Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ম্যানহাটানে মিস্ট্রি মার্ডার || Sujan Dasgupta » Page 8

ম্যানহাটানে মিস্ট্রি মার্ডার || Sujan Dasgupta

পরদিন বিকেলে আবার ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্ট বাড়িতে এলেন। চেহারাটা যদিও পরিশ্রান্ত, কিন্তু মনে হল বেশ মুডেই আছেন। একেনবাবু জিজ্ঞেস করলেন, “একটু চা চলবে স্যার?”

“ও ইয়েস,” ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্ট বললেন, “দেয়ার ইজ নাথিং বেটার দ্যান এ কাপ অফ ইন্ডিয়ান টি।”

প্রমথর ফাজলামির হাত থেকে আজকাল ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্টও রেহাই পান না। আমাকে কাঁচা বাংলায় বলল, “মোলো যা! তোদের চা খাওয়া তো গরম জলে আড়াই সেকেন্ড টি ব্যাগ ডুবিয়ে। ইন্ডিয়ান টি-র মর্ম তোরা কী বুঝিস!”

ক্যাপ্টেন বাংলা না বুঝলেও ওঁর সম্পর্কেই যে কথা বলা হচ্ছে সেটা ধরতে পারলেন। বললেন, “ইয়েস প্রমঠ?”

প্রমথ অম্লানবদনে গুল মারল, “আপনার চায়ের ভালো টেস্ট, সেটাই বাপিকে বলছিলাম।”

“দ্যাটস নাইস অফ ইউ, থ্যাংকস।”

একেনবাবু কেটলিতে জল চাপিয়ে এসে বললেন, “ক্যাপ্টেন স্যার, আপনাকে একটু খুশি খুশি লাগছে?”

“ও ইয়েস, টু ডে ইজ নট এ ব্যাড ডে, ফাইনালি উই আর হেডিং সামহোয়্যার।”

“একটু বুঝিয়ে বলুন স্যার?”

“আজ সকালে পুলিশ কম্পিউটার চেক করে দেখলাম বুধবার পৌনে বারোটার সময় ডক্টর আনন্ড শর্মার গাড়ি মিউজিয়ামের উলটো দিকে পার্ক করা ছিল। অর্থাৎ অরুণ শেঠ ঠিক কথাই বলেছে।”

একেনবাবু জিজ্ঞেস করলেন, “ডক্টর শর্মাকে এ নিয়ে প্রশ্ন করেছেন স্যার?”

“হি ইজ ডিনায়িং এভরিথিং! ওঁর বক্তব্য, পুলিশ লাইসেন্স প্লেটের নম্বর টুকতে ভুল করেছে।”

“সেটা কি একেবারেই অসম্ভব?” আমি জিজ্ঞেস করলাম।

ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্ট আমার দিকে তাকিয়ে একটু অনুকম্পার হাসি হেসে বললেন, “পুলিশ শুধু লাইসেন্স প্লেটের নম্বর টোকে না, কী গাড়ি, তার কী রং- সব কিছুই নোট করে। গাড়িটা কালো মার্সিডিজ, অর্থাৎ ডক্টর শর্মার ঠিক যেরকম গাড়ি তাই।”

একেনবাবু বললেন, “তার মানে ডক্টর শর্মার এটা নিয়ে কোনো এক্সপ্ল্যানেশন নেই।”

“নো। বাট হি হ্যাজ অ্যানাদার নট দ্যাট-বিলিভেবল স্টোরি। ওঁর গাড়ির এক সেট চাবি নাকি কিছুদিন আগে হারিয়ে গিয়েছিল। ওঁর বক্তব্য সেই চাবি দিয়ে ওঁর অজান্তে নিশ্চয় কেউ গাড়িটা চালিয়েছে!”

“বলেন কি স্যার!”

“এখানেই শেষ নয়, সেই হারিয়ে যাওয়া চাবি ডক্টর শর্মা নাকি ফেরতও পেয়েছেন! যে গাড়িটা চালিয়েছে, সে-ই চাবিটা গ্লাভ কম্পার্টমেন্টে রেখে চলে গেছে! কী মনে হয়, বিশ্বাসযোগ্য এক্সপ্ল্যানেশন?”

“একেবারেই নয় স্যার,” বলে একেনবাবু ক্যাপ্টেনকে প্রশ্ন করলেন, “আচ্ছা, পৌনে বারোটার সময় ডক্টর শর্মা কোথায় ছিলেন?”

“উনি তো বলছেন নিজের বাড়িতেই ছিলেন। সাধারণত উনি রোগী দেখে সাড়ে এগারোটার সময় বাড়ি আসেন, আর অরুণ শেঠ আড্ডা দিতে আসে বারোটা নাগাদ। গল্প করতে করতে একসঙ্গে বসে ওঁরা লাঞ্চ খান। ওদিন উনি রেগুলার টাইমেই বাড়ি আসেন, কিন্তু অরুণ শেঠ না আসায় একা একাই লাঞ্চটা সারেন। তারপর ঘণ্টা দুয়েক বাড়িতে বিশ্রাম করে দুটো নাগাদ ম্যানহাটানে ওঁর ক্লিনিকে যান।”

“অর্থাৎ ওই দিন উনি একাই বাড়িতে ছিলেন স্যার?” একেনবাবু জিজ্ঞেস করলেন।

“এক্স্যাক্টলি। নো উইটনেস টু কনফার্ম দ্যাট। বাট দেয়ার ইজ মোর। ওঁর ম্যানহাটান ক্লিনিকের রিসেপশনিস্ট গ্লোরিয়া বেটসের সঙ্গে কথা বলে আমি জানতে পেরেছি বুধবার বারোটার একটু আগে বল্লভ শাহ ফোন করেছিলেন। ডক্টর শর্মার নাকি দুপুরে বল্লভ শাহের কাছে যাবার কথা ছিল, যাননি কেন জানতে। অর্থাৎ ব্যাপারটা দাঁড়াল এই, দুপুরে ডক্টর শর্মার এক জায়গায় যাবার কথা ছিল, কিন্তু উনি সেখানে যাননি। শুধু ওঁর গাড়িটা কী করে জানি ঠিক সময়ে সেখানেই গেছে!”

“মাই গুডনেস, স্যার! কিন্তু ওঁর রিসেপশনিস্ট এটা এতদিন রিপোর্ট করেননি কেন?”

“ওয়েল, ডক্টর শর্মা যখন ক্লিনিকে আসেন, তখন গ্লোরিয়া ফোন আসার কথাটা জানায়। ডক্টর শর্মা কথাটা শুনে খুব অবাক হন, অন্তত অবাক হবার ভান করেন। উনি বলেন গ্লোরিয়া নিশ্চয় ভুল শুনেছে। গ্লোরিয়া এমনিতে হয়তো পুলিশকে ঘটনাটা জানাত, কিন্তু অরুণ শেঠ দোষ স্বীকার করায় প্রয়োজনবোধ করেনি।”

“এবার বুঝলাম স্যার, আপনার খুশির কারণটা। গাড়ি যখন ওখানে ছিল, তখন অপরচুনিটি তো ছিল। কিন্তু মিস আর মোটিভ কি ধরতে পারা গেছে?”

“মোটিভ একটা আছে। এটা ওঁর মেয়ে সুজাতা আর অরুণ শেঠের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পেরেছি। বল্লভ শাহর ট্রিকারিতে ডক্টর শর্মা স্ত্রীর বিয়ের সমস্ত গয়না বন্ধক রেখে খুইয়েছিলেন, যা টাকা দিয়েও এখন ফেরত পাবার উপায় নেই! ওঁর স্ত্রী আজীবন সেই শোক ভুলতে পারেননি। অরুণ তার সাক্ষী। তিনি মারা গেছেন গত বছর। মনে হচ্ছে সেই কষ্টের তাড়না ধীরে ধীরে ডক্টর শর্মার অসহ্য হয়ে উঠেছিল। মিন্‌সটা মিসিং মানছি। কিন্তু ওটা তো একটা দড়ি মাত্র!”

ক্যাপ্টেন চলে যাবার পর থেকে একেনবাবু কেমন জানি নিষ্প্রভ, হয়তো কেসটা নিজে সলভ করতে পারেননি বলেই! আমার ধারণা অবশ্য একেনবাবুর জন্যেই ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্ট এত দূর এগোতে পেরেছেন। কেসটার টার্নিং পয়েন্ট নিঃসন্দেহে, অরুণ শেঠের প্রথমে দোষ স্বীকার করে পরে হঠাৎ অস্বীকার করা, যেটা একেনবাবুর সুজাতা শাহ সম্পর্কে ইনফর্মেশন দেবার জন্যেই ঘটেছে। কিন্তু এসব নিয়ে ওঁকে প্রবোধ দেওয়ার কোনো অর্থ হয় না।

লোকাল ইভনিং নিউজে ডক্টর শর্মাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের নিয়ে যাবার খবরটা ছিল। অর্থাৎ ব্যাপারটা এখন আর গোপনীয় কিছু নয়। তবে ফর্মালি ওঁকে অ্যারেস্ট করা হয়নি। রাত্রে প্রমথর ডিপার্টমেন্টে একটা সেমিনার ছিল। প্রমথ যখন বেরোচ্ছে একেনবাবু বললেন, “আমাকেও স্যার একটু লাইব্রেরিতে যেতে হবে।”

ওরা দু-জন চলে যেতেই আমি ঘরদোর পরিষ্কার করা শুরু করলাম। কাল সকালে দিলীপ কাপাদিয়া দলবল নিয়ে শুটিং করতে আসছেন। সেটা আবার হচ্ছে আমার অ্যাপার্টমেন্টে। নীচে প্রমথর অ্যাপার্টমেন্টের ইদানীং যা অবস্থা, পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন করে সেটা ভদ্রস্থ করে তুলতে তিন-চার দিন লেগে যাবে। সাড়ে ন’টা নাগাদ ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্টের ফোন। একেনবাবুকে নীচে ধরতে না পেরে আমার অ্যাপার্টমেন্টে ফোন করেছেন। একেনবাবু এখানেও নেই শুনে খবরটা আমাকেই দিলেন। ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্টের গলায় খুশি খুশি ভাব। ডক্টর শর্মার গাড়ি সার্চ করে ট্রাঙ্ক থেকে নাকি একটা দড়ির বান্ডিল পাওয়া গেছে। যে দড়িটায় ফাঁস দিয়ে বল্লভ শাহকে হত্যা করা হয়েছে সেই দড়িটা নাকি এই বান্ডিল থেকেই কাটা হয়েছিল! দারুণ খবর- মোটিভ, অপরচুনিটি সঙ্গে এখন মিসটাও পাওয়া গেল! ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্টের উৎফুল্ল হওয়ার কারণ বুঝতে এতটুকু অসুবিধা হল না।

“আরেকটা কথা,” ক্যাপ্টেন বললেন, “একেন্ড্রাকে জানিয়ে দিয়ো ফোন কলটা বুধবার সাড়ে এগারোটার সময় করা হয়েছিল।”

“কোন কলটা?”

“হি উইল আন্ডারস্ট্যান্ড।”

ইন ফ্যাক্ট প্রশ্নটা করামাত্র আমারও মনে পড়ল। নিশ্চয় ডক্টর শর্মার ক্লিনিকে বল্লভ শাহের ফোন করার কথাটা বলছেন।

এদিকে সারাদিন কাজ করে আমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে। মেসেজটা নীচে রেখে এসে শুয়ে পড়লাম।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *