Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » সবে মিলি করি কাজ || Rana Chatterjee

সবে মিলি করি কাজ || Rana Chatterjee

সবে মিলি করি কাজ

“কোথায় লেখা আছে শুনি বাড়ির অভ্যন্তরে   সকল কাজ মহিলারা করার ঠ্যাকা নিয়ে রেখেছে! তাদের শারীরিক অসুবিধা থাকলেও বুঝি মরি বাঁচি করে সব কিছু তাদেরকেই সামলাতে হবে, আর আমরা পুরুষরা গ্যাঁট হয়ে বসে ভাষন দেবো”। আড্ডার আসর থেকে লাঠিতে ভর দিয়ে উঠতে গিয়ে বলেই ফেলল রাগ মিশিয়ে মাথুর দত্ত।  বেগতিক দেখে “আহা হা হা চটছো কেন মাথুর, আমি রাগের কথা কি বলেছি! মাথায় মাফলারটা আরো ভালো করে জড়িয়ে বললো অম্বরিশ চাটুজ্জ্যে।

স্থান পাঁচুর চায়ের দোকান, সান্ধ্য আড্ডা।ওই বিকালের  পাঁচটা পঁচিশ কর্ড লাইন হাওড়া পাশ করা থেকে বড় জোর পৌনে সাতটা।তাতেই গ্রাম গঞ্জের এই ছোট্ট হল্ট স্টেশনটি প্রায় জনশূন্য হয়ে
যায়। এক নম্বর প্লাটফর্মের ওদিকে রতনের দোকানে স্থানীয় লোক, যাত্রী দু চারটে রাত অবধি থাকলেও এই তিন নম্বরে আলো আঁধারি নেমে কিছু কুকুর ছাড়া প্রায় ফাঁকা।এখানেই অবসর প্রাপ্ত জনা পাঁচ ছয় বয়স্ক মানুষজন ওনাদের নিছক আড্ডার আসর বসান।

দীর্ঘ লকডাউন কাটিয়ে সব যেন একটু একটু করে ছন্দে ফেরার চেষ্টা।এত গুলো ছুটি এক লপ্তে পেয়েও  কিন্তু চোখে মুখে কারুর কোনো উচ্ছ্বাস নেই।বাড়ির বাচ্চা গুলো স্কুলের চৌহদ্দি ভীষন মিস করে কেমন যেন কুয়োর ব্যাঙ হয়ে গেছে।শুধু অনলাইন আর অনলাইনে পড়াশোনায় জেরবার ছাত্র ছাত্রীরা।তাদের চোখের বারোটা বাজিয়ে পরিবেশটা কেমন যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে শেষ কয়েক মাসে।কেউ বাদ যায় নি এমনকি গৃহ বন্দির প্রবল প্রভাব আছড়ে পড়েছিল এই উপস্থিত বয়স্ক মানুষগুলোর জীবন যাত্রাতেও, সঙ্গে তো ছিলই ভাইরাস আতঙ্ক।

প্রমথ বাবুর যেমন দুতলা বাড়ি সামান্য নিজেদের জন্য ওপরের দুটো রুম রেখে বাকি ভাড়া দেওয়া।ছেলে তো আমেরিকায় সেটল, কিন্তু করোনা কালে তারা হাজির।নিজেদের রুম আর অন্যটা কেউ কখন যদি আসে বা হঠাৎ ছেলে এসে গেলে এই ভাবনায় রেখে দেওয়া।এবার নাতি ক্লাস সিক্সে উঠলো , তার অনলাইন ক্লাস, ছেলের ওয়ার্ক ফ্রম হোম তাই নাতি এসে দাদু ঠাম্মার ঘরেই ক্লাস করছে। স্বাধীন ভাবে যে টিভি দেখতো বিছানায় গা এলিয়ে  প্রমথ বাবু সে দিন বন্ধ হতেই মেজাজ খিট খিটে। “আস্তে বলো, বৌমা শুনতে পাবে, কি হিংসুটে লোক রে বাবা” বলে ঠাম্মার নিরন্তর প্রয়াস চলছে কত্তাকে নাতির সামনে নৈতিকতার পাঠ শেখানোর। যে প্রমথ বাবু সকাল হলেই বাজার ছুটতেন তিনি নট নড়ন চরণ ।”কি গো একটা সবজি নেই, মাছ নেই বাজার যাও বললেও, সেই গজ গজ।ছেলে তর্কে জড়ালো, ” বাবা তোমায় যে সরকার পেনশন দেয়, পুরো বাড়ির এত বছর ধরে ভাড়া, আমি প্রতিমাসে অতগুলো টাকা ব্যাঙ্কে পাঠাই তবু কি হচ্ছে গো প্রতিদিন এমন বিরক্ত মুখ নিয়ে বসে থাকছো। চলো আমি বরং ওপরে তিনতলায় একটা রুম করি বলতেই লঙ্কা ফোরণের মতো লাফিয়ে উঠলেন বাবা।

মাথুর বাবু ছটা বাজতেই , “না সবাই আজ বসো আমি উঠি….” বলতেই পিনাকী অবাক হলো।আরে এইতো এলে গো দাদা, তাও গত সপ্তাহ থেকে সবাই এলেও তুমি আসো নি”!মাথুর জানালো সবই তো তোমরা জানো বন্ধু, গিন্নি মারা যাওয়ার পর থেকে সংসারে দায়িত্ব বেড়েছে।ছেলের ফিরতে রাত হয়, বৌমা পোয়াতি, বলা তো যায় না কখন কি দরকার লাগে! সমীর একটা ব্যঙ্গের হাসি দিলে ওকে থামিয়ে শিশির বললো এতে হাসির কি আছে? মাথুরদা যে এই উপলব্ধিটা করেছে এই বয়সেও, নিজের দায়িত্ব বোধ থেকে বিচ্যুত না হওয়া এটাই বিরাট আদর্শ আমাদের কাছে! সত্যিই তো দিনকাল ভালো নয়, বাড়িতে অমন এক অসুস্থ মানুষ, হ্যাঁ দাদা তুমি যাও সাবধানে।

তখনই  অম্বরিশ ফুট কেটেছিল, “আমি বাবা রাজার হালে থাকি, বাড়িতে সামান্য কাজও করি না। মাথুরটা বোকা তাই এখনো সন্ধ্যা দেয়, কখনো দেখি টিফিন বানায়, বৌমা কে দুধ গরম করে হাতে ওষুধ দেইয়, থুঃ ওসব মহিলাদের কাজ, প্রয়োজনে দিন রাতের কাজের লোক রাখুক ছেলে।

মাথুর উঠতে গিয়ে এমন শুনে অবাক চোখে তাকিয়ে কথা গুলো বলে হাতের টর্চ জ্বালিয়ে সামনের দিকে এগুলো।আড্ডার আসরে সবাইকে একদম চুপ করিয়ে দিয়েছে তার কিছু প্রশ্ন। সত্যিই  কোনো কাজের পেছনে কোনো লেবেল তো সাঁটানো নেই যে এটা মেয়েদের, এটা করলে ছেলেদের মান যাবে।ফটিক বললো মাথুর দা ঠিক বলেছেন আজকাল মহিলারা সংসারের প্রয়োজনে, স্বাবলম্বী হওয়ার সাথেই ঘর বাইরে সবই সামলাচ্ছে , আমাদের ভাবনাকে আধুনিক করা প্রয়োজন। জবরদস্ত উত্তরে পেয়ে অম্বরিশ
চাটুজ্জ্যে বেগতিক বুঝে অন্য দিকে দৃষ্টি ফেলে এড়াচ্ছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress