Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » রঘু ডাকাত : পুণ্যের জয় হইল (দ্বিতীয় খণ্ড) || Panchkari Dey » Page 10

রঘু ডাকাত : পুণ্যের জয় হইল (দ্বিতীয় খণ্ড) || Panchkari Dey

পাঠক মহাশয়ের স্মরণ থাকিতে পারে, যে সময়ে দস্যুগণ নিদ্রা যাইতেছিল, রায়মল্ল সাহেব সে সময়ে নাসিকাধ্বনি করিয়া আপন উপায় চিন্তা করিতেছিলেন। যখন তিনি দেখিলেন, জনপ্রাণীও আর জাগ্রত নাই, তখন ধীরে ধীরে শয্যা পরিত্যাগ করিয়া তারার অনুসন্ধানে চলিলেন। কিয়দ্দুর অগ্রসর হইয়াই তিনি দেখিলেন, পর্ব্বতের অন্তরালে একটি প্রকাণ্ড প্রস্তরনির্ম্মিত ভগ্ন-বাটী রহিয়াছে। স দেখিলেই বোধ হয়, যেন উহা একটি প্রাচীন দুর্গ। হয় ত পূর্ব্বকালে রাজস্থানের কোন রাজা গ্রীষ্মের সময়ে এই বাটীতে আসিয়া বাস করিতেন। বহুকাল আর তথায় কেহ বাস করে না। তাই বুঝি, এখন নিৰ্জ্জন ভগ্ন অট্টালিকা দস্যুগণের আবাসস্থলে পরিণত হইয়াছে।

ভগ্ন অট্টালিকার দ্বারে উপস্থিত হইবামাত্রই তিনি যেন অস্ফুট ক্রন্দনধ্বনি শুনিতে পাইলেন। তাঁহার মনে হইল, “এইখানেই নিশ্চয় দস্যুগণ তারাকে বন্দিনী করিয়া রাখিয়াছে। অভাগিনী না জানি, কত ক্লেশই ভোগ করিতেছে!” বিদ্যুদগতিতে তিনি বাটীমধ্যে প্রবিষ্ট হইলেন। দেখিলেন, সম্মুখস্থ বিস্তৃত প্রাঙ্গণ বনজঙ্গলে পরিব্যাপ্ত। কেবল সদরদরজার দুইপার্শ্বে দুইটিমাত্র কক্ষ বাসোপযোগী। তাহারই একটি ঘর হইতে সে অস্পষ্ট ক্রন্দনধ্বনি নিঃসৃত হইতেছিল। তিনি তৎক্ষণাৎ সেই কক্ষ মধ্যে প্রবেশ করিয়া অনুচ্চৈস্বরে ডাকিলেন, “তারা! তারা! তুমি এখানে?”

তারা জিজ্ঞাসা করিল, “কে আপনি?”

রায়মল্ল। তারা! আমি রায়মল্ল—আমি এসেছি! আমার কণ্ঠস্বরে আমায় চিনতে পারছ না! তুমি আমার সঙ্গে উঠে আসতে পারবে?

তারা অতিশয় আগ্রহের সহিত উত্তর করিল, “আপনি এসেছেন, তবে আমি বাঁচব। ডাকাতেরা আমায় বিনা অপরাধে খুন করতে পারবে না। আপনি আমায় উদ্ধার করুন, বাঁচান্। এরা আমার হাত পা বেঁধে এখানেই ফেলে রেখেছে।”

রায়মল্ল তৎক্ষণাৎ দীপশলাকা জ্বালিয়া গৃহের অবস্থা এবং তারার দশা দেখিয়া লইলেন। তারপরেই পকেট হইতে একখানি ছুরিকা বাহির করিয়া তারাকে বন্ধনমুক্ত করিলেন।

রায়মল্ল বলিলেন, “এস তারা। কথা কহিবার সময় নাই।”

তারা একটি কথাও কহিল না। রায়মল্ল সাহেব যাহা বলিলেন, সে তাহাই করিল। প্রাণের দায়ে ঝোপের পাশ দিয়া আড়ালে আড়ালে গুঁড়ি মারিয়া দুইজনে বহুদূর গেলেন। তাহার পর রায়মল্ল সাহেব বলিলেন, “আর ভয় নাই। এইবার আমরা নিরাপদ স্থানে এসে পড়েছি। রাজেশ্বরী উপত্যকা থেকে বাহির হ’বার দুটি পথ জানি। দস্যুরা তা’ জানে না। এইখানে আমরা খানিকক্ষণ লুকিয়ে থাকব। যদি দস্যুরা এদিক্ পর্য্যন্ত খুঁজতে আসে, তা’ হ’লে আমরা অনায়াসে পালাতে পারব। আর যদি এদিকে অনুসন্ধান না করে, তা’ হলে আমরা অন্য উপায় অবলম্বন করব। দস্যুরা —রাজেশ্বরী উপত্যকায় প্রবেশ করবার যে পথ জানে, আমিও সেই পথ দিয়া এসেছি। তার কিছু দূরেই বনের ভিতর একস্থানে আমার ঘোড়াটি বাঁধা আছে। আমার বোধ হয়, তোমাকে না দেখতে পেলেই দস্যুরা বুঝতে পারবে, আমি এখানে এসেছি। আমি যে তোমাকে উদ্ধার ক’রে নিয়ে পালিয়ে গেছি, তাও তাদের ধারণা হবে। তা’ হলে কখনই তা’রা এখানে নিশ্চিন্ত হ’য়ে বসে থাকবে না। তা’রা সকলে মিলে আমার পশ্চাদ্ধাবন করতে চেষ্টা করবে। আমরাও অনায়াসে যে পথ দিয়ে এসেছি, সেই পথেই বেরিয়ে যেতে পারব।”

তারা কাতরভাবে বলিল, “তার চেয়ে আমরা অন্য পথ দিয়ে পালাই না কেন?”

রায়মল্ল। অন্য পথ দিয়ে পালাতে গেলে আমাদের হেঁটে যেতে হবে। এ পথ দিয়ে বেরিয়ে যদি একবার ঘোড়ায় চড়তে পারি, তা’ হ’লে আর আমাদের ধরে কে?

অগত্যা তারা তাহাতে সম্মত হইল। তাহার পর দস্যুগণ রাজেশ্বরী উপত্যকা হইতে চলিয়া গেলে রায়মল্ল সাহেব তারাকে লইয়া তথা হইতে নিষ্ক্রান্ত হইলেন এবং অতি সত্বর উভয়ে এক অশ্বে আরোহণ পূর্বক প্রস্থান করিলেন। রায়মল্ল সাহেব বুঝিয়াছিলেন, দস্যুগণ তারাকে পাইবার জন্য বুঁদি গ্রাম পৰ্য্যন্ত যাইবে। তাই তিনি সেদিকে না গিয়া ভিন্ন পথ অবলম্বন করিলেন।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *