Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » লড়াই || Soma Bhattacharyya

লড়াই || Soma Bhattacharyya

লড়াই

বছর পনেরো বয়স বুবানের,ক্লাস নাইনের ছাত্র। পড়াশোনায় খুব একটা মন বসে না, স্কুল বা কোচিং এ স্যার দিদিমণিদের কথা মনে হয় একঘেঁয়ে ঘ্যান ঘ্যান।
বিকালে খেলার মাঠে সময়টা বরং ভালো কাটে বন্ধুদের সঙ্গে। আজকাল পড়ার সময় হিন্দি গান গাইতে ইচ্ছে করে মনে মনে। সাইকেল নিয়ে ঘোরার সময় একটা মুখ বারবার ভেসে ওঠে। মাঝে মধ্যে সেই মেয়েটা মানে টিনা মুচকি হেসে চলে যায়।
নিম্নবিত্ত পরিবারে অভাব অনটন নিত্য সঙ্গী।মা বাসন মাজতে মাজতে প্রায়শই চিৎকার করে: মরণ হয় না আমার কেন জানি না,এত লোক মরে,হাভাতের সংসারে খেটেখেটে হাড়মাস কালি হয়ে গেল। তখন বুবানের হিন্দি গানেগুলো কেমন যেন বেসুরো মনে হয়। কখনো কখনো জলখাবাররে মুড়ি চিবোতে চিবোতে বুবান বলে মা একদিন লুচি ভেজে দেবে, তোমার হাতের লুচি আলুর দম খুব ভালো লাগে। অনেকদিন বায়না করার পর একদিন লুচি আসে, আনন্দে অনেকগুলো খেয়ে ফেলে বুবান , হাত ধুতে গিয়ে দেখে মা বাসি রুটি খাচ্ছে ।বুবান মাকে জড়িয়ে ধরে বলে তুমি আমাকে সবগুলো দিয়ে দিলে কেন মা? আমি বুঝতে পারিনি তোমার থাকবে না।
মা হেসে আদর করে বলে তুই খেলেই আমার খাওয়া হবে বাবা, এমনিতেই আমার আজকাল অম্বল হচ্ছে, বুকে ব্যাথা… না না কিছু না,তুই পড়তে যা।বুবান বলে শরীর খারাপ হলে ডাক্তার দেখাও মা,অসুখ জিইয়ে রেখো না।
মা বলে তুই যা,ও কিছু না।বুবান পড়তে যায় সাইকেল চালিয়ে,টিনা ওদের সঙ্গে পড়ে,আজ বুবানকে চুপচাপ দেখে বলে আয়ুষ পেন্সিল এনেছিস? আমি ভুলে গেছি,বুবান উৎসাহে পেন্সিল বাড়িয়ে দেয়। অঙ্কের মাথা খুলে যায়,ম্যাডাম হেসে বলেন আজ সব অঙ্ক ঠিক আয়ুষ,মন দিয়ে পড়াশোনা কর ফাঁকি না দিয়ে বুঝলি।বুবান ঘাড় নাড়ে।
বাড়ি ফিরে রেডি হচ্ছে স্কুল যাবার জন্য এমন সময় বাবা বাড়ি ফিরে ঠাকুমাকে বলছে মা আবার কারখানায় স্ট্রাইক,এই মাসটা চলবে কি ভাবে কি জানি!বুবান স্কুলে রওনা দেয়, পড়াশোনায় মন বসে না। টিফিনে জল আনতে গিয়ে একটা ছেলের সঙ্গে ধাক্কা লাগতে ছেলেটি বাজে গালাগালি দেয়,বুবান এক ঘুঁসি চালায়, একজন মাস্টারমশাই দুজনকে প্রধান শিক্ষকের ঘরে নিয়ে যায়, দুজনের অভিভাবকদের দেখা করতে বলেন প্রধান শিক্ষক।
বাড়িতে ফিরে দেখে পাড়ার সোহম কাকুর সঙ্গে মা খুব গল্প করছে ,বুবানের এই লোকটাকে একদম পছন্দ নয় , মাঝে মধ্যে আসে বাড়িতে।বুবান বলে কাকু বুড়োদাদু আপনাকে মোড়ে খুঁজছিল একবার দেখা করে যান।
লোকটি চলে গেলে মাকে বলে তুমি এভাবে গল্প করছো কেন? মা ঝাঁঝিয়ে বলে ওঠে একটু কথা বললেও দোষ,তোর বাবা যখন রাতে মদগিলে চিৎকার করে তখন কি করিস! বুবান বলে আমি বাবাকে বোঝাবো,আর তুমি জানো না ঐ লোকটা অন্য মেয়েদের সাথেও অসভ্যের মতো রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গল্প করে, বন্ধুদের কাছে ওর নামে অনেক বাজে কথা শুনি, আমি এখন ভালো মন্দ বুঝতে শিখেছি , আমি চাই না কেউ তোমার নামে বাজে কথা বলুক। মা চুপ করে থাকলে বুবান বলে আমি তোমার সঙ্গে গল্প করবো, বড়ো হলে দেখো তোমায় ঠিক বেড়াতে নিয়ে যাব। মায়ের চোখ জলে ভরে ওঠে, বলে তাই যেন হয় বাবা। রাতে গার্জেনকলের কথা বলতে ভূষণবাবু বুবানকে মারতে থাকে ,বুবানকে আটকাতে গেলে মাকে হাত দিয়ে ছিটকে ফেলে দেয় বাবা। পড়ে গিয়ে কাবেরী দেবী জ্ঞান হারান। বুবান, ভূষণবাবু জলের ছিটা দিয়ে ও জ্ঞান না ফেরায় স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যায়, ডাক্তারবাবু দেখে একটি ইনঞ্জেকশান দেন,জ্ঞান ফিরে আসে কাবেরীর।
পরদিন বেশ কিছু পরীক্ষা করাতে হবে মায়ের,তাই বুবান বাবাকে বলে হাসপাতাল থেকে তুমি কারখানায় চলে যেও বাবা আমি মায়ের কাছে থাকব। ভূষণ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, আচ্ছা, কারখানা আজ থেকে খুলবে মনে হচ্ছে, কিন্তু তোর পড়াশোনা?
বুবান বাবাকে বলে আমি বই নিয়ে যাব হাসপাতালে,আর বাবা দেখছোতো মায়ের শরীর খারাপ তুমি এবার নেশা করা ছেড়ে দাও। বাবা বুবানকে ধমকে বলে ওঠে পাকা পাকা কথা না বলে পড়াশোনাটা মন দিয়ে কর। কাবেরীর টেস্টগুলো পর পর চলতে থাকে কয়েকদিন ধরে।
USG,Ecocardiogram এর রিপোর্ট আসতে ডাক্তারবাবু চিন্তিত স্বরে বলেন ওষুধগুলো নিয়মমাফিক খাওয়াবেন, আরো কিছু ব্লাডটেস্ট করাতে হবে, পেসমেকার বসাতে হতে পারে, খাওয়ার চার্ট করে দিয়েছি, সেটা যেন মেনে চলে।
কাবেরী বাড়িতে ফিরে এলে বুবান মায়ের জন্য লিকার চা রুটি করে আনে, মাকে বলে তুমি চিন্তা করো না মা আমি ভালোভাবে পড়াশোনা করছি, তুমি ঠিক ভালো হয়ে যাবে। ওষুধগুলো মনে করে খেয়ে নিও। মা বলে তুই রুটি বানালি কি ভাবে? বুবান হেসে বলে ঠাম্মাকে জিগ্গেস করে,ঠাম্মাকেও চা দিয়েছি।

স্কুলে গিয়ে মন দিয়ে পড়া শোনে বুবান, মাস্টারমশাই কদিন আসেনি কেন জানতে চাইলে মায়ের অসুস্থতার কথা জানালে, মাস্টারমশাই মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন ভালো করে পড়াশোনা কর,সব ঠিক হয়ে যাবে। ভালো রেজাল্ট হলে স্কলারশিপ পাবি। বাড়িতে ফিরে মা শুয়ে আছে দেখে বুবান বলে মা তোমার কিছু লাগবে? মা বলে তুই খেলতে যা, আমার কিছু লাগবে না।বুবান মাকে বলে জানো মা ভালো রেজাল্ট করতে পারলে স্যার বলেছেন স্কলারশিপ পাওয়া যায়, আমি চেষ্টা করবো মা। মা মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন নিশ্চয়ই পারবি তুই।
সন্ধ্যায় কাবেরী রান্নাঘরে যায়,আস্তে আস্তে কাজ এগোতে থাকে, ভূষণ কিছু ফল নিয়ে বাড়ি আসে। কাবেরীর হাতে দিয়ে বলে মনে করে খেয়ো, অভাবের সংসারে এসে অকালে শুকিয়ে যাচ্ছ, বাঁচতে তো হবেই ছেলের মুখ চেয়ে। কাবেরী আনমনে বলে এতো টাকার জোগাড় হবে কোথা থেকে? ভূষণ বলে ঠিক হয়ে যাবে, তুমি চিন্তা করো না।
পড়তে পড়তে বুবানের কানে কথাগুলো যায়, মাথা ভারি হয়ে আসে, তখনই মাস্টারমশাই এর কথা মনে পড়ে যায় লড়াইটা চালিয়ে যেতে হবে আয়ুষ, একমনে পড়তে থাকে বুবান…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress