Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » রবীন্দ্রনাথের কাব্য ভাবনা || Moksuda Halim

রবীন্দ্রনাথের কাব্য ভাবনা || Moksuda Halim

রবীন্দ্রনাথের কাব্য ভাবনা

ভারতবর্ষ তার সাম্য মৈত্রীর বানীর দ্বারা বিশ্বসংসারের চিত্ত জয় করবে—এই বিশ্বাস তাঁর কর্ম প্রেরণাকে নতুন পথে চালিত করলো। এর ফলে ব্রহ্মচর্যা শ্রম বিদ্যালয় বিশ্বভারতীতে বিস্তারিত হল। বিশ্বমানবতার পোষকতা করার জন্য কবির ভাগ্যে বহু বিড়ম্বনা ঘটলো। বিড়ম্বনা কারীরা বোঝে নাই যে রবীন্দ্রনাথের বিশ্বমানবত্বের ধ্যান ধারণার মূলেতো ভারতবর্ষেরই চিরকালের সাধনা—সর্বভূতের কল্যাণ। রবীন্দ্রনাথ বাঙ্গালার কবি, ভারতবর্ষের ভাবুক—এই জন্যই তাঁর প্রতিভা নিঃসঙ্কোচে মানব সংসারের সর্বত্র ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তা অনুভব করেছে। এইজন্য মানবাত্মার নিপীড়ন, মনুষ্যত্বের অবমাননা যেখানে হোক না কেন-তাঁর মর্মে লেগেছে। বলাকায় রবীন্দ্রনাথের কবি চেতনা অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যতের সমগ্র মানবাত্মার এমনকি-চরাচরাত্মার হৃদয় স্পন্দন অনুভব করেছে।
গীতোৎসার পালার শেষের দিক থেকে রবীন্দ্রনাথের মনে নিজের স্বদেশের ও মানব সংসারের পক্ষে একটা আসন্ন বিরোধের ও বিদ্রোহের পূর্বচ্ছায়া ঘনিয়ে আসছিলো। এই বিদ্রোহের একটা প্রকাশ হল “সবুজপত্র” উপলক্ষ্য করে। কবির শিল্পতরু যেন পুরাতন পত্র ফেলে দিয়ে নবীন পত্র সম্ভার মেলে ধরল। রবীন্দ্রনাথ চিরকালই পদে পদে নিজের সৃষ্টির মায়া কাটিয়ে চলতেন। সবুজপত্রের পত্র সমীরিত রচনায় যে নবীনত্ব ফুটে উঠলো তা আরও অভাবিত। এই সময়ে রবীন্দ্রনাথ গদ্যরীতিতে কথ্যভাষার বাচনপদ্ধতি স্বীকার করে নিলেন এবং পর্বসৌষম্য উপেক্ষা করে পদ্যরীতিতে গদ্যবন্ধের প্রসার এনে দিলেন। এই ভাবে গদ্যে-পদ্যে বাঙ্গালাসাহিত্যের নতুনতর পালা শুরু হল।
বলাকার বিশিষ্ট কবিতাগুলিকে পাঁচ পর্যায়ে ভাগ করা যায়। যথাঃ নূতনের আহ্বান ও সংঘর্ষের স্বীকৃতি, স্মৃতি গৌরব, স্মৃতি প্রবাহ, দৃষ্টিরস ও মন কেমন এবং বিবিধ।
নূতনের আহ্বান ও আসন্ন সংঘর্ষের স্বীকৃতি পর্যায়ে পড়ে নয়টি কবিতা, স্মৃতি গৌরব পর্যায়ে ছয়টি, স্মৃতি প্রবাহ পর্যায়ে চারটি, দৃষ্টিরস ও মন কেমন পর্যায়ে পাঁচটি। বাকি একটি কবিতা বিবিধ পর্যায়ে পড়ে। তিনটিকে গান বলা যায়।
স্মৃতিগৌরব পর্যায়ের তিনটি কবিতায় একটি বিশেষ প্রেমস্মৃতির মর্মর সৌধ গড়ে উঠেছে কিন্তু তার চুড়ায় উঠেছে মর জীবনের জয় পতাকা। একই ভাবের তিনটি কবিতা (৮,১৬,৩৬)র প্রথমটিতে ভৈরবী বৈরাগীনি গঙ্গাবন্যা প্রবাহের পাথেয় ক্ষয় করা নিরুদ্দেশ গতিকে উপলক্ষ্য করে সৃষ্টির জড়জঞ্জাল-নাশিনী জীবন সঞ্চারিণী শক্তির বন্দনা। দ্বিতীয়টিতে বিশ্বচেতনা ধারার সঙ্গে কবি চেতনা ধারার সংযোগ এবং সেই চেতনাধারার পরিনত ভাবনা। তৃতীয়টিতে বিশ্বের জীবন ও চেতনা-প্রবাহের নিরুদ্দিষ্ট সাগর সঙ্গমের ইঙ্গিত।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংস তাণ্ডবের ডিণ্ডিমে কবি যেন অমোঘ মৃত্যু আহ্বানেরই প্রতিধ্বনি শুনলেন। মৃত্যু জীবনের পরীক্ষাস্থল, বিচারভূমি এবং সংশোধন ক্ষেত্র। মৃত্যু বেদনার মধ্য দিয়েই খণ্ড জীবনের ত্রুটি বিচ্যুতির পরিশোধ হয় ও বৃহৎ জীবনের আশ্বাস লাভ করা যায় –তা সে সমষ্টিরই হোক বা ব্যষ্টিরই হোক। বিশ্বযুদ্ধের ঘনঘটায় কবি রুদ্রের আসন্ন মার্জনা দণ্ডপাত লক্ষ্য করলেন। (বিচার)।তাঁর বিশ্বাস এই যে আত্মত্যাগ, এই যে দুঃখের অগ্নি পরীক্ষা –এ তপস্যার মূল্যে স্বর্গও কেনা যায়। সুতরাং বিশ্বের কাণ্ডারি শুধিবে না এত ঋণ?
রাত্রির তপস্যা…..অমর মহিমা? (ঝড়ের খেয়া)।
বলাকার ৪৫টি কবিতার মধ্যে বত্রিশটি নতুন ছন্দে লেখা।এ ছন্দের ঠাট পয়ারেরই তবে চরণে পর্ব সংখ্যা সুনির্দিষ্ট নয়। এই ছন্দে অসম সংখ্যক পর্বের সিঁড়ি ভেঙ্গে ভাবের বাক-সঞ্চরণ—নির্বাধ এবং যথেচ্ছ হল—সঙ্গীতে গমকের মতো। এর ফলে কবিতার ক্ষেত্র পরিধি বাড়ল এবং পদ্যবন্ধ আরও জোরালো ও ভার বহনে সমর্থ হল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress