Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » লিজা ম্যাকলিন || Sankar Brahma

লিজা ম্যাকলিন || Sankar Brahma

একদিন বিকেলবেলা বাংলো থেকে বেরিয়ে করলা নদীর পার ধরে অলস মনে হাঁটতে হাঁটতে শশ্মান পার হয়ে অনেকটা সামনে এগিয়ে গেলাম । এ’দিকটা খুব নির্জন। আস্তে আস্তে হাঁটছি আর দু’পাশে তাকিয়ে দেখছি । এই সময় দেখতে পেলাম অদূরে সামনে প্রাসাদের মতো পোড়ো বাড়ি । ভেঙে চুড়ে যাওয়া লোহার গেটটা দিয়ে ভিতরটা দেখা যাচ্ছে। বিশাল ঘেরা জায়গার মাঝখানে দোতলা বাড়িটা দাঁড়িয়ে। সামনে বাগান । যদিও এখন বুনো দুই একটা ফুল গাছ ছাড়া আর কোন গাছ নেই। বাগানটার পরেই বাড়িটার সামনে উঁচু উঁচু কয়েকটা দেবদারু গাছ । এত সুন্দর বাড়িটা বাইরে থেকে দেখে ভিতরে যাওয়ার লোভটা আর সামলাতে পারলাম না । আমি আস্তে আস্তে গেট পেরিয়ে, ক্ষয়ে যাওয়া ইটের রাস্তা দিয়ে ভিতরে গিয়ে ঢুকলাম। বাড়িটার সামনে বিশাল লম্বা বারান্দা । বারান্দার পরে সেগুন গাছের তিনটা দরজা । দুই পাশের দুটি দরজা, মাঝখানের দরজাটির চেয়ে ছোট ।
মাঝখানের দরজাটি প্রায় দশ বারো ফুট উঁচু । দরজায় চমৎকার নকশা কাটা । ঝড় বৃষ্টিতে দরজার রঙগুলো ম্লান হলে গেলেও, দেখে বোঝা যায় দরজাগুলো এখনও খুব মজবুত। বিশাল বিশাল আটটা জানালা । সেগুলো বন্ধ। দোতালায়ও বারান্দা আছে সেখানে কাঠের নকশাদার রেলিং। রেলিং গুলো কালো রঙের দেখে বোঝাই যায় ওগুলো গর্জন কাঠের। এগুলো দারুণ শক্ত । বাড়ির ছাদটা টিনের চালের মতো লাল রঙের সিরামিক ইটের টালী দিয়ে ছাওয়া । ইঁটের লাল রঙের জৌলুসটা এখন আর নেই । আমি একমনে এসব দেখছি আর ভাবছি, কী সুন্দর বাড়িটা !
একটু বাঁয়ে ঘুরে সামনে এগিয়ে যেতেই বুকের ভিতর হৃৎপিন্ডটা হঠাৎ লাফ দিয়ে উঠল । নারী কন্ঠে কে যেন আমাকে বলল ? কাকে খুঁজছেন?
পিছনে ফিরতেই দেখি বরফ সাদা রঙের শাড়ি পরা লম্বা, পাতলা রমণীয় চেহারার এক অপূর্ব সুন্দরী তরুণী।
আমি অনেকটা হতবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম । তরুণী আবার আমাকে প্রশ্ন করল, কাকে খুঁজছেন ? আমি দ্রুত নিজেকে সামলে নিলাম। হেসে বললাম কাউকেই না।
– তবে?
– রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে এই সুন্দর নির্জন বাড়িটা চোখে পড়ল। তাই ভিতরটা একটু ঘুরে দেখতে এসেছি।
তরুণীটি এবার ফিক করে হেসে ফেলল।
বলল, আপনি যেভাবে বাড়িটা মনোযোগ দিয়ে দেখছিলেন। এই পুরাতন বাড়িতে তেমন আর দেখার কি আছে ? আমি অনেকক্ষণ এসেছি আপনার তন্ময়তা দেখে আর ডাকিনি ।
– আপনি ?
– আমি ? আমি এই বাড়িতে থাকি। নাম লিজা ম্যাকলিন।
আমি অবাক হয়ে গেলাম। বললাম, আমি যতটুকু শুনেছি , এই বাড়িতে কেউ থাকে না
– আপনি ঠিকই শুনেছেন । আমি দু’দিন আগে লন্ডন থেকে এসেছি বাড়িটা বিক্রির ব্যাপারে।
আপনি ?
– আমি আপনাদের স্থানীয় কেউ না, থাকি কলকাতায়। আমার নাম শংকর ব্রহ্ম ।
– সে আপনার ভাষার উচ্চারণ শুনেই বুঝেছি আপনি শহরের লোক।
-আপনিও তো সুন্দর বাংলা বলেন।
– হ্যাঁ এখানে তো আমি বহুদিন ছিলাম। তা, এখানে এলেন কিভাবে ?
– বেড়াতে
– ও। চলুন ওদিকটায় যাওয়া যাক ।
– কোথায় ?
– বাহ ! বাড়ির সামনেটাই দেখবেন আর পিছনের দিকটা দেখবেন না?
– পিছনটাও দেখা যাবে, তাহলে তো ভালই হয়। বললাম আমি।
তরুনী আগে আগে চলতে লাগল , আমি তার পিছনে পিছনে। সাদা শাড়িতে মোহনীয় দেখাচ্ছে তাকে। সরু কোমরের নীচে শাড়ির আচল বাতাসে উঠছে আর নামছে। শাড়িটি এমন ভাবে পরেছে যাতে তার পা দু’টি এতটুকুও না দেখা যায়। বাড়ীর পিছন দিকে এসে আমি তো আরও অবাক হয়ে গেলাম। বিশাল এক দীঘি। টলটলে সচ্ছ তার জল। পাড়ের চারদিকে বড় বড় অনেক উঁচু নারকেল গাছ দুই একটা তাল গাছও আছে। দীঘির পাড়ে শানবাঁধানো একটি বড়সড় ঘাট, বসার ব্যাবস্থা আছে। তবে সেখানে এখন পুরো শ্যাওলার আস্তরণ পড়ে আছে।
– চলুন একটু ঘাটে বসি । এখানে দীঘির হিমেল বাতাসে শরীর জুড়িয়ে নিয়ে তারপর ভিতরে যাব । বলেই সন্মোহনী হাসি হাসল সে । আমি মনে মনে তাই চাইছিলাম। তাই আর কোন কথা না বাড়িয়ে ঘাটের সিঁড়িতে গিয়ে বসলাম। তরুণী এসে পাশে বসল। প্রথম দেখাতেই সে যেভাবে নিসংকোচে আমাকে তার এতটা কাছে আসার সুযোগ করে দিয়েছে , তা দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম। বিস্ময়বোধ জাগছে মনে। হয়তো এটা সম্ভব হয়েছে ইউরোপের মতো মুক্তমনা পরিবেশে থাকার ফলে, মনে মনে ভাবলাম।
– কি ভাবছেন? আমাকে নিয়ে ভাবছেন না তো আবার? আমি চমকে উঠলাম । আমার চমকে উঠা দেখে লিজা চুড়ি ভাঙা-শব্দে রিনঝিন সুরে হেসে উঠল।
– কি ? আমি ঠিক বলেছি, তাই না?
আমি অস্বীকার করতে পারলাম না । তাই মাথা নেড়ে বললাম, হুম। তরুণী কপট রাগ দেখিয়ে বলল কাজটা আপনি ঠিক করেননি ।
– কেন?
– কারণ আমাকে নিয়ে যারাই ভাবে, তারা ডুবে মরে । আমি অবাক হয়ে বললাম, ঠিক বুঝলাম না।
– মানে আমার প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে ডুবে মরে,
এই বলে লিজা আরও লাস্যময়ী ভঙ্গীতে হাসতে লাগল ।
নির্জন এই দীঘির পাড়ে তার হাসির তরঙ্গে আমি মোহগ্রস্ত হয়ে ভেসে যেতে যেতে,যেন এক অশুভ ইঙ্গিত পেলাম । হাসি থামিয়ে লিজা সিঁড়ি বেয়ে নীচে দীঘিতে নামতে নামতে বলল, আসুন হাত মুখ ধুয়ে নিন। তারপর বাড়ির ভিতরটা গিয়ে দেখবেন । আমি সিঁড়ি দিয়ে নেমে,পায়ের গোড়ালী ডুবিয়ে জলে দাঁড়ালাম ।লিজাও তাই করলো।
নীচে জলে ডোবা পায়ের দিকে তাকাতে গিয়ে দেখতে পেলাম লিজার শাড়ি জলে ভেসে উপরে উঠে গেছে , ওর পায়ের পাতা দেখা যাচ্ছে স্পষ্টভাবে । ওর পা দেখে ভয়ে চমকে উঠলাম । লিজার পায়ের গোড়ালী দেহের সামনের দিকে, আর পায়ের আঙ্গুলগুলো দেহের পিছন দিকে । আমার চমকে উঠা দেখেই লিজা বুঝে ফেলল আমি ওর পায়ের আকৃতিটা দেখে ফেলেছি । তখন সাথে সাথে ও আমাকে জাপটে ধরল । আমি দেখতে পেলাম ওর দু’চোখ দিয়ে নির্মম নৃশংসতা ঠিকরে বেরোচ্ছে । তীক্ষ্ণ এক অপার্থিব কন্ঠে চিৎকার করে সে আমাকে নিয়ে দীঘির জলে ঝাঁপিয়ে পড়ল। জলে ডুবে যাওয়ার শেষ মূহূর্তে আমি দেখতে পেলাম কে যেন ঘাটে এসে দাঁড়িয়েছে।

প্রায় তিনদিন পর আমার হুঁশ ফিরল। দেখতে পেলাম একটি মাটির ঘরে শুয়ে আছি আমি। চোখ খুলতেই দেখতে পেলাম এক বুড়িকে । যে আমাকে বাঁচিয়েছে। গরু খুঁজতে বেরিয়ে গরু না পেয়ে, ঘাটের দিকে যেতেই আমাকে সে আমাকে ডুবো যেতে দেখে, তারপর সে নিজেই জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে আমাকে উদ্ধার করে। পরে আমাকে নিয়ে এসে তার ঘরে তুলেছে। উঠে বসতে চাইলেই সে আমাকে জোর করে আবার শুইয়ে দিল। আবার কখন আমি ঘুমিয়ে পড়লাম । তারপর দিন সকালে মোটামুটি সুস্থ বোধ করলাম। আমি এবার আর নিজের কৌতূহল ধরে রাখতে পারলাম না।
বুড়িকে জিজ্ঞাসা করলাম, কি হয়েছিল আমার?
বুড়ি তখন বলল, আপনি এক পিশাচীর পাল্লায় পড়েছিলেন। পিশাচী মানে এক নারী প্রেতাত্মা । এরা গভীর জঙ্গলে, নদী কিংবা দীঘির ধারে থাকে। এরা বেশির ভাগ সময় উলঙ্গ নারীর বেশ ধরে যুবক পুরুষদের আকৃষ্ট করে । এরা খুবই নিষ্ঠুর প্রকৃতির। এরা পুরুষদের নৃশংস ভাবে হত্যা করে । আপনার আগেও অনেক লোক ওই দীঘির জলে ডুবে মারা গেছে। কিন্তু আমরা এলাকার লোকেরা কেউ জানতে পারিনি কিভাবে মারা গেছে। এখন আপনার এই ঘটনায় সব ব্যাপারটা পরিস্কার ভাবে বোঝা গেল। আপনি খুব জোর-বাঁচা বেঁচে গেছেন।
আমি বুড়ির দিকে তাকিয়ে কৃতজ্ঞতার হাসি হাসলাম। কিন্তু লিজা ম্যাকলিনকে ভুলতে পারলাম না ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress