Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

শীতকালে “খেজুর ” গাছ —আর শীতের শেষে গরমে অল্প কিছুকালে “তাল” গাছ দেয় অমৃত রস । সেই রস থেকে খেজুর “পাটালি” ও তাল পাটালি। তাল পাটালি সাদা ধবধবে সুগন্ধি , আর খেজুর পাটালি আর কে না জানেন তার রূপ গুণের খবর । এই গাছ কেটে রস বার করার কাজ যারা করেন তাদের বলে ” শিউলি “।

কিন্তু আমরা জানতাম ও বলতাম “গাছি”। আমার দিদিমার বাড়িতে অনেক খেজুর গাছ ছিল। বাগানের পূবদিক ধরে সার সার বাড়ির সীমানা নির্দেশে ও তার পেছনে কাঁচা নর্দমা । আর একটা ছিল বাগানের মাঝখানে। অগ্রহায়ণ মাসের প্রথমেই গাছিরা ঠিক হানা দিতো বাড়িতে, ডাকতে হতো না। অনুমতির তোয়াক্কাও ছিল না। শুধু গাছ কাটছে তাই যেন জানানো।

চার দিন হাঁড়ি বেঁধে রস সংগ্রহ আর তিন দিন জিরেন । কাক পক্ষীরা ঘুমোতে যাবার পর গাছে হাঁড়ি বাঁধতে হবে আবার খুব সকালে কাকভোরে নামিয়ে নেওয়া অর্থাৎ ওরা যাতে হাড়িতে মুখ নামিয়ে রস খেয়ে উচ্ছিষ্ট না করে। কাজটি লিখতে বেশ সহজ লাগছে আদতে কি তাই? না আদতে তা নয়, সব পাখিরা ভোরবেলা ঘুম ভেঙ্গে অনেকক্ষণ ডাকাডাকি করে ( বিছানায় শুয়ে কিছু আলসেমি আর কি ) তারপর তারা খাদ্য সন্ধানে উড়ে এদিক ওদিক যায়। ঐ সময়ের মাঝে হাঁড়ি নামানোর কাজটি সমাধা করতেই হবে।

সেই শীতের কাকভোরে মা নগ্ন পায়ে ভুষোওঠা লণ্ঠন হাতে উঠোনে গাছিদের নির্দেশ দিতেন রস ঢালাঢালি দুভাগে করার নীতিরীতিতে। অনর্গল গাছিদের ও মায়ের বাক্ বিতণ্ডায় রোজ আমাদের ঘুম ভেঙে যেতো । গাছিরা অর্ধেক রস নিয়ে চলে যেতো আর আমরাও আবার ঘুমিয়ে পড়তাম ।

আর আমার দিদিমা (মা) যিনি সকলের “বড়োমা” ছিলেন, সেই সকাল থেকে রস নিয়ে পরবর্তী কাজে মেতে উঠতেন । কোন্ গাছের রস কেমন স্বাদ -গন্ধ কোন রস সবাই কাঁচা খাবে সকালে উঠে, কোন্ রস নলেন গুড় হবে, সে সব মা জানতেন । এক উনুনে সারাদিন রস জ্বাল হতো।

আমি সকালে উঠেই এক গ্লাস ঠান্ডা মিষ্টি স্বাদ গন্ধের লালচে রস খেতাম। জিরেনের প্রথম দিনের রসকে বলা হতো “জিরেন রস” স্বাদে গন্ধে রঙে অতুলনীয় । যেদিন বেলা হতো উঠতে মা বারণ করতেন খেতে আমি তবু খেতাম তখন এক ঝিনঝিনে স্বাদ পেতাম জিভে। হ্যাঁ, এখানেই ত আমার রসায়ন আবার লুকিয়ে । এইখানেই গাছিদের এত উৎসাহ। ” তারি” তৈরি হতো —রস থেকে মদ, বিনা আয়েসে, শুধু সূর্য উঠবার অপেক্ষা ও আতপে ফেলে রাখলেই হলো ।
airborne enzyme “yeast ” ( sort of bacteria, Eukaryote) ও রোদ্দুরের তাপ প্রভাবে কিছু পরিমান sugar পরিণত হতো alcohol ও carbon dioxide এ , যার বুদ্ বুদ্ উঠত মানে fermentation …….. এটা রসায়ন না পড়লেও সকলে বুঝবেন। তালের রস থেকেই “তারি” । সাদা “তারি” এক প্রচলিত ঘরোয়া মদ।

খেজুর রস সামাল দেয় গুড় পাটালি। কিন্তু গাছিরা তাতে কি সন্তুষ্ট ? ওদের কাছে গেলে একটা কেমন গা-গুলান মিষ্টি গন্ধ পেতাম আসলে ওটা ঐ yeast ব্যাক্টিরিয়া ও অ্যালকোহলের গন্ধ । গাছিরা সর্বদা নেশা করে থাকত, চোখ গুলো জবা ফুল লাল , পা টলমল। মাঝে মাঝে সন্ধ্যাবেলা মা বলতেন, ” সাবধান, গাছ থিকা পইড়া যাস নি আবার”!!

সে সাবধান বাণী শুনলেও অঘটন কিন্তু প্রায়ই ঘটত। কোমড়ে দড়ি বার বার খুলে ও বেঁধে একটু একটু করে খেজুর গাছে উঠতে হয়। তাই বেসামাল হলেই ঝপাং করে একেবারে নর্দমার জলে পড়ে কর্দমাক্ত । খুব সাধারণ নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা ।

অগ্রহায়ণ, পৌষ, মাঘ , এই তিন মাস তারা ছিল রসের কারবারি , মালিকদের সাথে আধা-আধি প্রথা দস্তুরে। বাকি সময় তারা কি করত জানতাম না।

গরমে হতো খেজুর কিন্তু তেমন মাংসাশী সুস্বাদু খেতে নয়। দেখতে দারুণ কাঁচা থেকে পাকা এক গাছেই থোকা থোকা ঝাড়। গাছিরা মাঝে মাঝে পাড়তে আবার আসত।

মিশর ভ্রমণে দেখেছি “আলেকজান্দ্রিয়া”তে খেজুর বাগান —-আঃ, রূপে রসে অভাবনীয় । টুকটুকে লাল পাকা খেজুর ,গাছে। ঐ খেজুর গাছে রস হতো না, সে পাট নেই তাই গাছ গুলোর নিপুণ নিটোল শরীর ।

রসের জন্য গাছিদের এক প্রশিক্ষণ ছিল, প্রতিবছর বিপরীতমুখী গাছ ছেঁচে হাড়ি বাঁধত । দুপুরেও রস গড়িয়ে পড়ত , নীচে মৌমাছি ও নীলমাছিরা ভন ভন , ভেজা ও আঠালো। আলাদা হাড়ি বাঁধা দুপুরে, কাক ও পাখিরা সকলেই খেতো । সে রস গাছিদের ফাউ বা বোনাস। মা নিতেন না। মায়ের একনিষ্ঠ ও ঐকান্তিক পরিশ্রমের ফসল আমরা উপভোগ করতাম। তারপর আর কিছু নেই—– এখন এক —-” মন কেমন করা অশান্ত স্মৃতি” ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress