সমকামি – সাতাশতম পর্ব
বাবাকে বেরিয়ে যেতে দেখেও অন্যন্যা চুপ করে থাকে আর কোনো কথা বলে না। ওর আজকে ভালো লাগছে না কথা বলতে। কৃষ্ণেন্দুর কথা বার বার মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে ও পাশে থাকলে যেনো সবকিছু এই মুহূর্তে ঠিক হয়ে যেতো। কিন্তু এমনটাই বা কেনো মনে হচ্ছে অন্যন্যা যেনো তা বুঝে ও বুঝতে চাইছে না বা হয়তো সত্যি ও বুঝতে পারছে না। সেই মুহূর্তেই ফোনটা বেজে ওঠে অন্যন্যার। ফোনের কাছে যেতে দেখে কৃষ্ণেন্দু ফোন করছে। মনে মনে হাঁসে অন্যন্যা!!!! ওর তো কৃষ্ণেন্দুর কথাই মনে হচ্ছিল কি করে বুজলো ও যে অন্যন্যা ওর কথাই ভাবছে। তাহলে কি সত্যি ও কৃষ্ণেন্দুকে ভালোবাসতে শুরু করেছে? কিন্তু কৃষ্ণেন্দু ও কি সত্যি অন্যন্যাকে ভালোবাসে? নাকি ওর একাকীত্বের মধ্যে অন্যন্যা চলে আসায় ওর একটা ইনফেচুয়েসন তৈরী হয়েছে? এসব নানা কথা ভাবতে ভাবতেই ফোন রিসিভ করে অন্যন্যা। হ্যালো কেমন আছো কৃষ্ণেন্দু? প্রশ্ন করে অন্যন্যা। ফোন ধরার সাথে সাথে কৃষ্ণেন্দু জিজ্ঞাসা করে: কি হয়েছে অন্যন্যা কি হয়েছে তোমার? তোমার গলাটা এমন কেনো লাগছে? বাড়িতে কি কিছু নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। এখানে আসা নিয়ে কিছু হয়েছে? তুমি চুপ করে কেনো আছো কিছু তো বলো!!! অন্যন্যা শান্ত স্বরে উত্তর দেয়: তুমি কি করে বুজলে কৃষ্ণেন্দু? কৃষ্ণেন্দু চিন্তিত স্বরে বলে: আমি কি করে বুজলাম সেটা বড় কথা না অন্যন্যা। তুমি বলো না কি হয়েছে তোমার? অন্যন্যা এবার হেঁসে বলে: কই কিছুই তো হয়নি। এসব কথা রাখো তুমি বলো তোমার শরীর কেমন আছে এখন? খাবারটা কিন্তু সময় মতো খেয়ে নিও। আর খাওয়ার আগের ওষুধটা কিন্তু আধা ঘণ্টা আগে খেতে হবে ভুল যেনো না হয়। কৃষ্ণেন্দু গম্ভীর হয়ে বলে: আমি সব করবো তুমি বলো না কি হয়েছে তোমার? তোমার গলাটা এমন কেনো লাগছে? অন্যন্যা কৃষ্ণেন্দুকে বলে সত্যি আমার কিছু হয়নি টায়ার্ড লাগছে একটু। কালকে তো যাবো তুমি এতো চিন্তা করছো কেনো? তাহলে এখন কি করা হবে কৃষ্ণেন্দু বাবুর? অন্যন্যা আমাকে কি তোমার বাচ্চা বলে মনে হচ্ছে অন্যন্যাকে প্রশ্ন করে কৃষ্ণেন্দু? অন্যন্যা হেঁসে হেঁসে বলে: সত্যি বলবো? সেটা একটু হয়। তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠো তা না হলে এতো দূর থেকে আমার খুব চিন্তা হয়। আজকে সকালে যা হলো সেটা যদি কালকে রাতে হতো কি হতো ভাবতে পারছো? কি করে যেতাম আমি? আদৌ কি জানতে পারতাম তুমি কি জানাতে ওতো রাতে আমাকে? কৃষ্ণেন্দু এবার আবেগী সুরে জানতে চায়: কেনো অন্যন্যা কেনো এতো চিন্তা হচ্ছে আমার জন্যে তোমার? আমি তোমার কে ? কি সম্পর্ক আমাদের? তুমি তো আমাকে আজও অফিসের বস ছাড়া কিছুই ভাবতে পারো না। সত্যি বলতো করো প্রতি শুধুমাত্র কৃতজ্ঞতা থেকে কি এতো কিছু করা যায়? অন্যন্যা একবার একটু সামলে নিয়ে বলে: তোমার এতো প্রশ্নের উত্তর আজ এই মুহূর্তে আমার জানা নেই। তোমাকে শুধু একটুকুই বলবো ধৈর্য ধরতে শেখো। যদি আমাদের জন্য কিছু ঠিক করাই থাকে তাহলে সেটা ঘটবেই। তোমার শরীর ভালো না এতো টেনশন তোমার শরীরের জন্য ও ভালো নয়। তুমি বিশ্রাম নাও। আমি আবার তোমাকে ফোন করবো। সময় মতো খেয়ে নেবে কিন্তু। এরপর ফোনটা কেটে দেয় অন্যন্যা। ঘড়িতে তখন সবে মাত্র সাড়ে আটটা অন্যন্যার মনে হলো তৃনাকে একটা কল করা যেতেই পারে। রবিবারের পর ওর সাথে আর কথা হয়নি। অন্যন্যা তৃনাকে ফোন করে: অন্যন্যার ফোন পেয়ে ফোনের ওপার থেকে তৃণা বলে ওঠে বলো ডার্লিং তোমার ফোনেরই অপেক্ষা করছিলাম আমি। অন্যন্যা অবাক হয়ে জানতে চায়: আমার ফোনের? তুই কি করে জানলি যে আমি তোকে ফোন করবো? ওপাশ থেকে তৃণা বলে: জানি জানি সোনা আমি সব জানি। আমাদের রাই কিশোরী যে শ্যামকে তার মনের কথা বলতে না পেরে এই সখিকেই মনে করবে সেটা আমার বেশ জানা আছে। এবার বলো তো বিরহিনি কি ব্যাপার আজকে অফিসে শ্যাম সুন্দরকে না পেয়ে খুব মিস করেছো? অফিস থেকে যাওয়ার সময় পাওনি তাই তোমার মনটা ও খুব খারাপ কি তাই তো? অন্যন্যা ঝেঁঝিয়ে বলে: না মোটেই তা নয়। উল্টে আমি আজকে অফিস যাওয়ারই সময় পাইনি। সারাদিন কৃষ্ণেন্দু বাবুর সাথেই ছিলাম। অন্যন্যা কথা শেষ করার আগেই তৃণা বলে: আহা্, মামনি আবার ওই বাবু টাবু কেনো সোনা কৃষ্ণেন্দু উফফ তোর মুখ থেকে নামটা শুনতে যা ভালো লাগে না কি বলবো!!! অন্যন্যা রেগে গিয়ে বলে: তাহলে তুই বল আমি শুনি কথা গুলো বলতেই দিচ্ছিস না তৃণা। আমি সত্যি ঠাট্টার অবস্থায় নেই। বাড়িতে খুব অশান্তি শুরু হয়েছে তৃণা। এই ভাবে চলতে থাকলে আমাকে বাড়ি ও ছেড়ে দিতে হবে। এবার তৃণা একটু সিরিয়াস হয়ে বলে: আচ্ছা বাদ দে তুই বল। বাড়িতে আবার নতুন করে কি হলো? অন্যন্যা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সব কথাই বললো তৃনাকে। অন্যন্যা বললো: জানিস তৃণা এখন মা চাইছে আমি আবার গিয়ে ওই অয়নের সাথে সংসার করি!!! সবকিছু কি এতো সহজ বল? তৃণা অন্যন্যাকে বললো: তোকে একটা কথা বলবো অন্যন্যা? শুনবি আমার কথা। অন্যন্যা বিস্ময়ের সুরে বললো: তৃণা তুই ও কি অয়নের কাছে ফিরে যেতে বলবি? ওপাশ থেকে তৃণা বলে: তোর মাথাটা কি একদম খারাপ হয়ে গেছে? না আমি তোকে কৃষ্ণেন্দুর কাছে ধরা দিতে বলছি অনু মানুষটা সত্যি একা ভালো তোকে ওর প্রয়োজন তোরা ভালো থাকবি বিশ্বাস কর। হ্যাঁ আমি মানছি তোর থেকে বয়স টা একটু বেশি কিন্তু তুই একটু চিন্তা করে দেখ সমন্ধ দেখে বিয়ে করলে ও এই ডিফারেন্সটা থাকে সেটা অন্য ব্যাপার যে তোর আর অয়নের মধ্যে এজ গ্যাপ টা কম ছিল তাতে কি ও তো মানুষটা তোর জন্য ঠিক নয়। আর কি জানিস তো আমার ওর বাবা মানুষ টাকে একদম ভালো লাগেনি। তুই কৃষ্ণেন্দুকে ফিরিয়ে দিস না অনু খুব ভুল করবি তাহলে। কাকু যখন বলছে কাকিমাকে বোঝাবে তুই আর চাপ নিস না। বরং প্রেমটা মন দিয়ে কর। অন্যন্যা তৃণাকে বলে আমার খুব ভয় করছে রে!!! আমি আবার কোনো ভুল করে ফেলবো নাতো? আচ্ছা অনু তুই ভালো করে চিন্তা করে বলতো কৃষ্ণেন্দুকে তোর ভালো লাগে না, ভালো বাসিস না ওকে। যদি ভালোই না বাসবি তাহলে এই ভাবে ছুটে কেনো গেলি? তোরা দুজনেই দুজনকে ভালোবেসে ফেলেছিস অন্যন্যা। চুপ করে থাকে অন্যন্যা তৃণার কোনো কথার উত্তর জানা নেই ওর। শুধু এই টুকুই ও জানে যে ও যা করছে সেটা হয়তো বা শুধু কৃতজ্ঞতা নয়। কিন্তু ভয় পায় ও আবার কোনো ভুল না করে ফেলে। ওপাশ থেকে তৃণা বলে: কিরে অনু আছিস? চুপ করে আছিস কেনো? না আসলে ঘরে বাইরে আমার কিছু ভালো লাগছে নারে!!! উত্তর দেয় অন্যন্যা। ওতো চিন্তা করিস না সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। যা খাওয়া দাওয়া করে শুয়ে পর। তারপর ফোন রেখে দেয় অন্যন্যা। ঘড়ির দিকে অন্যন্যা তাঁকিয়ে দেখে প্রায় সাড়ে ন়টা বাজে। সারা বাড়ি নিঃস্তব্ধ যেনো বাড়িতে একটা মানুষ ও নেই। অন্যন্যা চুপচাপ শুয়ে থাকে হঠাৎ একটা টেক্সট আসে ওর ফোনে: আমি জানি তুমি আমার কথাই ভাবছো। কিন্তু কেনো ভাবছো? অনু!! তোমাকে অনেক কথা বলার আছে। শুনবে? অন্যন্যার মনে একটা অদ্ভুত ভয় মিশ্রিত ভালোলাগা। অন্যন্যা রিপ্লাই করে: হ্যাঁ, সব শুনবো কিন্তু এখন না এখন আগে তুমি খেয়ে নাও। তুমি সুস্থ হও তারপর সব শুনবো!! আচ্ছা বেশ আমি খেতে গেলাম। তুমি ও কিন্তু খেয়ে নাও। অনু কাল আসবে তো? আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করে থাকবো উত্তর দেয় কৃষ্ণেন্দু। রাত প্রায় দশটা তিয়াসা অন্যন্যাকে ডাক দেয়!! দি ভাই চল খেতে চল সবাই অপেক্ষা করে আছে। অন্যন্যা তিয়াসা বলে: তোরা খেয়ে নে আমার ক্ষিদে নেই। আমি একটু ঘুমোবো খুব ক্লান্ত লাগছে আমার। দিভাই!!! তুই যা বনু আজ আমার সত্যি ক্ষিদে নেই। তিয়াসা কথা না বাড়িয়ে চলে যায়। সেদিন রাতে কেউ আর ডাকতে আসেনি অন্যন্যাকে।
সকালে উঠে অফিসের জন্য তৈরী হয় অন্যন্যা। তৈরী হয়ে বাইরে এলে রিনা দেবী বলে: টেবিলে খাবার রাখা আছে না খেয়ে কোথাও যাওয়া যাবে না। আমার সংসারের ভালো মন্দ বলে একটা কথা আছে। বিকাশ বাবু ও চোখের ইশারায় মেয়েকে খেয়ে নিতে বলেন। অন্যন্যা খাওয়া দাওয়া সেরে মা বাবাকে বলে বেরোনোর সময় রিনা দেবী বলে: কালকে রাতের কথাটা যেনো অন্যন্যা একটু মাথা ঠাণ্ডা করে ভাবে। অন্যন্যা মার কথা কোনো উত্তর না দিয়ে বেরিয়ে যায় অফিসের জন্য।
অফিসে ঠিক সময় মতোই পৌঁছে যায় অন্যন্যা। অফিসে গিয়ে নিজের কাজে মন দেয় ও। কিছুক্ষন পরে পিয়ালি ওর ডেস্কের সামনে এসে জানতে চায় কিরে কালকে অফিসে এলি না যে? জানিস তো কালকে সেন সাহেবের জন্মদিন ছিল দারুন লাঞ্চ করিয়েছে সবাইকে কালকে। তোর কথা বলছিলেন বার বার। ও কালকে কৃষ্ণেন্দু স্যার ও আসেনি। যদি ও আজকে ও ওনাকে এখনও অফিসে দেখা যায়নি। তুই কিছু জানিস কেনো আসছে না অফিসে? অন্যন্যা পিয়ালিকে প্রশ্ন করে কেনো তোর কি মনে হয় উনি আমাকে অ্যাপিকেশন দিয়ে তারপর অফিসে আসছে না? দেখ সেন সাহেব কেনো আছে না সেটা তুই বলতে পারিস বলে এটা তো জরুরি নয় যে সবাই সবটা বলতে পারবে। পিয়ালি আমার অনেক কাজ আছে বিশ্বাস কর তোর সাথে বাজে কথা বলে সময় নষ্ট করার সময় আমার নেই। আমার তোর মতো কেনো সেন সাহেব এখানে নেই যে আমি গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরলেও আমাকে কেউ কিছু বলবে না। অন্যন্যার কোনো কথার উত্তর না দিয়ে মুখ বেঁকিয়ে সেখান থেকে চলে যায় পিয়ালি। সারাদিন প্রচুর কাজের চাপ ছিল ঠিক মতো লাঞ্চ করার ও সময় পায়নি আজকে অন্যন্যা। সব কাজ শেষ করে সাড়ে পাঁচটায় অফিস থেকে বেরিয়ে যাবে বলেই ঠিক করেছে। ঠিক পাঁচটা পনেরোর সময় সেন সাহেবের কেবিনে যায় অন্যন্যা!!! স্যার আসবো? সেন সাহেব দরজার দিকে তাঁকিয়ে বলে: আরে অন্যন্যা ম্যাডাম যে আসুন আসুন, কালকে আপনি অফিসে কেনো আসেননি? বাড়িতে একজন রিলেটিভ খুব অসুস্থ স্যার। আজকে ও আমাকে সাড়ে পাঁচটায় বেরোতে হবে স্যার। এই ফাইল টা এটা আমার হাতে ছিল কমপ্লিট করে দিয়েছি। সেন সাহেব চশমার ফাঁক দিয়ে অন্যন্যার দিকে তাঁকিয়ে বললো: এটা তো আপনি কৃষ্ণেন্দুকেই দিতে পারতেন। হ্যাঁ, সেটা পারতাম কিন্তু পিয়ালি বললো: স্যার দুদিন ধরে আসছেন না তাই আপনাকে দিতে এলাম। উত্তর দেয় অন্যন্যা। তাহলে আমি যেতে পারি? সেন সাহেব একটু অসন্তুষ্ট হলেও কিছু বলতে পারলেন না। সারাদিনে আজকে একবার ও কৃষ্ণেন্দুকে ফোন বা টেক্সট করার সময় পায়নি অন্যন্যা। কৃষ্ণেন্দু ও রাগ করে কিছু লেখেনি। তাই অফিস থেকে বেরিয়ে ও আর ফোন না করেই সোজা যায় চলে যায় কৃষ্ণেন্দুর ফ্ল্যাটে। হাতে করে কিছু হাল্কা খাবার নিয়ে যায় কারণ কৃষ্ণেন্দুর এখন বাইরের খাওয়া বারন তাই।
ডোর বেলটা বাজতেই মালতি এসে দরজা খোলে। মালতিকে দেখে অন্যন্যা জিজ্ঞাসা করে: মালতি দি তোমার দাদা বাবু কোথায়? মালতি দি হেঁসে বলে দাদা বাবু? তার তো মেজাজ কি জন্নি যে খারাপ হয়ে আছে ভগবান জানে। আমাকে সকালে বললো মালতি বিকেলে একটু তাড়াতাড়ি আসিস। আমি এলুম চা খেতে বললুম খাবারের কথা জিজ্ঞাসা করলুম বাবা গো তার কি মেজাজ। বিকেল থেকে শুধু একটার পর একটা সিগারেট খেয়ে যাচ্ছে বলতে গেলে এতো মুখ করছে ধুর বাপু আমি পারবো না। অন্যন্যা মালতিকে বলে: আচ্ছা আচ্ছা আমি দেখছি তুমি আমাদের জন্য একটু চা বানিয়ে আনো তো অফিসে থেকে সোজা এখানে এসেছি আর এই খাবার টা সবার জন্য আছে দিয়ে দাও, তুমি ও নিও কিন্তু। তারপর অন্যন্যা ঘরের ভিতরে ঢুকে দেখে কৃষ্ণেন্দু জানলার কাছে দাঁড়িয়ে সিগারেটে টান দিচ্ছে। মুখে কোনো কথা না বলে অন্যন্যা এক টানে কৃষ্ণেন্দুর হাত থেকে সিগারেটটা নিয়ে ফেলে দেয় জানলার বাইরে। কৃষ্ণেন্দু অন্যন্যার দিকে তাঁকিয়ে গম্ভীর হয়ে জিজ্ঞাসা করলো: এটা কি করলে তুমি? সিগারেটটা কেনো ফেলে দিলে? অন্যন্যা আরো গম্ভীর হয়ে জিজ্ঞাসা করলো: এটা কেনো খাচ্ছো? তোমাকে না করে গেছিলাম না কোনো অনিয়ম না করতে। সকাল থেকে কটা হলো? কৃষ্ণেন্দু ওখান থেকে এসে বিছানার উপর এসে বসলো তারপর বললো: যে কটাই হোক তাতে তোমার কি? তুমি ফেললে কেনো আগে সেটা বলো? অন্যন্যা কৃষ্ণেন্দুর সামনে গিয়ে বললো: আমি ও বেশ করেছি ফেলে দিয়েছি। আমাকে হয়রান করতে খুব ভালো লাগে তাই না? যা করেছি বেশ করেছি। কৃষ্ণেন্দু এবার অন্যন্যার হাত ধরে হেছকা একটা টান মারে অন্যন্যা তাল সামলাতে না পেরে কৃষ্ণেন্দুর বুকের উপর গিয়ে পরে। কৃষ্ণেন্দু অন্যন্যাকে শক্ত করে ধরে বলে: কি বেশ করেছো শুনি? সারাদিনে একটা খোঁজ নেবার দরকার মনে করোনি, কি বেচেঁ আছি না মরে গেছি। অন্যন্যা সাথে সাথে ওর হাত দিয়ে কৃষ্ণেন্দুর মুখ চেপে ধরে। তারপর ধরা গলায় বলে: খবরদার এসব কথা যদি বলো আমি এখুনি চলে যাবো এখান থেকে আর কোনোদিন আসবো না। আগে জানতে তো চাইতে পারতে সবকিছু। একটা টেক্সট তুমিও করতে পারতে। করনি তো। আমাকে ছাড়ো আমার লাগছে। কৃষ্ণেন্দু নিজের কাজে লজ্জা পেয়ে তাড়াতাড়ি করে অন্যন্যাকে ছেড়ে দেয়। অন্যন্যা উঠে দাঁড়ায়। তারপর বলে তুমি কি জানো না অফিসে কি ধরনের চাপ থাকে। সারাদিনে লাঞ্চ করার ও সময় হয়নি আজকে। কারণ আমাকে দুদিনের কাজ শেষ করে তাড়াতাড়ি বেরোতে হবে এখানে আসতে হলে। বাড়িতে নতুন অশান্তির সৃষ্টি হয়েছে এখানে তুমি অসুস্থ আমি কোথায় গিয়ে নিজের কথাগুলো বলবো বলতে পারো? আর কোনো কিছু না জেনে না বুঝে নিজেকে এই ভাবে শেষ করছো? কৃষ্ণেন্দু এবার বিছানা ছেড়ে উঠে এসে জড়িয়ে ধরে অন্যন্যাকে। অন্যন্যার মুখটা দুহাত দিয়ে চেপে ধরে কৃষ্ণেন্দু ওকে বলে: আমাকে ক্ষমা করে দাও। আর এমন কাজ করবো না। আসলে তোমাকে না দেখে তোমার সাথে কথা না বলে আমার এখন আর কিছু ভালো লাগে না। অন্যন্যা আমি জানি না তোমার মনে আমার জন্য কি আছে। কিন্তু আমি তোমাকে ভালোবাসি অন্যন্যা খুব ভালোবাসি। আমাকে নিজের থেকে সরিয়ে দিও না। আমার এই একাকীত্বের জীবনে আমার মা ছাড়া কাউকে কখনো আমার জন্য এভাবে ভাবতে দেখিনি। আমার আর একা থাকতে ভালো লাগে না। আমার ও একটা মনের কথা বলার, হাঁসবার, গল্প করবার মানুষের যে খুব দরকার। অন্যন্যা হাঁ করে তাঁকিয়ে থাকে কৃষ্ণেন্দুর নিষ্পাপ মুখের দিকে। ওর চোখ দুটো যেনো বার বার অন্যন্যাকে জানান দিচ্ছে এবার আর কোনো ভুল হবে না। কৃষ্ণেন্দু আবার প্রশ্ন করে: বলো না অনু যাবে নাতো আমাকে ছেড়ে? অন্যন্যা কিছু বলতে যাবে তার আগেই মালতি দি চা নিয়ে ঘরে ঢুকে ওই দৃশ্য দেখে পিছন ঘুরে চিৎকার করে বলে: মা মা মা আরে তোমারা প্রেম পিরিতি করবে তো দরজাটা দিয়ে নিয়ে করো না ছি ছি ছি লজ্জায় মরে যাই আমি। কৃষ্ণেন্দু অন্যন্যাকে ছেড়ে দিয়ে বলে: আর এতো লজ্জা পেতে হবে না তোমাকে। কেনো তুমিই তো বলছিলে সকালে, দিদিমণিকে এবার ঘরে নিয়ে আসো। তোমাকে খুব ভালোবাসে খুব ভালো রাখবে তোমার জন্য অনেক চিন্তা করে। তা সেই কথাই তো বলছিলাম দিলে তো সব মাটি করে? অন্যন্যা লজ্জা পেয়ে বেরিয়ে যায় ওই ঘর থেকে। বেরিয়ে গিয়ে ফ্রিজের সামনে দাঁড়ায় জল খাবার ভান করে। মালতি ও চায়ের ট্রেটা ঘরে রেখে অন্যন্যার পিছনে এসে দাঁড়ায়। তারপর অন্যন্যাকে বলে: জল খাবে আমাকে তো বললেই পারতে আমি দিতুম। আবার দাদা বাবুর চোখের সামনে থেকে সরার কি দরকার ছিল? এমনি এমনি যে ওতো খ্যাচ খ্যাচ করছিল না সেকি আমি বুঝিনি। বেশ বুঝেছি। অন্যন্যা সরে যেতে চাইলে মালতি বলে: হ্যা গো দিদিমণি, মানুষটা তোমাকে বড্ড ভালোবাসে। বড্ড একা মানুষটা। তুমি তাড়াতাড়ি দিদিমণি থেকে বৌদিমনি হয়ে যাও তো। আর এই ভাবে কতদিন একা থাকবে মানুষটা। অন্যন্যা কোনো উত্তর না দিয়ে হেঁসে ঘরের ভিতর গিয়ে ঢোকে।