রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে খান্ খান্ হয়ে যায় একঝাঁক পেচার বিচ্ছিরি কর্কশ শব্দে।
সায়নীর নিদহীন চোখের কোলে ক্লান্তির কালচে ছোপ।
সমস্ত বুক জুড়ে অশান্ত অস্থিরতার দাপাদাপি।
সায়নীর দুচোখ বানভাসি।
হৃৎপিঞ্জরের বাম অলিন্দের খাঁজে খাঁজে বুকচাপা ব্যাথাময় স্মৃতির করুণ কোলাজ আচমকাই সায়নীর মনটাকে এফোঁর ওফোঁর করে দেয়।
আজ অফিস থেকে ফেরার পথে সায়ন্তনের সাথে দেখা দীর্ঘ দশ বছরের ব্যাবধানে।
সেই কলেজ জীবন থেকেই পরিচয়- বন্ধুত্ব।
খোলা আকাশের মতন স্বচ্ছ বন্ধুত্ব।
নির্ভয়ে পথ চলার,বিশ্বাসের একটি প্রত্যয়ী হাত।
একসাথে হৈচৈ ঘোরাফেরা বনভোজন।
বন্ধুরা কিন্ত দুজনকেই বুঝিয়েছিল,দ্যাখ,
সায়নী,সায়ন্তন,তোরা দুটিতে এবারে জুটি বেঁধে নে,দারুণ মানাবে বুঝলি?
সকোপে তেড়ে উঠেছিল সায়নী,বাজে বকিসনে, সায়ন্তন শুধুই আমার বন্ধু,আর কিছু নয়।
যদিও গলায় জোর টেনে কথাটা বলেছিল ,কিন্ত কেন জানি,
সায়নীর বুকে একটা অব্যক্ত চিনচিনে ব্যাথা টের পাচ্ছিল,কণ্ঠ শুকনো লাগছিলো।
সায়ন্তন এক ফুৎকারে কথাটা উড়িয়ে দিয়ে দরজা গলায় হেসে বল ওঠে,ওফ্ তোরা বাপু পারিস বটে,
আমি কেন খামোখা ওকে বিয়ে করতে যাবো শুনি,দেশে কি মেয়ের অভাব পড়েছে,চল্ তো–
কলেজের পাঠ সাঙ্গ হতেই যে যার ব্যক্তিগত জীবনে ব্যস্ত ,
দেখাশোনা কমতে থাকলো।
বাড়ি থেকে বিয়ের তোড়জোড় দেখে সায়নী সাফ জানিয়ে দিলো ,এখুনি বিয়ে করা তারপক্ষে অসম্ভব, সে চাকুরী করবে।
এদিকে,সায়ন্তনেরও বিয়েতে তীব্র অনীহা,অনেক দূরে চাকরী নিয়ে চলে গেলো।
দশবছর পর আজ একটা সেমিনারে দুজনেই মুখোমুখী।
অপ্রত্যাশিত আনন্দে দুজনের মুখেই আলোর আভা,একসাথে প্রশ্নে মুখর,কেমন আছিস?
তখনই জানতে পারলো,ওদের কেউ বিয়ে করেনি,কেন?
বারে,আর কাউকে মনে বসাতে পারলে তো?
সায়নীর চোখ ভিজে, বললে না কেন? যদি বলতে—
দুজনেই হেসে হাত হাত রাখে।