Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » রঘু ডাকাত : সংঘর্ষ—পুণ্য ও পাপে (প্ৰথম খণ্ড) || Panchkari Dey » Page 9

রঘু ডাকাত : সংঘর্ষ—পুণ্য ও পাপে (প্ৰথম খণ্ড) || Panchkari Dey

রঘুনাথ ফিরিয়া আসিয়া প্রথমেই প্রতাপের অনুসন্ধান করিল। দেখিল, সে একপার্শ্বে পড়িয়া গাঢ় নিদ্রা যাইতেছে।

অনেকক্ষণ ধরিয়া রঘুনাথ কি ভাবিল। মনে করিয়াছিল, ফিরিয়া আসিয়া সে প্রতাপকে দেখিতে পাইবে না। প্রতাপের উপর তাহার সন্দেহ হইয়াছিল। সে কখনও ভাবিত, প্রতাপ রায়মল্লের চর। আবার কখনও ভাবিত, সে নিজেই বা রায়মল্ল সাহেব; কিন্তু আজ রঘুনাথের সে ভ্রম দূর হইল। প্রতাপ যে ছদ্মবেশী রায়মল্ল সাহেব নয়, এ বিষয়ে তাহার স্থির ধারণা জন্মিল। যদি রায়মল্ল হইত, তাহা হইলে অজয়সিংহের গৃহে তাহার সহিত সাক্ষাৎ হইবে কেমন করিয়া? রঘুনাথ সিদ্ধান্ত করিল, প্রতাপ রায়মল্লের একজন চর হইতে পারে বটে।

নিদ্রিত দস্যুগণের মধ্যে হইতে বাছিয়া একজন দস্যুকে রঘুনাথ টানিয়া উঠাইল। নিদ্রাভঙ্গের জন্য প্রথমে সে বড় বিরক্ত হইয়াছিল; কিন্তু রঘুনাথকে দেখিয়া তাহার বিরক্তির ভাব দূর হইল। রঘুনাথ বলিল, “ভোজসিংহ! একবার আমার সঙ্গে বাহিরে এস দেখি, বড় দরকারী কথা আছে।”

ভোজসিংহ রঘুনাথের আজ্ঞাক্রমে তাহার সঙ্গে শিবিরের বাহিরে গেল। যে স্থানে ক্ষুদ্র শিবিরে তারা বন্দিনী ছিল, তাহারই পশ্চাতে যাইয়া উভয়ের কথাবার্তা চলিতে লাগিল।

রঘুনাথ বলিল, “দেখ, আজ রাত্রে আমার সঙ্গে রায়মল্ল গোয়েন্দার দেখা হয়েছিল।” ভোজ। এতদিনে বুঝি তোমার চোখ ফুল?

রঘুনাথ। কেন?

ভোজ। পাঁচ ঘণ্টা আগে যদি আমায় এ কথা জিজ্ঞাসা করতে তা’ হ’লে আমি তোমায় ব’লে দিতে পারতেম যে, রায়মল্ল গোয়েন্দা আমাদের দলের মধ্যে মিশে আছে।

রঘুনাথ। অ্যা—বল কি! আমাদের দলের মধ্যে?

ভোজ। হাঁ।

রঘুনাথ। না—তুমি যা’ ভাবছ, তা’ নয়;তবে এখানে তার এক চর আছে, কথা আমি নিশ্চয় বলতে পারি।

ভোজ। কে?

রঘুনাথ। প্রতাপ।

ভোজ। তুমি ঠিক বলতে পার, প্রতাপ রায়মল্ল গোয়েন্দা নয়?

রঘুনাথ। হাঁ, আমি নিশ্চয় বলতে পারি। কেন জান? আজ রাত্রে অজয়সিংহের বাড়ীতে আমি রায়মল্ল গোয়েন্দাকে দেখেছি।

ভোজ। তার পর কি হ’ল?

রঘুনাথ সংক্ষেপে সমস্ত বিবরণ বর্ণন করিল। কেবল নিজে যেরূপভাবে অপদস্থ হইয়াছিল, সে ঘটনাটুকু বাদ দিয়া বলিল।

ভোজ। তাই ত, লোকটা অন্তর্যামী নাকি! যে সময়ে যেখানে দরকার, ঠিক সময়ে সেখানে আবির্ভাব হয়। ভূতের মত লোকের আশে-পাশে ঘুরে বেড়ায়; কিন্তু কেউ কখন তাকে ধরতেও পারে না।

রঘুনাথ। এইবার যদি তাকে আমি আমার পাল্লায় পাই, একেবারে খুন ক’রে ফেলব।

ভোজ। বড় শক্ত কাজ! রায়মল্ল গোয়েন্দার মাথার একগাছি চুল ছুঁতে পারাও বড় শক্ত কথা রাতারাতি গুম-খুন করতে পারলে তবেই সুবিধা।

রঘুনাথ। এখন কি করা যায়, বল দেখি?

ভোজ। এখান থেকে জাল গুটোও।

রঘুনাথ। তাতে আমার মত্ আছে। রায়মল্ল যখন পিছু নিয়েছে, তখন দিন-কতক গা-ঢাকা দেওয়াই ভাল।

ভোজ। তা’ মন্দ নয়।

রঘুনাথ। কিন্তু যাবার আগে একটা কাজ করতে হবে, এ প্রতাপ বেটাকে মেরে যেতে হবে, ওটা বিশ্বাসঘাতক— রায়মল্লের চর।

ভোজ। আমার মনেও ঠিক ঐ কথা উঠেছিল; কিন্তু আমি তোমায় এতক্ষণ বলিনি। খুন ক’রে না হয় খড়ের ভিতরে ফেলে দিলাম; কিন্তু খুন করাই যে শক্ত। দলের ভিতর অনেক লোক ওর সহায়—অনেকের সঙ্গে ওর বড় ভাব।

রঘুনাথ। আমি তার এক মতলব ঠাওরেছি। ঐ যে তিনজন নুতন লোক আমাদের দলে এসে সম্প্রতি মিশেছে, ওরা এদেশী নয়—এ দেশের লোকের উপর ওদের বড় মায়াদয়া নাই। ওদের দ্বারাই প্রতাপকে খুন করতে হবে। তুমি ওদের ডেকে নিয়ে এস। তারপর আমি সব পরামর্শ বলছি।

উভয়ে এইরূপ কথা কহিতে কহিতে চলিয়া গেল। ক্ষুদ্র শিবিরমধ্য হইতে তারা তাহাদের সমস্ত কথাই শুনিল। বারবার তারার মনে বিশ্বাস ছিল, প্রতাপ ওরফে রায়মল্ল সাহেব তাহাকে সমস্ত বিপদ থেকে উদ্ধার করিবেন; কিন্তু এইরূপ পরামর্শ শুনিয়া তাহার সর্ব্বাঙ্গ শিহরিয়া উঠিল। সে একবার উঁকি মারিয়া দেখিল, রঘুনাথ ও ভোজসিংহ চলিয়া গিয়াছে; এবং যে প্রহরী তাহার রক্ষকস্বরূপ নিযুক্ত হইয়াছিল, সে-ও নিদ্রিত। তারা আর স্থির থাকিতে পারিল না; নিঃশব্দে বাহির হইয়া দস্যুগণের শিবিরের মধ্যে প্রবেশ করিল। তথায় সকল দস্যুই নিদ্রা যাইতেছিল। একপার্শ্বে প্ৰতাপকে দেখিয়া তারা তাঁহার কাছে গেল।

প্রতাপ এক মুহূর্ত্তের জন্যও নিদ্রিত হন্ নাই। তাঁহার দুই-চারিজন অনুচরও মাঝে মাঝে তাঁহাকে দুই-একটি খবর দিয়া যাইতেছিল। তিনি নাসিকাধ্বনি করিয়া নিদ্রিতের ন্যায় শয়ন করিয়াছিলেন বটে, কিন্তু কোথায় কি হইতেছে, তাহার সংবাদ একটিও তাঁহার অজ্ঞাত ছিল না। সমস্ত সংবাদই চরে তাঁহাকে অবগত করাইতেছিল।

তাঁহার মাথার কাছে বসিয়া তারা কানে কানে বলিল, “আমি আপনাকে একটা কথা বলতে এসেছি। রঘুনাথ আপনাকে হত্যা করবার পরামর্শ করছে।”

প্রতাপ হাসিয়া বলিলেন, “আমি জানি। আমার জন্য তোমার কোন ভয় নাই। তবে যে তুমি নিজে আমায় সাবধান করে দিতে এসেছ, তার জন্য আমি তোমায় ধন্যবাদ দিই। তুমি যেখানে ছিলে, সেইখানে যাও। রঘুনাথ তোমায় যেখানে নিয়ে যেতে চায়, তার সঙ্গে সেইখানে যেয়ো। জেনো, আমি ছায়ার ন্যায় তোমার সঙ্গে সঙ্গে থাকব। এখানে আর ব’সে থেকো না—কেউ তোমায় আমার কাছে দেখলে সন্দেহ করবে—সবদিক্ নষ্ট হবে।”

তারা আর কথা কহিতে পারিল না। সেখান হইতে উঠিয়া চলিয়া আসিতেছে, এমন সময়ে আর একটা কথা মনে পড়াতে প্রতাপকে বলিতে গেল। সেই সময়ে পশ্চাদ্দিক্ হইতে কে তাহার বস্ত্র ধরিয়া এক টান মারিল।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *