Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » রাত নিদালির কথকতা || Manisha Palmal

রাত নিদালির কথকতা || Manisha Palmal

নিশুতি রাত।নিদালির মন্ত্রে চরাচর সুপ্তিমগ্ন।কুয়াশার ওডনায় নিশিথিনীর মুখ ঢাকা। টুপ টুপ করে হিম পড়ছে। হিম সোহাগে গাছপালা ধানের শীষ নতমুখী। নভোমন্ডলের তারকা মন্ডলি সলমা চুমকির মতো ঝলমল করছে নিকষ কালো আকাশ পটে। রাত বাড়ছে সাথে বাড়ছে শীতের কামড়। হিংস্র শ্বাপদের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ছে শিকারি শীতটা। দূরে বড় রাস্তার বাঁকে রাত পাহারার লোকেরা আগুন পোহাচ্ছে। গাছপালার ফাঁক দিয়ে মাঝে মাঝে লালচে আগুনের শিখা দেখা যাচ্ছে।
মাঠের আলোর গর্তে শিয়াল দম্পতির বাস। তিনটি ছানা হয়েছে। শীতে রাতে শিয়ালনীর লক্ষ্য আদিবাসী বাড়ির মোরগটির দিকে। ঝিটা বেড়ার ফাঁক গলে গৃহস্থের গোয়ালে মাথা গলিয়েছে কি গলায়নি, কালু কুকুরটার খপ্পরে পড়েছে! কুকুরের চিৎকার শুনে গৃহস্থ বেরিয়েছে লাঠি হাতে। প্রাণ নিয়ে এক ছুটে সোজা খালপাড়। হিম কুয়াশার ঠান্ডার কামড় বসাচ্ছে। রাত গড়াচ্ছে আসশেওড়ার ঝোপে, ভূত ভৈরবীর ফুলে! আকাশের অবাঞ্ছিত নক্ষত্রেরা উল্কা হয়ে ঝরে পড়ছে! পরিযায়ী পাখিদের ডানার শন শন রাতের বুকে লহর তুলেছে। নিশিটহলে বেরানো প্যাঁচার কর্কশ শব্দে রাতের নিস্তব্ধতা খান হয়ে যাচ্ছে।
খেজুর গাছে রসের হাঁড়িতে রস জমছে টুপটুপ করে। তমাল পাড়ে সরষে ক্ষেতের ধারে মেঠো ইঁদুরদের জমায়েত। আলের গর্ত থেকে উঁকি মারছে ওরা। প্যাঁচার তীক্ষ্ণ নজর কে এড়িয়ে ছুটোছুটি করছে।
বাঁশ জঙ্গলের ঝরা পাতায় হিম কুয়াশা জমছে।হিমে ভেজা পাতা স্তুপের মাঝে শেয়ালদের পায়ের শব্দ হারিয়ে গেছে। নিঃশব্দে শিকারির মতো সে গূহস্থের গোহালে উঁকি মারতে চলেছে। হাঁস-মুরগি যাই হোক একটা কিছু ধরতে পারলেই হলো।

শালজঙ্গলের গভীরে একলা দাঁতালটা ঘুরে বেডাচ্ছে।দল থেকে বিতাডিত হয়ে তার মনমেজাজ ভালো নেই।নতুন প্রজন্মের সাথে বিবাদে তাকে বিতাডিত হতে হয়েছে। এখনো তার শরীরে পরাজয়ের ক্ষত দগ দগ করছে। দলের পিছু পিছু ঘুরতে ঘুরতে এই জঙ্গলে এসে পৌঁছেছে সে। দলের সাথে কাটানো সময়ের সুখস্মৃতি তার আহত মনকে বিষাদে ভরে তুলছে। আঘাতের বেদনার সাথে তার মন বেদনা তাকে ভয়ঙ্কর করে তুলেছে।এর সাথে জুটেছে মানুষের অত্যাচার। একলা বলেই তার পিছন পিছন হুলা পার্টির তরুণ সদস্যরা অনুসরণ করে চলেছে। এক মুহূর্ত শান্তি পাচ্ছে না সে। ক্ষোভও রাগে মনে হচ্ছে যেন সব ভেঙ্গেচুরে শেষ করে দেয়।এই রাগেই আছড়ে মেরেছে সে দুজনকে। বনদপ্তর এর কাছে সে এক জীবন্ত বিভীষিকা। তাকে মারার ফরমান এসে গেছে।
জঙ্গল গভীরের জলাশয়ে পরিযায়ী পাখিদের জমায়েত শুরু হয়েছে। দূর দূরান্ত থেকে আসা পরিযায়ী পাখিরা শীতের কদিন এখানে বসবাস করবে। সারী জঙ্গল যেন প্রাণচাঞ্চলে ভরপুর। নিশুতি রাতের হিম কুয়াশামাখা আবছায়া আঁধারের চাদরে রাতের মুখ ঢাকা।সর্ষেখেতের হলুদ ফুলে কুয়াশার ফোঁটা জমছে।আলের ধারের আশুদ গাছে এসে বসেছে নিশি টহলে বেরনো প্যাঁচা দম্পতি। তাদের নজর এড়িয়ে মেঠো ইঁদুরের দল ঘোরাঘুরি করছে। একটা বিরহী পাপিয়া “পিউ কাঁহা” পিউ কাঁহা ডাকে রাতের বুকে ব্যাথার লহর তুলছে। শিয়ালের যাম ঘোষণার কোলাহলে রাতের ঘুম ভাঙলো। আবার নিদালির মন্ত্রে ঘুমিয়ে পডলো চরাচর।
ধীরে ধীরে অন্ধকার তরল হতে শুরু করল। একটা ঠান্ডা হওয়ার লহর উঠল সারা মাঠ জঙ্গল জুড়ে। আকাশে শুকতারাটা জ্বলজ্বল করে উঠলো।ভোর হয়ে এল যে— দূর থেকে ভেসে এলো প্রথম মোরগের ডাক– তার দিনমনি কে আহ্বান।
নিশুতি রাতের কথকথায় শেষের দাঁড়ি পড়ল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress