Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » শেষ বিকেলে || Sabitri Das

শেষ বিকেলে || Sabitri Das

শেষ বিকেলে

সবাই অবাক হয়ে যাবে । শুধু অবাকই বা কেন নিন্দা- মন্দও কম হবে কিছু! আর কিছু না হোক ছি ছি করার লোকের তো আর অভাব নেই এ সংসারে! তবে কিনা আশ্চর্য হলো এটাই যে সাতান্ন বছর বয়সী কমলা প্রেমে পড়েছেন। তাও কিনা ফেসবুক করতে গিয়ে। তা একটু আশ্চর্যই বটে! বিশেষতঃ এই বয়সী মহিলাদের পক্ষে! সময় কাটাতে ফোনে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়েছিল বৌমা রমা, তা সেখানেই আলাপ! জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা, রোমাঞ্চকর অনুভূতির
কথা ভাগ করে নিতে নিতে, দুজনের একাকীত্বের অনুভূতি কাটতে লাগলো। ভদ্রলোক থাকেন দুর্গাপুরে,সেখানেই কেটেছে চাকরি জীবন ,এখন অবসরের সময়। অকৃতদার মানুষ, রঙ তুলির আঁচড়েই সময় কাটিয়ে দেন তিনি।
কলকাতায় এলে মাঝে মধ্যে, দেখাও হয় বৈকি !
যে মানুষটা মাত্র দুবছর একসাথে কাটিয়ে তিরিশ বছর আগেই চলে গেছেন, তার কথা মনে করে নিজের মনকে প্রতিরোধ করতে অনেক চেষ্টাও করেছিলেন ,সেই স্মৃতিগুলোও এতটাই ঝাপসা সময়ের বিবর্তনে যে শেষ বিকেলের আলোটুকুকে আটকানো গেল না কোনোমতেই।

জীবনের অপরাহ্ন বেলায় রথীনবাবুর হঠাৎ আগমনে জীবনটাই আমূল বদলে গেছিল। বদলে যেতে থাকলেন ক্রমশ! এক জীবনেই যেন জণ্মান্তরের অনুভূতি! প্রেমের কথা এতদিন কেবল শুনেই এসেছিলেন ,এখন টের পেলেন হাতে নাতে। বুকের ভেতরটায় যে কদম ফুল ফুটে ওঠার সৌরভ! কেমন একটা ঘোরের মধ্যে সময় কাটতে লাগলো। পরিবর্তন চোখে পড়লো বৌমা রমার! তার চোখ এড়ানো কঠিন। সে একদিন দুপুর বেলায় একটু একটু করে সমস্তটা জেনে নিল কবে, কেমন করে আলাপ, পরেই বা দেখা হতো কিভাবে।রথীনবাবুর সম্পর্কেও জানতে চাইলে বললেন কমলাদেবী রথীনবাবুর একাকীত্বের কথা, তার শিল্পী জীবনের কথা! বলতে বলতে দুচোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছিল , বৌমা জিজ্ঞাসা করলো রথীনবাবুর সাথে থাকতে পারলে তিনি সুখী হবেন কি না! ওনাকে ছেড়ে থাকতে কমলাদেবীর কষ্ট হয় কি না। চোখ নামিয়ে নিলেন কমলাদেবী , এতেই যা বোঝার বুঝে নিলো ! সবটুকু শুনে বৌমা সাহস দিয়ে বলল রথীনবাবুর কাছে গিয়ে থাকতে । সেদিন রাতেই রমা স্বামীকে বললো ‘বাবার মৃত্যুর পর মা তোমাকে বড়ো করে তোলার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। তার অনেক ত্যাগ স্বীকারের মধ্য দিয়েই তোমার বড়ো হওয়ার রাস্তা প্রশস্ত হয়েছে। এখন সময় হয়েছে মায়ের নিজের জীবন নিয়ে ভাবার। মা তার জীবনে সঙ্গী খুঁজে পেয়েছেন। কারোর আপত্তি থাকার কথা নয়।’ ছেলে চুপ, মুখ দেখে মনের ভাব বোঝা কঠিন! ছেলের পক্ষে এমনটা ভাবাই কঠিন,আত্মত্যাগী মাকে দেখেই তৃপ্তি পেতে চায় ছেলের মন। তাই তার যে খুব একটা সম্মতি থাকবে এমন নয় কিন্তু বৌমাটি ভারি বুদ্ধিমতী আর বিচক্ষণ।
পরদিন ছেলেও সম্মতি জানালো। বৌমা যাবে সাথে, রথীনবাবুর সাথে দেখা করতে চায় । যত্ন করে বৌমা ব্যাগ গোছাতে লাগলো। বাজারে গিয়ে কমলা রথীনবাবুর পছন্দের কটা জিনিসও চুপিচুপি কিনে এনেছেন সবার অলক্ষ্যে । আগামীকাল সকাল সাতটায় ট্রেন। সকাল দশটার মধ্যেই পৌঁছে যাবেন। রথীনবাবুকে বলেছেন স্টেশনে আসতে।

কখন থেকে স্টেশনে ঠায় বসে আছেন,সময় যেন আর কাটতেই চাইছে না।বারবার মোবাইল বের করে সময় দেখছেন ।
আরে দশটা বাজতেই দেরী আছে দেখছি। মাথা টাথা খারাপ হলো নাকি! হেসে উঠলেন নিজের মনেই , কমলার আসবার কথা শুনে তিনি এতটাই উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন যে সময়টাও গুলিয়ে ফেললেন! সময় কাটানোর জন্য উঠে পায়চারি করতে শুরু করলেন। পায়চারি করছেন আর ভাবছেন যা ঘটতে যাচ্ছে তাকি সত্যিই নাকি স্বপ্ন দেখছেন। তার পক্ষে যে কল্পনা করাও অসম্ভব ছিল।সেই অসম্ভবটাই আজ সম্ভব হতে চলেছে ,আমার কল্যাণে।
দশটা পনেরোতে ট্রেনটা এসে থামলো । ট্রেন থেকে নেমে এদিকেই আসছে, পাশের মেয়েটিই বোধকরি বৌমা! কাছে আসতেই পা ছুঁয়ে প্রণাম করতেই আশীর্বাদ করলেন । আবার বলে কিনা ‘মাকে দিতে এলাম।’
বললেন রথীনবাবু-‘চলো বাড়ীতে,যদিও বড়োই অগোছালো ঘর আমার ।’ হাসছে বৌমা,বলল ‘না আজ নয়,এখুনি ফিরতে হবে। সবাইকে নিয়ে আসবো নাহয় আরেকদিন। ঘর গোছানো হোক মা তো এসেই গেলেন। ‘
ট্রেনে উঠে হাত নাড়ল রমা,ট্রেন ছেড়ে যাচ্ছে। যতদূর দেখা সম্ভব তাকিয়ে রইলেন, কমলাদেবীর দুচোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়া জলে ভিজে যাচ্ছে বুকের ভেতর পর্যন্ত ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *