ছেয়ে ফেলল। তারা জাহাজে চড়ে সাগর পার হেয় দেশ বিদেশে ডাকাতি করে বেড়ায়, তাদের বলে বোম্বেটে , তাদের সঙ্গে কেউ পারে না।

রাজা ঘুমুতেই লাগলেন। ডাকাতেরা তাঁদের সকলকে মেরে, যত টাকা কুড়ি লুটে নিয়ে গেল, মেনিয়া-ফেনিয়া শুদ্ধ সেই যাঁতাটাও নিয়ে জাহাজে তুলল।

তারপর ডাকাতদের সর্দার বলল-‘বাঃ বেশ হয়েছে। যাঁতাটার ভিতর থেকে যা চাই তাই বেরোবে! টাকা কড়ি ত আমারে ঢের আছে- নাই খালি নুন। এবারে আমাদের নুনের দুঃখ দূর হবে। ঠেল, ঠেল, ঠেল,-নুন বেরোক, নুন, নুন!’

মেনিয়া-ফেনিয়া যাঁতা ঠেলতে লাগল, আর কেবল নুন বেরোতে লাগল। নুন, নুন আর নুন! শেষে জাহাজ একেবারে ডুবেই গেল। সব ডাকাত তার সঙ্গে ডুবে মরল।

সেই ভয়ঙ্ক যাঁতা ডুববার সময়ে কি যে কাণ্ড হয়েছিল, কি বলব! সাগরের জল গর্হ হযে, হড়-হড় শব্দে জল তার চারদিকে ঘুরপাক খেতে লাগল,-যে ঘুরুনি আজো থামে নি!

আর সেই লবণের কি হল? আর হবে? সেই নুন সমুদ্রের জল ভেসে গেল। দুই দানবীতে মিলে কম নুন তোর বার করে নি, সাগরের সব জল তাতে লোনা হয়ে গেছে।

আমার কথায় বিশ্বাস না-হয়, মুখে দিয়ে দেখে আসতে পার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress