Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » রঘু ডাকাত : পুণ্যের জয় হইল (দ্বিতীয় খণ্ড) || Panchkari Dey » Page 7

রঘু ডাকাত : পুণ্যের জয় হইল (দ্বিতীয় খণ্ড) || Panchkari Dey

দস্যু উচ্চহাস্য করিয়া বলিল, “খুন করব, না ত কি? তুই আমাদের কাজে বাধা দিচ্ছিস্ কেন? “ রায়মল্ল। দেখ, তুই অতি ভীরু! আমি বুড়ো হয়েছি বটে, কিন্তু এক চড়ে তোর মুণ্ডু ঘুরিয়ে দিতে পারি।

দস্যুগণ ও জগৎসিংহ সকলেই হোঃ হোঃ রবে হাসিয়া উঠিল।

একজন দস্যু বলিল, “যাক, আর তোমার বীরত্বে কাজ নাই। এখন এখান থেকে আস্তে আস্তে স’রে পড়।”

রায়মল্ল। তা’ সহজে যাচ্ছি না। এই মেয়েটিকে আমি নিয়ে যাব।

জগৎসিংহের পোষাক-পরিচ্ছদ বেশ ভদ্রলোকের ন্যায়। তাহার উপরে সে এরূপ ভাবভঙ্গী দেখাইতেছিল, যেন সে দস্যুগণের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত নহে। বৃদ্ধবেশী রায়মল্ল গোয়েন্দার অবশ্য তাহা অজানা ছিল না। তিনি ছল করিয়া জগৎসিংহের নিকটস্থ হইয়া কহিলেন, “আপনাকে ত ভদ্ৰলোক দেখছি; এ রকম অত্যাচার দেখে আপনি আমার মতেই মত দিবেন। আমি প্রস্তাব করি—আসুন, আমরা দুজনে চেষ্টা ক’রে এই বালিকাকে উদ্ধার করে নিয়ে যাই।”

জগৎসিংহ রায়মল্লের কানে কানে বলিল, “ওদের সঙ্গে ঝগড়া করতে আমার সাহস হয় না। তবে আমরা ভালমানুষী করে বুঝিয়ে ব’লে দেখতে পারি, তাতে যতদূর হয়। পরের জন্য বেশি হাঙ্গামে দরকার কি?”

রায়মল্ল কহিলেন, “ওদের কাছে ভালমানুষী করা আর মৃতব্যক্তির জীবনদান করিতে যমরাজকে অনুরোধ করা, একই কথা।”

জগৎ। আমরা ওদের নামে নালিশ করতে পারি।

রায়মল্ল। আর ততক্ষণে এদিকে যে কাজ ফর্সা হ’য়ে যাবে।

জগৎসিংহ রায়মল্লের কথার উত্তর না দিয়া একজন দস্যুকে ইঙ্গিত করিবামাত্র সে রায়মল্লের নিকটবৰ্ত্তী হইয়া কহিল, “দেখ্ বুড়ো, তুই যদি আর বেশি বাড়াবাড়ি করিস্, তোকে এবার নিশ্চয় গুলি করে ফেল।”

রায়মল্ল মাতালের ন্যায় ভঙ্গী করিয়া কহিলেন, “আমি এক পাও নড়ব না, তুই কি করতে পারিস্ কর্। আমি এ মেয়েটিকে নিয়ে তবে যাব।”

রায়মল্ল সাহেব এই কথা বলিবামাত্র একজন দস্যু তাঁহাকে ধাক্কা দিতে আসিল। যেমন সে হস্ত প্রসারণ করিবে, অমনিই চিৎপাত হইয়া পড়িয়া গেল। বৃদ্ধের একটি ধাক্কার ভার সহ্য করিতে পারিল না।

অন্য দুইজন দস্যু তাহাদিগের সহচরের এই দশা দেখিয়া ক্রোধে ক্ষিপ্তপ্রায় হইয়া বৃদ্ধকে আক্রমণ করিতে ধাবিত হইল। রায়মল্ল সাহেব তৎক্ষণাৎ পশ্চাৎ হটিয়া নিজের অঙ্গরাখার মধ্য হইতে দুইটি পিস্তল বাহির করিয়া দুই হস্তে ধারণ করিলেন। দস্যুগণ তদ্দর্শনে বিস্মিত হইল! রায়মল্ল কহিলেন, “এস, কার সাহস আছে, এগিয়ে এস। এক গুলিতে মাথার খুলি উড়িয়ে দেব।”

এই ব্যাপার দেখিয়াই জগৎসিংহ সেই কক্ষের প্রদীপ সহসা নির্ব্বাণ করিয়া দিল। তৎক্ষণাৎ তারার কাতর ক্রন্দনধ্বনি শ্রুত হইল, বোধ হইল, কে যেন তাহাকে লইয়া টানাটানি করিতেছে। তৎক্ষণাৎ এমন একটা শব্দ হইল, কে যেন দ্বার উদ্‌ঘাটিত করিয়া লাফাইয়া পড়িল। তৎক্ষণাৎ অশ্বের পদধ্বনি শ্রুতিগোচর হইল। রায়মল্ল সাহেব বুঝিলেন, একজন তারাকে লইয়া পলায়ন করিল। তিনি বাতায়ন উন্মুক্ত করিয়া পিস্তলের চারিটা আওয়াজ করিলেন। একজন দস্যু পলায়ন করিতে চেষ্টা করিতেছিল, সে আহত হইয়া সেই স্থানে পড়িয়া গেল।

রায়মল্ল সাহেবও সেই অবকাশে বাহির হইয়া যে স্থানে তাঁহার আপনার ঘোড়া বাঁধিয়া রাখিয়াছিলেন, তথায় আসিয়া চকিতমধ্যে উপনীত হইলেন। অশ্বারোণ পূর্ব্বক দুই-তিনবার পিস্তলের আওয়াজ করিলেন। সেই শব্দে শঙ্কিত হইয়া জগৎসিংহের ও আর একজন দস্যু ঘোড়া পলায়নপরায়ণ হইল। রায়মল্ল গোয়েন্দা আর তথায় অপেক্ষা না করিয়াই বেগে পলায়িত দস্যুর পশ্চাদ্ধাবন করিলেন। এদিকে জগৎসিংহ, সরাই-রক্ষক এবং আর একজন দস্যু বৃদ্ধের এই সকল ব্যাপার দেখিয়া অবাক্ হইয়া সেইখানে বসিয়া পড়িল।

সরাই-রক্ষক কহিল, “এ কি মহাশয়! এ বুড়ো ত সাধারণ নয়? “

জগৎসিংহ কহিল, “ও আর কেউ নয়, সেই রায়মল্ল গোয়েন্দা! ও নিশ্চয়ই আমার পিছু পিছু এসেছিল।”

দস্যু। তা’ যদি হয়, তা’ হ’লে তারা হাত ছাড়া হয়েছে। রায়মল্ল নিশ্চয়ই রাজারামের কাছ থেকে তাকে ছিনিয়ে নেবে। আর রাজারামেরও বোধ হয় প্রাণ যাবে।

দস্যু প্রকৃত কথাই বলিয়াছিল। যিনি একক, পঞ্চজন অসীমসাহসী কালান্তকতুল্য যমদূতের সঙ্গে যুদ্ধ করিতে ভরসা করেন, তিনি একটা মাত্র দস্যুকে তুচ্ছ বিবেচনা করেন। রাজারাম তাঁহার নিকট নগণ্য। তাহার হস্ত হইতে তারাকে উদ্ধার করিতে পারিবেন, এ কিছু বিচিত্র নয়, দুরূহ কাণ্ড নয়?

জগৎসিংহ ও সেই দস্যুদ্বয় মুহূৰ্ত্তমাত্র ব্যয় না করিয়া আপন আপন অশ্বের অনুসন্ধানে দ্রুতপদবিক্ষেপে ধাবিত হইল; কিন্তু সে অশ্বদ্বয় পূৰ্ব্বেই দৌড়িয়া কোথায় চলিয়া গিয়াছে, আর খুঁজিয়া পাওয়া গেল না। জগৎসিংহ নিরাশ হইয়া বলিলেন, “ও নিশ্চয়ই সেই রায়মল্ল গোয়েন্দা — আমাদের সব ষড়যন্ত্র এতদিনে নিষ্ফল হ’ল!”

তাহারা আবার সরাইখানায় ফিরিয়া গেল। তারাকে অপহরণ করিয়া যে দস্যু প্রাণ উপেক্ষা করিয়া অশ্বারোহণে বিদ্যুদ্বেগে ধাবিত হইয়াছিল, তাহারই অনুসরণে রায়মল্ল গোয়েন্দা প্রবৃত্ত হইলেন।যে ভয়ে তিনি দস্যুগণের সহিত প্রথমে বাদ-বিসম্বাদ করেন নাই, তাহাই ঘটিল। তারাকে লইয়া স্বচ্ছন্দে তাঁহার হাত ছাড়াইয়া একজন প্রস্থান করিল। তিনি তখন তাহার কিছু করিতে পারিলেন না। প্রাণের মায়া পরিত্যাগ করিয়া, তাহাকে সেই অন্ধকারে কেবল অশ্বের পদশব্দ লক্ষ্য করিয়া গিরিপথে ছুটিতে হইল। তিনি বুঝিয়াছিলেন, এবারে তাহারা তারাকে নিশ্চয়ই হত্যা করিবে। অন্যের না হউক, জগৎসিংহের পক্ষে তারা জীবিত থাকা এক প্রধান অন্তরায়। এ কথা যদি রাজারাম জানিতে পারিয়া থাকে, তাহা হইলে সে-ও অনায়াসে সে কার্য্য সমাধা করিয়া জগৎসিংহের নিকট পুরস্কার প্রাপ্ত হইতে পারে। তাই তিনি দস্যু রাজারামের পশ্চাৎগমন করা উচিত বিবেচনা করিলেন।

প্রভাত হইল। তথাপি রায়মল্ল সাহেব রাজারামকে ধরিতে পারিলেন না। অশ্বের পদচিহ্ন দেখিয়া তাঁহার স্পষ্ট প্রতীতি হইল, রাজারাম রাজেশ্বরী উপত্যকার দিকে গিয়াছে। সুতরাং তিনি আর তখন অধিক অগ্রসর হইলেন না। রাজেশ্বরী উপত্যকায় উপস্থিত হইবার সুগম পথ তিনি জানিতেন; সুতরাং অল্পসময়ের মধ্যেই তথায় উপস্থিত হইতে পারিবেন, এই আশায় তিনি বিশ্রামলাভার্থ ও মদ্যপ বৃদ্ধের বেশ পরিত্যাগ করিয়া অন্যবিধ ছদ্মবেশ ধারণ করিবার অভিপ্রায়ে পথিমধ্যস্থ একটি ক্ষুদ্র পান্থশালায় প্রবেশ করিলেন।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *