যে গল্প লেখা হয়নি
কেয়া বলেছিল সমীর কে-‘আমাদের দুজনকে নিয়ে একটা গল্প লেখ না! সে গল্প সমীর আজও লিখতে পারেনি, আসলে তা লেখার ক্ষমতাই আজ আর নেই। তখন ছিল, অসাধারণ লেখার ক্ষমতা ছিল তার ! সত্যি কথা বলতে কী সেদিন ছিল না সময় । সদ্যবিবাহিত সমীর কেয়ার স্পর্শে, গন্ধে, দিশাহারা দিন কাটাচ্ছিল।দিনরাত মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছিল তাদের । ভেসে যাচ্ছিল ভালোলাগায়, ভালোবাসায়। ভেবেছিল ভালোবাসার সৌরভটুকু বুকের মধ্যে ভরে নেবে, তারপর! লিখবে তাদের উন্মাদনার গল্প, উদ্দাম ভালোবাসার গল্প। তা রয়েছে বৈকি! আজও সেই সৌরভ রয়েছে বুকের ভেতর । সেই সুখ-স্মৃতি গুলি মণিমুক্তার মতো আজও রয়ে গেছে বুকের ভেতরে, একান্ত সংগোপনে।
জীবন থেকেই গল্প জন্ম নেয়। জীবনের চলার পথে প্রতিটি বাঁকে বাঁকে কতই না রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা! তা সেই অভিজ্ঞতা গুলো যে আলোর রোশনাই হয়ে আলোয় আলোয় ভরিয়ে দেবে, ভাসিয়ে নিয়ে যাবে সুখের সাগরে কিংবা গল্পের মতো মিলনাত্মক হয়ে উঠবে তা তো আর সবসময় হতে পারে না । হলোও না, চারবছর সংসার করার পর কেয়া যখন মেণ্টাল অ্যাসাইলামে চলে গেল , সেই জীবন জীবন হয়ে উঠতে পারলো না, সে গল্পও আর দানা বাঁধতে পারলো না কিছুতেই ! কেমন যেন ছড়িয়ে গেল।নিঃসঙ্গ জীবনে কেয়ার একাকীত্ব টুকুই কাল হয়েছিল তাদের জীবনে।সন্তানের জন্যও আকুলতা কম ছিল না! সমীর কাজের চাপেও বটে কিংবা যে কারণেই হোক, ঠিক সেভাবে কেয়াকে বোঝার চেষ্টাও করেনি কোনোদিন। একটা ঝোড়ো হাওয়ার মধ্যে দিয়ে পার হচ্ছিল কেয়া। একদিকে একঘেঁয়ে দাম্পত্যের দায়বদ্ধতা, কেয়ার একাকীত্ব আর সমীরের নির্বিকল্প ঔদাসীন্যই কেয়াকে অনিবার্য পরিণতির দিকে ঠেলে দিচ্ছিল ক্রমশ। তাই কেয়া অ্যাসাইলামে যাওয়ার পর সমীর যখন উপলব্ধি করতে পারলো ছিটকে পড়লো, পড়লো মুখ থুবড়ে । যন্ত্রনা বিদ্ধ পশুর মতো কাতরাতে কাতরাতে সেই রক্তচোঁয়ানো ব্যথা কোনোমতে বুকে সয়ে নেওয়া গেলেও লিখতে বসলেই চুইয়ে পড়া রক্তে বার বার খাতার পাতা গেছে ভিজে, আর প্রত্যেক বার নূতন করে রক্তাক্ত হয়েছে হৃদয় ! বাষ্পাকুল দুচোখের দৃষ্টি হয়েছে ব্যাহত। তাই শত চেষ্টাতেও সে গল্প আর কোনোদিনও লেখা হয়ে উঠল না সমীরের।