শিউলি বিছানো পথে প্ৰতিদিন সকালে হাঁটতে হাঁটতে মনে পড়ে তোমাকে
কি ভীষণ ভালবাসতে শিউলি তুমি।
একটি ফুলও এখন আর হাতে নিই না আমি, বড় দুৰ্গন্ধ ফুলে।
আমি হাঁটছি, হেঁটে যাচ্ছি, কিন্তু হেঁটে কোথাও পৌঁছোচ্ছি না।
কোথাও পৌঁছব বলে আমি আর পথ চলি না। কোনও গন্তব্য, আগে যেমন ছিল, নেই। অপ্ৰকৃতহের মত দক্ষিণে উত্তরে পুবে পশ্চিমে হাটি, হাঁটতে হাঁটতে অবশেষে কোথাও ফিরি না। আমি।
এখন তো কোথাও কেউ আর আমার জন্য অপেক্ষা করে নেই।
এখন তো এমন কোনও কড়া নেই যে নাড়ব আর ভেতর থেকে তুমি খুলে দেবে দরজা।
এখন তো কেউ আমাকে বুকে টেনে নেবে না। সে আমি যেখান থেকেই ফিরি সুড়িখানা থেকে কী
বেশ্যাবাড়ি থেকে কী নর্দমা থেকে কী চুরি ডাকাতি করে কী মানুষ খুন করে।
শিউলি বিছানো পথে প্ৰতিদিন বিকেলে হাঁটতে হাঁটতে মনে পড়ে তোমাকে
কি ভীষণ ভালবাসতে তুমি শিউলি।
ফুলগুলো আমি পায়ে পিষে পিষে হাঁটি। তুমি ভালবাসতে এমন কিছু ফুটে আছে কোথাও দেখলে
বড় রাগ হয় আমার।
গোলাপ কী রজনীগন্ধা কী দোলনচাপা কী আমি।
এদের আমি দশানখে ছিঁড়ি,
দাঁতে কাটি, আগুনে পোড়াই। তুমিই যদি নেই, এদের আর থাকা কেন!
তুমি ছিলে বলেই না গোলাপে সুগন্ধ হত,
তুমি ছিলে বলেই এক একটি সুযোদয় থেকে কণা কণা স্বপ্ন বিচ্ছরিত হত,
তুমি ছিলে বলেই বৃষ্টির বিকেলগুলোয় প্রকৃতির আঙুলে সেতার এত চমৎকার বাজত।
তুমি নেই, বৃষ্টি আর পায়ে কোনও নুপুর পরে না,
স্নান সেরে রূপোলি চাদরে গা ঢেকে আকাশে চুল মেলে দিয়ে আগের মত চাঁদও আর গল্প শোনায় না।
তুমি নেই, কোনও গন্তব্যও নেই আমার। কোনও কড়া নেই, কোনও দরজা।
হেঁটে হেঁটে জীবন পার করি। কাঁধের ওপর বিশাল পাহাড়ের মত তোমার না থাকা।
গায়ে পেঁচিয়ে আছে তোমার না থাকার হা—মুখো অজগর।
পায়ের তলায় তোমার না থাকার সাহারা,
পুবে পশ্চিমে দক্ষিণে উত্তরে হাটছি। আমি, আমার সঙ্গে হাঁটছে বিকট তোমার না-থাকা।
যত হাঁটি দেখি পথগুলো তত শিউলি ছাওয়া
তুমি সে যে কি ভালবাসতে শিউলি
কি দরকার আর শিউলি ফুটে, যদি তুমিই নেই!
কি দরকার আর ফুলের সুগন্ধে, তুমিই যদি নেই!
কি দরকার আমার!