Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » শিব মহাপুরাণ || Prithviraj Sen » Page 14

শিব মহাপুরাণ || Prithviraj Sen

একদিন শিব পার্বতীকে নিয়ে একাকাননে গেলেন। জায়গাটা দুজনের খুব ভালো লাগল।

পার্বতী শিবকে বললেন, এমন সুন্দর স্থান তিনি এর আগে দেখেননি। তিনি রাসলীলা করতে চাইছেন।

দেবীর কথা মহেশ্বর শুনে বললেন, দেবী, তোমার কথায় আমি খুশি। আমি নিশ্চয় তোমার মনের সাধ মেটাবো। একাত্নকানন আমার খুব প্রিয়। এখানেই রাসক্রীড়া করব। এবং এখানে আমি রাস করব, তাহলে দেবী রাসক্রীড়ায় জন্য অষ্টশক্তিকে সৃজন কর। আমিও অন্যমূর্তি ধরব। ষোলো জনে মিলে এই মহারাসলীলা করব।

শিবের কথামত পার্বতী বিমোহনী অষ্টশক্তি সৃষ্টি করলেন। সকলেরই রূপ অতি মনোহর, ঠোঁটগুলো লাল, বাৎসল্যে স্কুল স্তন, নাভিতে ত্রিবলী রেখা, সবার মুখমণ্ডল চাঁদের মতো। অঙ্গে নানা অলংকার। পরনে তাদের দিব্য বসন। সবার ললাটে তৃতীয় নয়ন, সেই অষ্টশক্তির নাম সুকপোলা, মায়িনী, বিন্ধ্যাগা, মোহিনী অমায়িনী উত্তরগা চন্দ্রমা আর শ্রীদ্বার যামিনী। সকলেই অপরূপা দিব্যামূর্তি ধারিণী।

অষ্টশক্তিকে দেখে এবার মহেশ্বর সৃষ্টি করলেন অষ্টমূর্তি, সবার মাথায় জটা, অর্ধচন্দ্র, তিনটি করে চোখ, পরনে বাঘছাল, নীলকণ্ঠ, গলায় ও হাতে রুদ্রাক্ষ, গায়ে ছাই মাখা, তাঁদের নাম রুদ্র, সূক্ষ্ম, বৈদ্যনাথ, একমূর্তি, শ্রীশিব, উত্তর কেদার ও ঈশান।

এই অষ্টমূর্তি দেখে দেবী খুব প্রসন্ন হলেন। তিনি বললেন–রাসক্রীড়ার জন্য একটি রাসমণ্ডপের প্রয়োজন, হে নাথ, তুমি তা এখনই সৃষ্টি কর।

মহেশ্বর দেবীকে বললেন, দেবী উতলা হয়ো না। অপেক্ষা কর, রাত্রিতেই রাসের মেলা শুরু হয়। পূর্ণিমার রাত হলে তো কথাই নেই তাই আগামী পূর্ণিমাতে হবে রাসের মেলা।

দেবী খুব আনন্দিত হলেন। শিবের কথায় কিন্তু মনে উৎকণ্ঠা হতে লাগলো যে, কখন সেই পূর্ণিমার তিথি আসবে।

কিছুকাল পরে পূর্ণিমার উদয় হলো। মনে হয় জ্যোৎস্নালোকে একাকানন সুন্দর হলো। দুজনেই খুব প্রসন্ন হলেন। হৃদয় অন্তর সদা করিছে তিন উভয়ের হৃদয়ে বাসের আবেল হল। এর পরেই মহেশ্বর রাসমণ্ডল সৃষ্টি করলেন। সেই মণ্ডপের শোভা অবর্ণনীয়। সেই মণ্ডপ দেখে গৌরীও অভিভূত হলেন।

মহেশ্বর পার্বতীকে বললেন–এস প্রাণপ্রিয়ে, অষ্টম হরের সঙ্গে রাসমণ্ডল চন্দ্রের আলোকে অপরূপা হয়েছে। এখনই রাসক্রীড়ার উপযুক্ত সময়।

দেবী বললেন, হে দেব, আমার এই অষ্টশক্তির সঙ্গে রাসক্রীড়া করে জীবন সফল কর।

দেবীর কথায় ত্রিপুরারি শিব শক্তিগুণে, আর নিজ সৃষ্টি অষ্ট মূর্তিগণে সম্বোধন করে বললেন–এক দেবী, আর এক দেব এইভাবে বার বার দাঁড়িয়ে সুন্দর মণ্ডল রচনা কর।

শিবের কথামতো ষোলোজন দেবদেবী মণ্ডলাকারে দাঁড়ালেন। আর তাদের মাঝে শঙ্কর-শঙ্করী যেখানে থেকে অন্তর্হিত হয়ে গেলেন। আমগাছের একটা শাখাব্দে আশ্রয় করে তারা গুপ্তভাবে থাকলেন।

ষোলোজন দেব-দেবী এদিকে তাদেরকে দেখতে না পেয়ে ঘুমতে লাগলেন। কেবল চন্দ্রমা রয়ে গেলেন।

তিনি কাঁদতে লাগলেন এবং বললেন–হে ত্রিপুরারি, তুমি কোথায় গেলে আমাকে ছেড়ে? তাড়াতাড়ি দেখা দাও, হে চন্দ্রবদন গৌরী তুমি কোথায় লুকিয়ে আছ? হে সুন্দরী, আমাকে দেখা দাও, আমি যেন তোমার পাদপদ্ম সবসময় দেখতে পাই। তোমাকে ছাড়া আমি যে থাকতে পারছি না।

চন্দ্রমাকে এই ভাবে কাঁদতে দেখে দেবী আর্বিভূতা হলেন এবং বললেন, তোমার ভক্তি দেখে আমি খুব খুশি। আমার সৃষ্ট অষ্টশক্তির মধ্যে তুমিই প্রধান। তুমি যেহেতু আমাকে গৌরী গৌরী নামে ডেকেছো তা হলে আমি গৌরী নামে ধরায় বিখ্যাত হব।

গৌরীদেবীর কথা শুনে চন্দ্রমা খুব খুশি হলেন। এ দিকে শঙ্কর যে অষ্টমূর্তি সৃজন করেছেন এক যোজন ব্যাপী সেই একাগ্রকানীন শক্তিগণের সঙ্গে মহানন্দ নৃত্য করতে করতে শিব শিবা যখন অন্ডহিত হলেন তখন সেই অষ্টমূর্তি তাদের অন্বেষণে চলে গেলেন। একমূর্তি রাসমণ্ডল ছেড়ে যাননি। এর মূর্তি একাই সেই বনে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে পথ হারিয়ে গেলেন। পরে দক্ষিণমুখী হয়ে বিপুদ্দর যেতেই তিনি একটা সুন্দর পর্বত দেখেন।

কিছুক্ষণ পরে কাঁদতে থাকেন একমূর্তি। হায় হায় নাথ মোরে বর্জন করে কোথায় লুকালে প্রভু দাও দরশন। আমি নিশ্চয় কোন অপরাধ করেছি, যার জন্য তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেছ। তোমাকে ছেড়ে আমি থাকতে পারবো না, এই পর্বত থেকে পড়ে প্রাণত্যাগ করব আমি।

এই বলে তিনি ঝাঁপ দিতে যাবে, তখন মহেশ্বর আবির্ভূত হন একমূর্তিকে রক্ষা করেন। তারপর বলেন তোমার মতো ভক্তি কারোর নেই। তুমি ক্লান্ত তাই এখানে থাক। এই পর্বত তোমাকে আনন্দ দিয়েছে, তাই এর নাম হবে নন্দন। রাসরঙ্গস্থল থেকে তুমি বাইরে গেলে বলে তোমার নাম হরিরঙ্গে স্বর।

এই কথা মহেশ্বর সকলের কাছে গিয়ে বললেন–দেবী ও চন্দ্রমার কথা সবাইকে বললেন, আবার শুরু হল মহানৃত্য সকলে নাচছেন, ক্রমে ক্রমে রাত্রি প্রভাত হল। রাসের মেলা তখন শেষ হল।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *