রথযাত্রা – বিশ্ব সংহতি অপূর্ণতার মাঝে পূর্ণতার অনুভব
ঐতিহাসিক মতে ১৪৬০ সালে ওড়িশা র মহারাজা কপিলেন্দ্র দেব দক্ষিণ ভারতের বেশ কটি রাজ্য জয় করে ১৬টি হাতিতে করে প্রচুর ধনরত্ন .এনে মহাপ্রভুকে উৎসর্গ করে নিজেকে ”শ্রী জগন্নাথের সেবক ” বলে ঘোষণা করেন । শ্রীমন্দিরের মুখ্য সেবক….”বড় তডউ সেবক” পরামর্শ দিলেন _রথযাত্রার অন্তিম পর্যায়ে বড় দান্ডে রথের উপরে ঠাকুরের ”সুবর্ণবেশ” হলে সমস্ত প্রজা এই রাজকীয় বেশ দেখার সুযোগ পাবেন । এই পরামর্শ অনুসারে মহারাজ কপিলেন্দ্র দেব.১৩৮রকমের সোনা র অলংকার বানিয়ে রথের উপর এই ”বেশ” এর আয়জন করেন । ‘ ‘ বড়ই তডউ সেবকের” পরামর্শেএই ”বেশ” বলে এই বেশ ”বড় তডউ বেশ” নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে॥
কথিত আছে মহারাজ ইন্দ্রদুম্ন ভগবানে র অসম্পূর্ণ মূর্তির জন্য খুবই দুঃ খিত ছিলেন। ভগবান তাঁকে স্বপ্না দেশ দেন ….তুমি তোমার ঐশ্বর্য দিয়ে আমার হাতপা গড়ে পূজো কোর! সেই থেকে ভগবানে র ..”সুবর্ণবেশে”র প্রচলন ॥
আষাড়ে র শুক্লা একাদশী তিথিতে যেমন রথের উপর ঠাকুরের..”সুনা বেশ” হয় তেমনই বছরে আরও চারবার রত্ন সিংহাসনে র ওপর এই ..”সুনা বেশ” অনুষ্ঠিত হয়…..আশ্বিন শুক্লা দশমী(বিজয়া দশমী)কার্তিক পূর্ণিমা (রাসপূর্ণিমা) পৌষ পূর্ণিমা ও দোলপূর্ণিমা ।
দ্বাদশীর রাতে চতুর্দ্ধা মূর্তি রথ ছেড়ে .শ্রীমন্দিরে প্রবেশের আগে..”অধরপনা ” (পানা বা সরবত নীতি) পালন করা হয়। তিন রথে বারটি তুম্বাকৃতি মাটির পাত্রে..”পনা সরবত” ভোগ লাগানো হয়। পাত্র গুলি ঠাকুরের আধর (ঠোট) পর্যন্ত লম্বা আকৃতির ।এই জন্য ই রীতি টির নাম ” অধরপনা ” ।
সিংহ দ্বারের সামনে র ছাউনিমঠের স্বতন্ত্র কূপ থেকে জল রথে আনা হয়। ন ধরনে র দ্রব্য…যেমন…দুধ..সর..ছানা …নবাত (মিছরি জাতীয় মিষ্টি) কলা..গোলমরিচ…জাইফল…কর্পূরও জল দিয়ে তৈরী হয় ..”বারো হান্ডি পানা ”।তিন ঠাকুরের সামনে তিন হান্ডিকরে…মদন মোহনের সামনে এক হান্ডি…রামকৃষ্নে র সামনে দুই হান্ডি পানা গোপনী য় পূজা বিধিতে ভোগ লাগানো হয়॥এরপর হান্ডি গুলো ঠাকুরের সামনে ভেঙ্গে দেওয়া হয়….আর পানা রথ থেকে পার্শ্ব দেবদেবী দের উপরে বয়ে এসে রাস্তায় প্রবাহিত হতে থাকে ।
এই ..”পনা ‘ ‘ আসলে রথের সাথে যে পার্শ্ব দেবতা ও দেবী যাত্রা করেন …রথের রক্ষক ভাস্কর…গরুড়…জয়দূর্গা…রথের দড়ি বাসুকিনাগ…স্বর্ণচূড় ও শঙ্খচূড় নাগুনী (নাগিন ) যে সব অশরীরী আত্মা ও অদৃশ্য শক্তি রথযাত্রা দেখতে
এসে থাকেন তাঁদের জন্য উদ্দিষ্ট॥ এই প্রসাদে আপ্যায়িত করে ওঁদের বিদায় জানানো হয়।
এর পর আরম্ভ হয় মহাপ্রভুর ..”নীলাদ্রি বিজে”
আবেগ ময় বাতাবরনে ..রথকে শূন্য করে…প্রাণ হীন করে..জগজন কে আগামী বছরে আবার এই লীলা প্রদর্শন করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে…ঘণ্টা .. তুরী..কাহালি..আলট..চামর..রোষনী ..আতসবাজির শোভন শোভাযাত্রায় মহাপ্রভু ফিরে যান তাঁর রত্ন সিংহাসনে ॥
বিশ্বসংহতি ও সম্প্রীতি র বার্তা প্রচার করে এই রথযাত্রা।জাতি..ধর্ম ..বর্ণ .. সম্প্রদায়েরউর্দ্ধে এই যাত্রা ঘোষনা করে বিশ্বসংহতি ও সম্প্রীতি র বানী ।
সমস্ত অপূর্ণতা র ভেতরে পূর্ণতা কে অনুভব করাই এই যাত্রার পরম লক্ষ্য॥
জয় জগন্নাথ…নমি নমি চরনে ….॥
তথ্যসূত্র…দৈনিক পত্রিকা ও লোকভাষ!