রামায়ণ : আদিকাণ্ড – সূর্য্যবংশ নির্ব্বংশ এবং হারীতের অযোধ্যায় রাজ্যাভিষেক
মান্ধাতার তনয় হইল মুচুকুন্দ।
সমর পাইলে তার হৃদয়ে আনন্দ।।
তাঁহার তনয় পৃথু নামে নৃপবর।
যাঁর রথচক্রে সপ্ত হইল সাগর।।
তাঁর পুত্র হইল ইক্ষ্বাকু নরপতি।
বশিষ্ঠ নারদে কৈল রথের সারথি।।
শতাবর্ত নামে তাঁর হইল কুমার।
আর্যাবর্ত নামে পুত্র হইল তাঁহার।।
ভরত তাঁহার পুত্র অতি বলবান।
যাহা হৈতে উপজিল ভারত পুরাণ।।
জন্মিল তাঁহার পুত্র নামেতে ভূধর।
খাণ্ড নামে পুত্র তাঁর মহা ধনুর্ধর।।
খাণ্ডের হইল পুত্র দণ্ড নাম ধরে।
প্রজার কামিনী কন্যা বলাৎকার করে।।
সব প্রজা কহিলেন রাজার গোচর।
তব পুত্র হেতু ছাড়ি অযোধ্যা নগর।।
এ কথা শুনিয়া খাণ্ড বিষাদিত মন।
পুত্রের বিবাহ রাজা দিল ততক্ষণ।।
পরে পাঠাইল রাজা দণ্ডেরে কাননে।
প্রবেশ করিল দণ্ড সেই মহাবনে।।
কানন মধ্যেতে গিয়া দণ্ড নৃপবর।
বসাইল দণ্ডারণ্য বলিয়া নগর।।
তাহাতে বসতি করে শুক্র মুনিবর।
পড়িবারে দণ্ড নিত্য যায় তাঁর ঘর।।
বিধির নির্বন্ধ দেখ দৈবের ঘটন।
কামান্ধ হইয়া দণ্ড হইল নিধন।।
এক দিন শুক্র গেল তপস্যা করিতে।
হেনকালে দণ্ড রাজা গেলেন পড়িতে।।
শুক্রকন্যা অব্জা যায় পুষ্প আহরণে।
দণ্ড তাঁর প্রেম ভিক্ষা করয়ে নির্জনে।।
অব্জা বলে শুন রাজা কহি তব ঠাঁই।
পিতৃশিষ্য তুমি ত সম্বন্ধে হও ভাই।।
বিবাহ করিতে যদি লয় তব মন।
পিতা বিদ্যমানে তবে কর নিবেদন।।
রাজা বলে এ কথায় স্থির নহে মন।
পাছে বিয়া হবে আগে দেহ আলিঙ্গন।।
গুরুকন্যা বলি রাজা না করে বিচার।
পুষ্পবাটিকায় তারে করে বলাৎকার।।
তপস্যা করিয়া শুক্র মুনি আইল ঘরে।
আসন সলিল অব্জা দিল মুনিবরে।।
দিনান্তে অভুক্ত মুনি পোড়ে কলেবর।
কন্যারে দেখিয়া মুনি কুপিত অন্তর।।
মুনি বলে অব্জা কন্যা এ দেখি কেমন।
সর্বাঙ্গে তোমার দেখি শৃঙ্গার লক্ষণ।।
লজ্জা ঘুচাইয়া কন্যা কহে তার পাশ।
তব শিষ্য দণ্ডরাজা কৈল জাতিনাশ।।
এই কথা শুনিয়া কুপিল মুনিবর।
দণ্ডক বলিয়া মুনি ডাকিল সত্বর।।
পুঁথি কাঁখে করি দণ্ড আসে পড়িবারে।
দেখিয়া কুপিয়া মুনি কহিল তাঁহারে।।
পড়াইয়া তোমারে যে দিয়াছি চেতন।
তাহার দক্ষিণা ভাল দিলে হে এখন।।
এমত কুপুত্র যার জনমে বংশেতে।
নির্বংশ হউক খাণ্ড রাজা এ দোষেতে।।
কোপদৃষ্টে চাহিল তখন মহাঋষি।
রাজ্যশুদ্ধ হইল যে দণ্ড ভস্মরাশি।।
অযোধ্যাতে খাণ্ড রাজা ত্যজিল জীবন।
নির্বংশ হইল সূর্যবংশের রাজন।।
অযোধ্যাতে হইল রাজা বশিষ্ঠ ব্রাহ্মণ।
পুত্রের সমান করি পালে প্রজাগণ।।
মুনি বলে জপ তপ সব নষ্ট হৈল।
মিছা রাজ্য করি মম জন্ম গোঙাইল।।
ধ্যান করি জানিলেন বশিষ্ঠ ব্রাহ্মণ।
হইবে অব্জার এক উত্তম নন্দন।।
ধ্যানে জানি বশিষ্ঠ কহেন শুক্র প্রতি।
কন্যা পাঠাইয়া দেহ রাজা হবে নাতি।।
তথ্য জানি শুক্র মুনি হৈল হৃষ্টমন।
কন্যা পাঠাবার সজ্জা করিল তখন।।
অব্জারে পাঠান শুক্র অযোধ্যা নগর।
অব্জার হইল এক অপূর্ব কোঙর।।
হরণে হইল তার নাম যে হারীত।
মুনি তারে আশীষ করিল যথোচিত।।
দিনে দিনে বাড়ে শিশু যেন শশধর।
ছয় মাস মধ্যে অন্ন দিল মুনিবর।।
এক বৎসরের হৈল রাজার কুমার।
বসাইল লয়ে সিংহাসনের উপর।।
কৃত্তিবাস পণ্ডিতের কবিত্ব গুণগান।
আদিকাণ্ডে গাইল দণ্ডক উপাখ্যান।।