Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » শ্বেত পাথরের থালা || Bani Basu » Page 14

শ্বেত পাথরের থালা || Bani Basu

আস্তে আস্তে গ্রীষ্ম। প্রচণ্ড আগুনের ফোয়ারা। চোখ ঝলসে যাচ্ছে। পিচ গলছে। গাছগুলো শুষছে। তা-ও কিরকম একটা অসহ্য সূর্যের এই তাপ। এই তাপ যেন বেঁচে থাকার আসল অনুভূতি তীব্রভাবে এনে দিচ্ছে। জামা-কাপড় ভেদ করে, চামড়া ভেদ করে, পেশীর স্তর, তন্তু সব ভেদ করে যেন হাড়ের কাঠামো পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছচ্ছে এই তেজ। তবে সে সঞ্জীবিত সোনালি, সবুজ হবে। গমের দানার মতো আস্তে আস্তে পরিপুষ্ট, পরিপূর্ণ। স্টাফরুমে এখান থেকে ওখান থেকে রব ওঠে। গলদঘর্ম শান্তিদি বলেন—‘উঃ কি গরম রে বাবা আর পারছি না।’ ঊষাদি বলেন—‘ঘামে শরীরের রক্তগুলো সব এবার জল হয়ে যাবে।’ নমিতাদি জলে লেবু নিংড়ে পান করতে-করতে বলেন—‘লেবুর জল। অনেকবার বলেছি এর রেমিডি হল লেবুর জল। কথা তো শুনবে না। সল্টগুলো বেরিয়ে যাচ্ছে, সেগুলো তো আবার শরীরকে ফিরিয়ে দিতে হবে?’

বন্দনা বলে—‘মুখ চোখ একবার ভালো করে ধুয়ে আসুন না ঊষাদি!’

—‘ওরে বাবা, সাম্প্রতিককালে জলে হাত দিয়ে দেখেছ। ফুটছে! টগবগ করে ফুটছে। নীরুকে আজ আর চা করতে কেটলি হীটারে চাপাতে হবে না।’

ক্লাস এইটের ক্লাস-টীচার বন্দনা। মেয়েগুলো তাকে বড় ভালোবাসে। ওদের ভালোবাসা যেমন হয়, আবেগপ্রবণ, বীরপূজামিশ্রিত। ঊর্মি বলে একটি মেয়ে প্রায়ই ফুল নিয়ে আসে, আজ মেয়েটি ওকে একগুচ্ছ সোনার বরণ চাঁপা উপহার দিল। বন্দনা আদর করে ওর গাল টিপে দিল, মেয়েটিকে ক্লাসের অন্যান্য মেয়েদের চেয়েও ছেলেমানুষ মনে হয়। বলল—‘কোথা থেকে নিয়ে এসেছ ফুল?’

—‘আমাদের বাগানে ফোটে দিদি!’ খুশিতে রাঙা হয়ে ঊর্মি জবাব দিল।

—বেশ, খুব ভালো। কিন্তু সেদিন যে পদ্ম এনেছিলে! সে-ও কি তোমাদের বাগানে ফোটে!’

—‘না দিদি’—ঊর্মিমালার মুখ লাল হয়ে গেছে, ‘ঠাকুমা পুজোর জন্য আনিয়েছিলেন দিদি। আমি বলতে…আমি চাইতে…আমি যখন বললুম আপনাকে…’

—‘আচ্ছা, আচ্ছা, ঠিক আছে। কিনে-টিনে আনতে যেও না যেন।’

ছাড়া পেয়ে মেয়েটি ছুটতে-ছুটতে চলে গেল। খুব লজ্জা পেয়েছে। চাঁপার স্তবকের মধ্যে মুখ ডুবিয়ে বন্দনা মুগ্ধ চিত্তে ভাবল—সত্যিই চম্পা সূর্যের সৌরভ। সূর্যের স্বরূপ-সম্পদ। সূর্য পিতৃসম। প্রাচীন মিশরীয়দের মতো সূর্যের জন্য ভক্তি ও কৃতজ্ঞতা টলটল করতে থাকে তার মনে। তুমি ছিলে বলেই তো এই ভূগোলক, এই বায়ুস্তর, এই অম্লজান, উদযান, এই শ্যামশষ্প ভরা ধরিত্রী যার তুলনা নক্ষত্রলোকের কোথাও নেই এবং এই জীবন, যা দ্বিতীয়বার আর মানুষ পাবে কি না সে জানে না। একবার, মাত্র একবারই হয়ত এই দুর্লভ উপভোগে ভরা জীবন।

বিকেলে বাড়ি ফেরবার সময়ে ঝড়ের মতো বাতাস বয়। এ তো বাণিজ্যবায়ু নয়। তবু, মনের মধ্যে গুনগুন করতে থাকে ‘মাইটি ট্রেড উইন্ডস্ ব্লোয়িং, মাইটি ট্রেড উইন্ডস’ …‘গভীর হাওয়ার রাত ছিল কাল।’ গাছগুলো পাতা সমেত পাগলের মতো দুলতে থাকে। ঝুরঝুর করে পথের ওপর ঝরে পড়ে ফুলের পাপড়ি, পরাগ। বেণী ওড়ে। আঁচল লুটোপুটি। সমস্ত শরীরটা বেলুনের মতো, না পাখির মতো উড়ে যেতে চায় যেখানে ছোট-ছোট সাবানের ফেনার মতো মেঘ উড়ে চলেছে, আকাশের দিকে তাকিয়ে বন্দনা দেখে কবি ঠিকই বলেছিলেন জীবনের দুর্দান্ত নীল মত্ততা। তারও হৃদয় বুঝি পৃথিবীর বোঁটা ছিঁড়ে উড়ে যাচ্ছে। নীল হাওয়ার সমুদ্রে স্ফীত মাতাল বেলুনের মতো। স্বাতী তারার কোল ঘেঁষে শাদা বকের মতো উড়ছে, উড়ে যাচ্ছে।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress