লেখা-পড়া
” লেখা পড়া করে যে, গাড়ি ঘোড়া চড়ে সে”।
– প্রবাদ।
(মানে যে লেখা-পড়া করে, সে জীবনে প্রগতিশীল থাকে।)
[ক].
————————-
পড়ার দশ ধাপ
————————-
১).
প্রতিদিন অল্প হলেও কিছু পড়ুন। পড়াকে অভ্যাসে পরিণত করুন।
২).
বই পড়ে প্রতিদিন কিছু না কিছু লিখে রাখুন।
৩).
যথাসম্ভব বুঝে নিয়ে পড়ায় এগিয়ে যান, নির্বাচিত বই পড়ুন।
৪).
বই দাগিয়ে পড়ুন (আপনার জন্য বই, আপনি বইয়ের জন্য নন)। বিভিন্ন রংয়ের কলম, পেন্সিল, মার্কার কিংবা হাইলাইটার ব্যবহার করতে পারেন।
৫).
পড়ার সময় বারবার অভিধানে শব্দ খুঁজতে যাবেন না। এই অভ্যাস বই পড়ায় বাধা সৃষ্টির করে। যে শব্দগুলি না দেখলেই নয় শুধুমাত্র সেই শব্দগুলিই দেখুন।
৬).
সাথে ডায়েরি রাখুন। পড়ে যা গুরুত্বপূর্ণ মনে হবে, তা ডাইরীতে তৎক্ষণাৎ লিখে রাখুন। গুরুত্বপূর্ণ শব্দ, বাক্যাংশ, বাক্য কিংবা মননশীল লাইনগুলি লিখে রাখুন। কিংবা লেখাটি পড়ে যা মনে হলো আপনার, তাও লিখে রাখতে পারেন।
৭).
দুই- তিন দিন টানা পড়ার একদিন বিরতি দিন। সেদিন চিন্তার সাগরে ডুব দিন। যা পড়েছেন তাই নিয়ে ভাবুন। ভাবনা আপনাকে দিকদর্শন দেবে,ভাল লেখক তৈরি করবে।
৮).
বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে অন্যের সাথে সুযোগ থাকলে আলাপ আলোচনা করুন।
৯).
মজার কিংবা গুরুত্বপূর্ণ বই হলে, তার কোন অংশ না ফেলে রেখে, কষ্ট করে হলেও টানা পড়ে শেষ করুন।
১০).
সময় করে বইটি নিয়ে আপনার মতামত বিস্তারিত লিখে ফেলুন।
বইয়ের রিভিউ একটা চমৎকার দলিল। কোনও বই দ্বিতীয় বার পড়ার আর সুযোগ না হলে, রিভিউ দেখে তার সারমর্ম উদ্ধার করা সহজ হবে। দশ-বিশ বছর পর সেটা একটা চমৎকার নোট হতে পারে।
[খ].
———————————————-
লেখার দশ কান্ড
———————————————-
শীর্ষ দশজন লেখকের দশটি পরামর্শ
———————————————-
[]
লেখক হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় খাতা কলম নিয়ে চা-কফি গলায় ঢেলে একটার পর একটা সিগারেট-গাঁজা ফুঁকে যুতসই একটা শব্দ লিখতে না পেরে বসে বসে মাথার চুল ছেঁড়েন, এমন লোকের সংখ্যাও নেহাৎ কম নয়। পৃথিবীর অনেক দেশে রয়েছে কবিতা লেখার কোর্স। এমনকি বিশ্বের অনেক বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়েও নানা ধরনের কোর্স চালু আছে সাহিত্যিক হওয়ার জন্য। খোদ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় পর্যন্ত একবার কবিতা লেখার এমন এক কোর্স চালু করেছিলেন ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকার তরফ থেকে।
টিপসগুলো তবে বলেই ফেলি। এসব টিপসগুলি, বিখ্যাত সব লেখকরা অনুসরণ করে ভাল ফল পেয়েছেন, আপনি যে পাবেন না, এমন কথা কোথাও বলা হয়নি। তবে আর দেরি না করে, দেখে নেই বিখ্যাত সব লেখকদের লেখার পিছনের অদ্ভুত সব কীর্তি-কাণ্ড!
১).
বিশ্ব বিখ্যাত রুশ লেখক ‘লিও টলস্টয়’-এর মতে, ’আমি সব সময় সকালে লিখি। পরে আমি জেনে খুশি হয়েছি যে, রুশোও ঠিক একই কাজ করতেন।’ সকালে সাধারণত যে কারও মন মেজাজই ঝরঝরে থাকে। সবচেয়ে ফলপ্রসূ ভাবনাটা বেশিরভাগ সময় সকালেই আসে।
২).
নিউজিল্যান্ডে বড় হওয়া ইংরেজি ভাষার ছোটগল্প লেখিকা ‘ক্যাথরিন ম্যান্সফিল্ড’-এর মতে, ‘অতীতে তাকিয়ে আমি ভাবি, আমি সবসময় লিখছি। যদিও অর্থহীন কথাবার্তা, কিন্তু কিছু না লেখার থেকে
অর্থহীন কথাবার্তা লেখাও অনেক ভাল।
৩).
নোবেল ও পুলিৎজার পুরস্কারে ভূষিত আমেরিকান লেখক ‘উইলিয়াম ফকনার’-য়ের মতে – ‘কি বলেছেন, কি লিখেছেন নিজেই তা পড়ুন,পড়ুন, পড়ুন। এবং সবকিছু পড়ুন-বাজে, ধ্রুপদী, ভালো, মন্দ, এবং কীভাবে লেখা হয়েছে তা দেখুন। ঠিক একজন ছুতোরের মতো, যে শিক্ষানবিশের কাজ করে, এবং গুরুর কাজকে অধ্যয়ন করে। পড়ুন! তবেই আপনি অনুধাবন করবেন। তারপর লিখুন। লেখা ভালো হলে আপনি নিজেই বুঝবেন। আর না হলে, নির্দিধায় ডাস্টবিনে ফেলে দিন।’
৪).
ম্যান-বুকার পুরস্কার বিজয়ী ইংরেজ লেখিকা ‘হিলারি ম্যানটেল’-এর মতে, ‘লেখকের জন্য সবচেয়ে উপকারী স্বভাব হচ্ছে আত্মপ্রত্যয় তথা আত্মতুষ্টি লালন করা, যদি তা সামাল দিতে পারেন। আপনি নিজেকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে চান, এবং সেজন্য আপনার কাজ সম্পর্কে আপনারই আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে, এমনকি যখন কেউই আপনার সাথে একমত হবে না তখনও।’
৫).
‘হেমিংওয়ে’-র পরামর্শ শুনতে একটু অদ্ভুত ঠেকতে পারে, কিন্তু কি আর করা যাবে, এমন একজন লেখকের কথা তো আর ফেলে দেওয়া যায় না। তিনি বলেছেন, ‘গল্পটা ভাল মতো তরতর করে এগোতে থাকলে লেখা থামান , এবং এ নিয়ে পরের দিন লেখা শুরুর আগে ভাববেন না। এতে আপনার অবচেতন মন সব সময় লেখাটি নিয়ে ভাববে। কিন্তু আপনি যদি সচেতনভাবে লেখাটি নিয়ে ভাবেন, অথবা দুঃশ্চিন্তা করেন, তবে ওটা মরে যাবে, এবং লেখার আগেই আপনার মাথা ক্লান্ত হয়ে পড়বে।’
৬).
একজন চিত্রনাট্যকার ও চলচ্চিত্র পরিচালককে ধরা যাক। আমেরিকার লেখিকা ‘মিরান্ডা জুলাইয়’-এর মতে, ‘প্রথম উপন্যাস লেখার সময় নিজেকে সবচেয়ে বাজে লেখক মনে হত। তখন মনে হয়নি, আমি প্রথম খসড়া লিখছি। কিন্তু প্রথম খসড়া লেখার পর মনে হতো বাকি সবকিছু তুলনামূলকভাবে সহজ কাজ।’
৭).
ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক ও ছোট গল্প লেখিকা ‘জাডি স্মিথ’-এর মতে, ‘ইন্টারনেট সংযোগ নেই, এমন কম্পিউটারে বসে আপনাকে লিখতে হবে। যে গল্প আপনি কখনও শেষ করতে পারবেন না, তা বাদ দিন। বরং চার’শো পাতা নিন এবং প্রতিদিন একপাতা করে লিখুন।’
৮).
লেখক হওয়ার পরামর্শ দিতে গিয়ে অনুরূপ কথাই (লেখিকা জাডি স্মিথের কথাগুলি) বলেছিলেন নোবেল ও পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী আমেরিকান সাহিত্যিক ‘জন স্টেইনব্যাক’।
৯).
বিশ-শতকের একজন সেরা আমেরিকান লেখক ‘এফ স্কট ফিটজেরাল্ড’, যার লেখনিতে জ্যাজ সংগীতের শুরুর দিককার আমেজ পাওয়া যায়। তার মতে, – ‘লিখতে হলে, এটা খুবই পরিস্কার বিষয় যে, বড় কিছু বিষয় নিয়ে লিখতে গেলে কোন রকম উত্তেজক পানীয় কিংবা মদ পানকরা অবস্থায় লেখা চলবে না। তাতে ছোটগল্প হয়তো লেখা গেলেও, উপন্যাসের জন্য আপনাকে নিরন্তর মাথা খাটাতে হবে এবং এ’জন্য অবশ্যই ত্যাগ স্বীকার করতে হবে (সমরেশ বসুও এটা মনে করতেন)।
১০).
হেমিংওয়ের পরামর্শ যদি অদ্ভুত লেগে থাকে তবে ‘মুরিয়েল স্পার্কে-এর কথায় আপনি হয়তো ভিরম খাবেন, কিংবা কিঞ্চিত বিস্মিতও হতে পারেন। স্কটিশ ঔপন্যাসিক, ছোট গল্প লেখক, কবি ও প্রাবন্ধিক মুরিয়েলের মতে লেখক হতে হলে নাকি বিড়াল পুষতে হবে। আর তাতেই নাকি কলম দিয়ে ঝরঝর করে লেখা বেরোতে থাকবে।
‘লিখতে হলে বিড়াল পুষতে হবে। একটি ঘরে বিড়ালের সাথে একা…… বিড়ালটি লেখার টেবিলে উঠে টেবিলে রাখা বাতির নিচে বসবে। বাতির আলো বিড়ালকে বেশ তুষ্ট করে। বিড়াল তখন প্রশান্ত হবে, এ প্রশান্তি দেবে অনুধাবন ক্ষমতা। বিড়ালের এ প্রশান্তি আপনাকে ধীরে ধীরে আবেশিত করবে, আপনি ফিরে পাবেন আত্ননিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা । আপনাকে শুধু সব সময় বিড়ালটির দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। মনোযোগের উপর বিড়ালের প্রভাব চমকপ্রদ, এবং রহস্যময়।’ ভাবতে পারেন ‘মুরিয়েল স্পার্কে-এর কথা?