Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » রঘু ডাকাত : সংঘর্ষ—পুণ্য ও পাপে (প্ৰথম খণ্ড) || Panchkari Dey » Page 7

রঘু ডাকাত : সংঘর্ষ—পুণ্য ও পাপে (প্ৰথম খণ্ড) || Panchkari Dey

তারার পিতার নাম এ পর্য্যন্ত পাঠককে জানান হয় নাই। এখন আর তাহা অপ্রকাশ রাখা চলে না।

তারার পিতার নাম অজয়সিংহ।

পূর্ব্ববর্ণিত ঘটনার প্রায় তিন ঘণ্টা পরে অজয়সিংহের বাটীর বহির্দ্বারে কে আঘাত করিল। শয্যা হইতেই রুগ্ন অজয়সিংহ জিজ্ঞাসা করিলেন, “দরজায় ঘা দেয় কে?”

একজন বৃদ্ধ অজয়সিংহের পার্শ্বে বসিয়া তাঁহার গায়ে হাত বুলাইতেছিল। সে অজয়সিংহের প্রশ্নের উত্তর দিল, “চোর ছ্যাঁচোর, না হয় ডাকাত হবে, নইলে এত রাত্রে কে আর এখানে আসবে?”

অজয়সিংহ ক্ষীণস্বরে বলিলেন, “না, আজ রাত্রে আমার সহিত একজন লোকের সাক্ষাৎ করবার কথা আছে। একবার গিয়ে দেখে এস।”

বৃদ্ধ আর কোন কথা না বলিয়া বিড় বিড় করিয়া বকিতে বকিতে গৃহ হইতে নিষ্ক্রান্ত হইল। এই বৃদ্ধের নাম মঙ্গল। অজয়সিংহের সম্পন্ন অবস্থায় সে তাঁহার চাকর ছিল। বৃদ্ধের একটী গুণ ছিল, সে উত্তমরূপে নাড়ী পরীক্ষা করিতে পারিত এবং নানাবিধ ঔষধাদি জানিত। এমন অনেক গাছ-পালা সে চিনিত, যাহার গুণাগুণ অনেক বিচক্ষণ চিকিৎসক বিদিত নহেন। মঙ্গল অনেক কাল অজয়সিংহের বাটীতে ছিল। প্রায় চারি বৎসর কাল সে কোথায় চলিয়া গিয়াছিল, কেহ তাহার সংবাদ পায় নাই কিন্তু এরূপ বিপদের সময়ে সে কেমন করিয়া কোথা হইতে আসিয়া জুটিল তাহাও কেহ বলিতে পারে না। প্রভুভক্ত ভৃত্য আসিয়াই অজয়সিংহের অবস্থা দেখিয়া কাঁদিয়া ফেলিয়াছিল। তার পর অন্যান্য কথাবার্ত্তায় সে এতদিন কোথায় ছিল, তাহা বলিয়া বৃদ্ধের সেবা-শুশ্রূষায় নিযুক্ত হইয়াছিল। তারা রায়মল্ল সাহেবের উদ্দেশে লালপাহাড়ে যাইবার কিছু পরেই মঙ্গল আসিয়া জুটিয়াছিল।

অজয়সিংহের আজ্ঞাক্রমে মঙ্গল সদর দরজা খুলিয়া দিলে একজন বলিষ্ঠ যুবাপুরুষ গৃহে প্রবিষ্ঠ হইল।

আগন্তুক যুবা কক্ষমধ্যে প্রবেশ করিয়াই জিজ্ঞাসা করিল, “এই কি অজয়সিংহের বাড়ী?”

মঙ্গল। হাঁ।

আগন্তুক। এই রুগ্ন ব্যক্তিই কি অজয়সিংহ?

ক্ষীণকণ্ঠে অজয়সিংহ উত্তর করিলেন, “হাঁ, আমারই নাম অজয়সিংহ। আপনি কে?”

আগন্তুক। “আমার নাম রায়মল্ল, আমি কোম্পানীর তরফে গোয়েন্দার কাজ করি। অনেক সময়ে সাহেবের বেশ পরিধান করি বলিয়া, লোকে আমায় ‘রায়মল্ল সাহেব’ বলিয়া ডাকে।”

গাম্ভীর্য্যপূর্ণস্বরে অলক্ষিতভাবে কে কোথা হইতে বলিল, “মিথ্যাকথা!”

যে আগন্তুক যুবা আপনাকে রায়মল্ল গোয়েন্দা বলিয়া পরিচয় দিয়াছিল, সে বিস্মিত ও চকিতনেতে চারিদিকে চাহিয়া কাহাকেও কোথায়ও দেখিতে না পাইয়া সক্রোধে মঙ্গলকে লক্ষ্য করিয়া বলিল, “এ কথা কে বললে? তুই বলেছিস্, পাজী বুড়ো! আমার সঙ্গে ঠাট্টা!”

মঙ্গল বলিল, “কৈ আমি ত কিছুই বলি নি।”

অজয়। আপনি এখানে কি উদ্দেশ্যে এসেছেন?

আগন্তুক। উদ্দেশ্য? আপনিই ত আমায় ডেকে পাঠিয়েছেন। আমার নিজের কোন উদ্দেশ্যে এখানে আসি নাই।

অজয়। আমি যে আপনাকে ডাকিয়ে পাঠিয়েছি, এ-সংবাদ আপনাকে কে দিল?

আগন্তুক। আপনার কন্যা তারা আমায় এই খবর দিয়েছে।

অজয়। তবে আপনার সঙ্গে তা’র সাক্ষাৎ হয়েছিল?

আগন্তুক। আজ্ঞে হ্যাঁ।

অজয়। সে কি বলে, আমি আপনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাই?

আগন্তুক। তারা বলে, আপনি আমার নিকটে কি একটি গুপ্ত কথা বলার ইচ্ছা করেন। আগন্তুক যুবা যে ভাবে অজয়সিংহের প্রশ্নগুলির উত্তর প্রদান করিল, তাহাতে সন্দেহের কোন বিশেষ কারণ পরিলক্ষিত হইল না। অজয়সিংহও তাহাকে অবিশ্বাস করিলেন না। যে সকল কথা তিনি রায়মল্ল সাহেবের কাছে বলিবেন স্থির করিয়াছিলেন, সেই সকল কথা বলিতে উদ্যত হইয়াছেন, এমন সময়ে আবার কে সেই প্রকোষ্ঠের এক কোণে অদৃশ্য থাকিয়া গম্ভীরভাবে বলিল, “বিশ্বাস করবেন না—ও ডাকাত।”

রোষকষায়িতলোচনে আগন্তুক মঙ্গলের দিকে ফিরিয়া বলিল, ফের পাজী বুড়ো—পাগলামী করছিস্!”

মঙ্গল এবার কোন কথা না বলিয়া চুপ্ করিয়া রহিল।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *