শিশুবাঘ
সুদর্শন ও শকুন্তলা সুন্দরবনের মাতলা নদীর পাশে থাকে। একটু ঝড় বৃষ্টিতেই নদী উত্তাল হয়ে ওঠে। উপচে জল তখন উঠোনে চলে আসে। দরমার তৈরি ঘর, তেমন পোক্ত নয়। হতদরিদ্র পরিবার কোনরকমে দিনযাপন তাদের।
শ্রাবণ মাসের এক রাতে অতিবৃষ্টিতে একদিন মাতলা বানভাসি রূপ নেয়। উথাল পাথাল নদীর স্রোত। উপচে জল চারিদিকে।
রাতে সুদর্শন শকুন্তলা নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারছে না ; এই বুঝি ঘর ভেঙে পড়ে। হঠাৎ মাঝরাতে দরমায় ঝাঁকুনি। দুজনে ধড়পড়িয়ে উঠে বসে। ভাবলো ঝরের দাপটে বোধহয় হয়েছে। আবার ঘনঘন ঝাঁকুনি। দুজনে ভয়ে শিউরে ওঠে। অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। কুপি জ্বালিয়ে দেখে একটা বিড়াল ঢুকেছে বেড়ার ভাঙা ফাঁক দিয়ে।
শকুন্তলা তাড়াতাড়ি কোলে তুলে বিছানায় বসিয়ে যখন গা মোছাচ্ছে তখন তার নজরে পড়লো গায়ে বাঘের মত ডোরা দাগ । বিড়াল নয় ,আহত একটা শিশুবাঘ।
ওরে বাবা, কী হবে এবার?
সুদর্শন বলে,মা বাঘিনী যদি পিছন পিছন আসে তাহলে মৃত্যু অবধারিত ।
ভোর হয়ে গেলেও বড় কোনো বাঘের সন্ধান পাওয়া গেল না।
সুদর্শন বললো, বৃষ্টি একটু থেমেছে। ওর ক্ষতে পানের রস লাগিয়ে দিয়েছো ; এবার চলো বনে ছেড়ে দিয়ে আসি। শকুন্তলা বললো না, কখনোই না। ও আমাদের আশ্রয়প্রার্থী অতিথি। ওকে এ অবস্থায় আমি কিছুতেই ছাড়তে পারবোনা।
তাছাড়া মনে হয় ওকে কুমির ধরেছিল। তাই গায়ে আঘাতের ক্ষত। শকুন্তলা প্রতিদিন ঈষদুষ্ণ পানের রস লাগিয়ে শিশু বাঘকে সুস্থ করে তোলে। এরপর থেকে বাঘ তাদের কাছেই থাকে। যা খেতে দেয় খায়।
একদিন কোথা থেকে একটা বড় সারস ধরে এনে উঠোন বসে খাচ্ছে দেখে শকুন্তলা আঁতকে ওঠে। সুদর্শন বলে, বাঘের বাচ্চা রক্তের স্বাদ পেয়েছে, নিজে শিকার ধরছে – বড় হয়ে আমাদের খাবে। ভয়ে তারা বনদপ্তরে গিয়ে জানায়। বনকর্মীরা এসে বাঘটাকে নিয়ে যায়।