সমাজে অর্থই হলো যোগ্যতার মাপকাঠি
প্রবাদ প্রবচনের মতোই কথাটি বহুল প্রচলিত যে,অর্থ নাকি অনর্থের পরিবাহক। কেননা, মানুষের জীবনে চলার পথে অর্থের প্রয়োজন থাকলেও তা যোগ্যতার নিরীখে বিবেচ্য হতে পারে না। প্রশ্ন আসতে পারে ,তাহলে যোগ্যতার সঠিক মাপকাঠি কি? জবাবে বলা যেতেই পারে যে,অর্থ নয়,যোগ্যতাই মানুষের অর্জিত অধিকার।এই যোগ্যতার বিচারেই একজন মানুষ অন্যসকলের চাইতে পৃথক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। অবশ্য ,যোগ্যতার ও ব্যক্তিভেদে তারতম্য আছে।কারো কারো বিশেষ কর্মদক্ষতা ও নানাবিধ গুণের জন্য যোগ্যতা থাকার কারনে সমাজের মাপকাঠিতে সেই বিশেষ যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিটি সবার সমীহের পাত্র হয়য়ে ওঠেন। কিন্তু , শুধুমাত্র পড়াশোনা বা ডিগ্রিধারী হলেই যে সমাজে যোগ্যতার মাপকাঠিতে বিবেচিত হবেন তেমন টিও নয়। যোগ্যতা হলো মূলতঃ সমাজ তাকে কতটুকু যোগ্য হিসেবে মেনে নেবে? আসলে,প্রকৃত অর্থেই তিনি যোগ্য কিনা সেটা ও সমাজই বলবে।
যদিও, আজকাল বিচার, বিবেচনা,যোগ্যতার মাপকাঠিও অর্থের তূলাদন্ডেই মাপা হয়ে থাকে।এটা যথার্থ অর্থেই অত্যন্ত দুঃখজনক।কারন, আজকাল সবকিছুই যেন বদলে যাচ্ছে,তাই ডিগ্রিধারীরা যোগ্যতাও সমাজের কাছে তার গ্রহনযোগ্যতা সবকিছুই বিবেচ্য হয় অদৃশ্য কোন নিয়ামকের অঙ্গুলি নির্দেশ অনুসারে। একটু চোখ মেললেই দেখা যায় বিচিত্র চালচিত্র। যেখানে মুড়ি ও মিছরি এক। যেমন ,কেউ হয়তো যোগ্যতা থাকাতে একটা চাকরি পেয়ে গেলো বহুকষ্টে,অথচ আরো কেউ হয়তো ডিগ্রির বাহারনেই, পড়াশোনাতেও টেনেটুনে প্রাথমিক পাশ করেছে অথচ সেই কিনা অর্থের সবলতার কারনে চাকরি জুটিয়ে নিচ্ছে অনায়াসে। এখানেই তো যোগ্য ও অযোগ্য সমাপনের আরূঢ় হয়ে মুড়ি- মিছরির তূল্য হয়ে গেলো। মানুষের বিচারবুদ্ধি,আলম, বিবেচনা, চিন্তাধারা- এগুলোর ভিত্তিতেই যোগ্যতা নিরূপণ হয়।
কারো জীবনে অর্থাভাব সত্বেও তার অত্যুৎসাহী অদম্য একাগ্রতায় সে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে যোগ্যতা অর্জন করে। কিন্তু যখন চাকরির নিতান্ত দরকার তখন সে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে আর্থিক অসচ্ছলতার কারনে।
অর্থের মোহময়ী চমকে সমাজকেও মূক রাখা যায়। অপরদিকে,সমাজের নেতা , পঞ্চায়েত প্রধান– এদের ডিগ্রি না থাকা সত্ত্বেও সমাজে বুক চিতিয়ে ঘুরে মঞ্চে ভাষন দেন– যদিও নেপথ্যে সেই ভাষনের কথাগুলোও কোন না কোন শিক্ষিত মানুষের।
এর ফলে কিন্তু সমাজেরই ক্ষতি হচ্ছে। অযোগ্যকে সবরকমের সুবিধা দিয়ে প্রকৃত মেধাকে ঠেলে দিচ্ছে– এজন্য,একবারটি বিবেক পীড়িত হচ্ছে না। এর কুফল কিন্তু সুদূরপ্রসারী। তাই,সগর্বেই বলা যেতে পারে যে, মানুষের পরিচয় তার অর্থের মাপকাঠিতে নয়,যোগ্যতার নিরীখে ই বিচার্য। তবে, যতোদিন না সমাজ যোগ্যতার বিচার করবে ততোদিন কোন কল্যাণ সাধিত হবে না।