ওগো যৌবনতরী ,
এবার বোঝাই সাঙ্গ করে দিলেম বিদায় করি ।
কতই খেয়া , কতই খেয়াল ,
কতই – না দাঁড় – বাওয়া—
তোমার পালে লেগেছিল
কত দখিন হাওয়া !
কত ঢেউয়ের টল্মলানি
কত স্রোতের টান—
পূর্ণিমাতে সাগর হতে
কত পাগল বান !
এ পার হতে ও পার ছেয়ে
ঘন মেঘের সারি ,
শ্রাবণ – দিনে ভরা গাঙে
দু – কূল – হারা পাড়ি ।
অনেক খেলা , অনেক মেলা
সকলি শেষ ক’রে
চল্লিশেরই ঘাটের থেকে
বিদায় দিনু তোরে ।
ওগো তরুণ তরী ,
যৌবনেরই শেষ কটি গান দিনু বোঝাই করি ।
সে – সব দিনের কান্না হাসি ,
সত্য মিথ্যা ফাঁকি ,
নিঃশেষিয়ে যাস রে নিয়ে
রাখিস নে আর বাকি ।
নোঙর দিয়ে বাঁধিস নে আর
চাহিস নে আর পাছে—
ফিরে ফিরে ঘুরিস নে আর
ঘাটের কাছে কাছে ।
এখন হতে ভাঁটার স্রোতে
ছিন্ন পালটি তুলে
ভেসে যা রে স্বপ্ন – সমান
অস্তাচলের কূলে ।
সেথায় সোনা – মেঘের ঘাটে
নামিয়ে দিয়ো শেষে
বহুদিনের বোঝা তোমার
চিরনিদ্রার দেশে ।
ওরে আমার তরী ,
পারে যাবার উঠল হাওয়া , ছোট্ রে ত্বরা করি ।
যেদিন খেয়া ধরেছিলেম
ছায়াবটের ধারে ,
ভোরের সুরে ডেকেছিলেম
‘ কে যাবি আয় পারে’ ।
ভেবেছিলেম ঘাটে ঘাটে
করতে আনাগোনা
এমন চরণ পড়বে নায়ে
নৌকো হবে সোনা ।
এতবারের পারাপারে ,
এত লোকের ভিড়ে ,
সোনা – করা দুটি চরণ
দেয় নি পরশ কি রে ?
যদি চরণ পড়ে থাকে
কোনো একটি বারে
যা রে সোনার জন্ম নিয়ে
সোনার মৃত্যু – পারে ।