লজ্জা (Lojja) : 16
শেষ রাতের দিকে ঘুম পায় সুরঞ্জনের। ঘুমের মধ্যে অদ্ভুত এক স্বপ্ন দেখে সে। এক একটি নদীর পাড়ে সে হাঁটছে। হাঁটতে হাঁটতে দেখে নদীর একটি উন্মত্ত ঢেউ তাকে নিয়ে যাচ্ছে গভীরে, সে পাকে পড়ছে, তলিয়ে যাচ্ছে, সে বাঁচতে চাইছে, কেউ নেই তার অসহায় হাতটি ধরে তাকে ডাঙায় তোলে। সে ঘামতে থাকে, তলিয়ে যেতে থাকে যুঁসে ওঠা অচেনা জলে। এমন সময় একটি শান্ত স্নিগ্ধ হাত তাকে স্পর্শ করে, জাগায়। সুরঞ্জন চমকে ওঠে। ভয়ে বিকৰ্ণ হয়ে ওঠে তার মুখ। পাক খাওয়া জল তাকে ডুবিয়ে নিচ্ছিল, সে প্রাণপণ চিৎকার করছিল, একটি খড়কুটোও আঁকড়ে ধরবার জন্য সে হাত বাড়াচ্ছিল স্বপ্নের মধ্যে, যেন একটি হাত সে পেয়ে গেছে, তাকে উদ্ধার করবার জন্য একটি হাত এগিয়ে এসেছে, সুরঞ্জন তেমন আঁকড়ে ধরে সুধাময়ের শক্তিমান হাত।
কিরণময়ীর কাঁধে ভর রেখে তিনি হেঁটে এসেছেন। অল্প অল্প শক্তি ফিরেছে তাঁর শরীরে। তিনি সুরঞ্জনের শিয়রে বসেন। তাঁর চোখে দূর নক্ষত্রের আলো।
–বাবা?
একটি বোবা জিজ্ঞাসা সুরঞ্জনের ধুকপুক করা অন্তরে। তখন ভোর হচ্ছে। জানালার ছিদ্ৰ ফুঁড়ে আলো আসছে। সুধাময় বলেন–চল আমরা চলে যাই।
সুরঞ্জন বিস্মিত হয়। জিজ্ঞেস করে—কোথায় যাব বাবা?
সুধাময় বলেন–ইন্ডিয়া।
সুধাময়ের বলতে লজ্জা হয়, তাঁর কণ্ঠ কাঁপে, তবু তিনি চলে যাবার কথা বলেন; কারণ তাঁর ভেতরে গড়ে তোলা শক্ত পাহাড়টিও দিনে দিনে ধসে পড়েছে।