Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » রঘু ডাকাত : সংঘর্ষ—পুণ্য ও পাপে (প্ৰথম খণ্ড) || Panchkari Dey » Page 13

রঘু ডাকাত : সংঘর্ষ—পুণ্য ও পাপে (প্ৰথম খণ্ড) || Panchkari Dey

রায়মল্ল সাহেব জিজ্ঞাসা করিলেন, “এখন এমন কি প্রমাণ পেয়েছেন, যাতে আপনি তারার স্বত্ব প্রমাণ করতে সাহস করছেন?”

অজয়। কাগজ-পত্র ছাড়া আমি এখন তিনটী বিষয় পেয়েছি, যাতে তারার যথার্থ প্রাপ্য সম্পত্তি পুনরুদ্ধারের পক্ষে আর কোন কষ্ট হবে না।

রায়মল্ল। বলুন।

অজয়। আমার প্রথম এবং প্রধান সাক্ষ্য মঙ্গল। ছেলেবেলায় সে প্রতিপালন করেছিল, সুতরাং তার কথা আদালত গ্রাহ্য করবে।

রায়মল্ল। গ্রাহ্য না করলেও করতে পারে। মঙ্গল ছেলেবেলায় তারাকে মানুষ করেছিল ব’লেই যে, সে এখনও তাকে ঠিক চিনতে পারবে, সে কথার সারবত্তা কি?

অজয়। আমার দ্বিতীয় কারণ, তোমাকে মুখে না ব’লে হাতে হাতে দেখাচ্ছি। এই ছবিখানি কার, বল দেখি?

অজয়সিংহ রায়মল্লের হাতে হাতীর দাঁতের উপরে ক্ষোদিত একখানি বহু পুরাতন ছবি দিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “বল দেখি এখানি কার ছবি?” রায়মল্ল ছবিখানি দেখিবামাত্রই চিনিতে পারিলেন।

রায়মল্ল। কেন? এ ত তারার ছবি।

অজয়। ভাল করে দেখ।

রায়মল্ল। আমি ভাল করেই দেখেছি। এ নিশ্চয় তারারই ছবি।

অজয়। তারা এই ছবিখানি জীবনে কখন দেখে নাই।

রায়মল্ল। বলেন কি? তবে এ কার ছবি?

অজয়। তুমি আমায় এইমাত্র জিজ্ঞাসা করছিলে, কেমন ক’রে আমি তারাকে চিনতে পারলেম কিন্তু এই দেখ, তার এক প্রমাণ। এ ছবিখানি আমার ভায়ের প্রথম পক্ষের স্ত্রীর—তার নিজ-জননীর ছবি। এই ছবি দেখে যদি তারার ছবি ব’লে ভ্রম হয়, তাহলে প্রকৃত তারাকে দেখে চিনতে আর কতক্ষণ লাগে?

রায়মল্ল। আদালতে এ তর্কও যে কতদূর দাঁড়াবে, তা আমি ঠিক বলতে পারি না।

অজয়। আচ্ছা, এও যদি প্রকৃত প্রমাণ ব’লে গ্রাহ্য না হয়, তা’ হলে আর একটি কারণে আমি বোধ হয়, মোকদ্দমায় জয়ী হব। যে রাজপুত তারাকে বালিকাকালে জনাৰ্দ্দন দত্তের বাড়ীতে রেখে এসেছিল, এখন সে লোকটাকে ধরা গিয়াছে। মঙ্গল অনেক অনুসন্ধানের পর সে লোকটাকে বার করেছে।

রায়মল্ল। লোকটা কি করে?

অজয়। কিছুই করে না। অর্থের লোভে এই ঘৃণিত পাপ কাজে সহায়তা করেছিল। এখন সে খেতে পায় না। হাতে হাতে পাপের প্রতিফল পেয়েছে। কষ্টে প’ড়ে তার একটু ধৰ্ম্মজ্ঞান হওয়াতে আদালতে আমার সহায়তা করতে সম্মত হয়েছে।

রায়মল্ল। আদালতে এ সাক্ষীও বড় বিশেষ কোন কাজ হবে না; তবে তার দ্বারা কাজ আরম্ভ করবার পক্ষে সুবিধা হবে।

অজয়। কেন, সে লোকটি নিজমুখে যদি দোষ স্বীকার করে, আর যে ব্যক্তি তাকে এই কাজে নিযুক্ত করেছিল, তাকে যদি চিনিয়ে দিতে পারে, তা’ হ’লেও কি কাজ হবে না?

রায়মল্ল। না, তাতেও কোন কাজ হবে না। কেন না, তারা এখন বড় হয়েছে। সে লোকটি শপথ ক’রে এমন কথা বলতে পারবে না যে, এই সেই তারা এবং এই তারাকেই বালিকাকালে সে বৰ্দ্ধমানে বিসর্জ্জন দিয়ে এসেছিল।

অজয়সিংহের সকল উৎসাহ, সকল তেজ যেন নষ্ট হইল। তিনি হতাশ হইয়া পড়িলেন। অত্যন্ত নৈরাশ্যব্যঞ্জক স্বরে বলিলেন, “তবে আর তারার অপহৃত সম্পত্তির পুনরুদ্ধার হবে না? অভাগিনীর যথার্থ প্রাপ্য সম্পত্তি আর সে ফিরে পাবে না?”

রায়মল্ল। ততদূর নিরাশ হবেন না। তারা সমস্ত বিষয় সম্পত্তি ফিরিয়ে পেলেও পেতে পারে। অজয়। এই যে তুমি বললে, ও প্রমাণে কোন কাজ হবে না, তবে কি ক’রে তারা সম্পত্তি ফিরিয়ে পাবে?

রায়মল্ল। আপনি যে সব প্রমাণ সংগ্রহ করেছেন, তাতে আদালতে কোন কাজ না হ’তে পারে কিন্তু আমি তাতেই কাজ চালাব;আপনি আমার কথা ঐ দেয়ালের গায়ে লিখে রেখে দিন। যদি আমি জীবিত থাকি, তাহলে তারার প্রাপ্য সমস্ত বিষয় সম্পত্তি নিশ্চয়ই পুনরুদ্ধার ক’রে দিব।

অজয়। কেমন করে?

রায়মল্ল। সে কথা এখন আমি আপনাকে বলব না। আমার ফন্দী আছে। আমার ফন্দী, আমার কোন মতলব, আমি কারও কাছে আগে প্রকাশ করি না।

অজয়। সকল মানুষেরই ভুল হয়। তুমিও মানুষ, তোমার ভুল হ’তে পারে। অভ্রান্ত মানুষ জগতে কেহ নাই; যদি তুমি তোমার উদ্দেশ্যসাধনে অপারক হও, যদি কোন ভুল কর, যদি ঠকে যাও— রায়মল্ল।

রায়মল্ল। গোয়েন্দা আজ পৰ্য্যন্ত ত কোন কাজে বিফল মনোরথ হয় নি—আজ পৰ্য্যন্ত ত কোন কাজে ঠকে নি।

অজয়। কখন্ তুমি এ কাজে হাত দেবে?

রায়মল্ল। রঘু ডাকাতের শ্রাদ্ধ শেষ করেই এ কাজে হাত দেবো।

অজয়। কতদিনে রঘু ডাকাতের শেষ হবে?

রায়মল্ল। আর চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে।

অজয়। রঘুনাথ যখন এত ভয়ানক লোক, তখন তুমি হয় ত বিপদে পড়তে পার। তাহাদের দলকে দলশুদ্ধ ধর-পাকড় করতে যাবে? তারা খুনে লোক, তোমায় খুন ক’রে ফেলতে পারে।

রায়মল্ল। রঘুনাথের হাতে মৃত্যু, বিধাতা আমার কপালে লেখে নাই। যদি মরি, তুচ্ছ রঘু ডাকাতের হাতে কখনই নয়। আমায় মারতে তার চেয়ে বুদ্ধিমান, তার চেয়ে বীর, তার চেয়ে সাহসী পুরুষের দরকার।

এই পৰ্য্যন্ত কথাবার্তা শেষ করিয়া রায়মল্ল গোয়েন্দা বিদায় গ্রহণ করিয়া অশ্বারোহণে আবার পাৰ্ব্বতীয় পথে প্রস্থান করিলেন। রঘু ডাকাতের সর্বনাশের জন্য যাহা কিছু প্রয়োজন, আজ দুই মাসকাল ধরিয়া তিনি তাহার সমস্ত আয়োজন করিতেছিলেন, এতদিনে তাহার সমস্ত অভিসন্ধি পূর্ণ হইয়াছে। চারিদিকে আট-ঘাট বাঁধিয়া কাজ করিয়াছেন, পাহাড়ের সর্বস্থানে পুলিসের লোকজন ছদ্মবেশে পরিভ্রমণ করিতেছে। এমন কি রঘু ডাকাতের দলের সঙ্গেও তাঁহারই কয়জন লোক মিশিয়া রহিয়াছে। এখন মাত্র তাঁহার শেষ কাৰ্য্য বাকী।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress