Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ষোলো নম্বর ফটিক ঘোষ || Shirshendu Mukhopadhyay » Page 8

ষোলো নম্বর ফটিক ঘোষ || Shirshendu Mukhopadhyay

দোগেছে থানার দারোগা

দোগেছে থানার দারোগার ঘরে রাত দশটার সময় দৃশ্যটা এরকম: একখানা লম্বা বেঞ্চের একধারে বছর ছাব্বিশ-সাতাশ বয়সের একজন তোক ঘাড় এলিয়ে বসে আছে। বেশ তাকওয়ালা চেহারা, তবে এখন তার মাথা ফেটে জামা রক্তে ভেজা, বাঁ হাতটা ভাঙা বলে কোনওক্রমে একটা ন্যাকড়া দিয়ে গলার সঙ্গে ঝোলানো। ইনিই দুলাল রায়। মাঝে মাঝে বিড়বিড় করে বলছেন, দেখে নেব, দেখে নেব। তবে গলার স্বর ভাল ফুটছে না। তাঁর বাঁ পাশে জনাচারেক লেঠেল বসে “উঃ আঃ বাবা রে মা রে” বলে কাতরাচ্ছে। সকলেরই গায়ে কালশিটে, মাথা ফাটা বা হাত-পা ভাঙা। কয়েকজন মেঝেতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। তাদের পাশেই হাঁ করে দাঁড়িয়ে আছে। দড়িতে বাঁধা রসিক বৈরাগী।

দারোগার উলটোদিকে নটবর রায়, তাঁর পাশে বঙ্গসুন্দরী দেবী, তার পাশে ফটিক ঘোষ, তার পাশে নিতাই, নিতাইয়ের পাশে গজপতিবাবু। বঙ্গসুন্দরী দেবী ফটিকের পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে হাপুস নয়নে কাঁদছেন। দারোগাবাবু তাঁর দিকে একখানা পোস্টকার্ডের চিঠি এগিয়ে দিয়ে বললেন, “এই আপনার সেই চিঠি।”

বঙ্গসুন্দরী বললেন, “ও চিঠির আর দরকার নেই। ফটিক আমার দাদার লেখা যে চিঠি ওর পিসেমশাইয়ের হাতে দিয়ে যায় সেইটে পড়েই বুঝতে পারি যে, এই আমার আসল ফটিক। চিঠিতে দাদা আমাকে পাঠ লিখেছিল ‘স্নেহের কুনু’ বলে। কুনু নামে একমাত্র দাদাই আমাকে ডাকত, আর সবাই ডাকত পুতুল বলে। ওই চিঠি পড়েই আমি ওঁকে বলি, ওগো, এই ছেলেটাই আমার ফটিক।”

হঠাৎ নটবর রায় বললেন, “ফটিক আর নিতাই দু’জনই আমার কাছে থাকবে। ফটিক সম্পত্তি পাবে, নিতাইকে ম্যানেজার করে দেব। কিন্তু দুলু কোনও গণ্ডগোল করবে না তো সতীশবাবু?”

সতীশ মাথা নেড়ে বললেন, “না, দুলুবাবুর বিরুদ্ধে চারটে প্রমাণিত খুনের মামলা আছে। আর আজকেরটা নিয়ে আছে তিনটে খুনের চেষ্টার অভিযোগ। ফাঁসির দড়ি ওর কপালে নাচছে।”

সতীশ দারোগা ফটিক আর নিতাইয়ের দিকে চেয়ে বললেন, “তোমরা লাঠিখেলা কোথায় শিখলে?”

ফটিক আর নিতাই মুখ চাওয়াচাওয়ি করে নিল। ফটিক বলল, “জীবনে কখনও লাঠিখেলা শিখিনি।”

“তা হলে কী করে এসব হল? দশ বারোজন লেঠেলের সঙ্গে লড়লে কী করে?”

নিতাই চাপা গলায় বলল, “গড়াইঠাকুমা।”

সতীশ দারোগা মৃদু হেসে বললেন, “আমারও তাই মনে হয়েছিল।”

ফটিক বলে ওঠে, “কিন্তু আপনি সতীশ দারোগা হলেও আপনি কিন্তু আমাদের নদিয়াদা।”

সতীশ দারোগা হেসে বললেন, “হ্যাঁ, কখনও আমি নদিয়া চোর, কখনও গজপতিবাবুর শ্বশুর, কখনও বাঘ, কখনও সাধু। কত কী যে হতে হয় আমাকে!”

গজপতিবাবু তাড়াতাড়ি উঠে বললেন, “আপনি আমার শ্বশুর নন ঠিকই। কিন্তু তাতে কী? দিন তো মশাই, আর-একবার পায়ের ধুলো দিন।”

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8
Pages ( 8 of 8 ): « পূর্ববর্তী1 ... 67 8

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress