Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ম্যানহাটানে মিস্ট্রি মার্ডার || Sujan Dasgupta » Page 5

ম্যানহাটানে মিস্ট্রি মার্ডার || Sujan Dasgupta

পিৎজা খাচ্ছি বটে, কিন্তু মাথায় ঘুরছে বল্লভ শাহের মৃত্যু। প্রমথ ইতিমধ্যে একবার দিলীপ কাপাদিয়াকে ধরার চেষ্টা করেছে, যদি মৃত্যুর খবর না পেয়ে থাকেন! বল্লভ শাহ যে মৃত্যুর আশঙ্কা করছিলেন সেটা তো ওঁর কাছ থেকেই আমাদের শোনা। দিলীপ কাপাদিয়া অবশ্য বাড়িতে ছিলেন না, শুটিং করতে কোথায় জানি গিয়েছিলেন! ফোন ধরেছিলেন ওঁর মা। প্রমথ অবশ্য বুদ্ধি করে বল্লভ শাহের খবরটা ওঁকে দেয়নি। কী হবে বৃদ্ধাকে শুধু শুধু একটা দুঃসংবাদ দিয়ে!

আমি এদিকে একেনবাবুকে উসকাচ্ছিলাম ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্টকে ফোন করে লেটেস্ট ডেভালাপমেন্ট কী হয়েছে খোঁজ নিতে। একেনবাবুর সঙ্গে ক্যাপ্টেনের এখন খুবই দোস্তি, প্রায়ই দু-জনে একসঙ্গে লাঞ্চ -টাঞ্চ খান। এমনকী গোলমেলে কেস এলে একেনবাবুর অ্যাডভাইসও ক্যাপ্টেন নেন, সুতরাং ফোন করলে নিশ্চয় সব খবরই দেবেন। একেনবাবু ফোন করতেই যাচ্ছিলেন, হঠাৎ জিজ্ঞেস করলেন, “স্যার, আজ কত তারিখ?”

“দশ।”

“দশ!” উনি আঁতকে উঠলেন, “সর্বনাশ স্যার, আমার হেলথ ইন্সিয়োরেন্স গতকাল এক্সপায়ার করে গেছে!”

আমি বললাম, “তাতে কী হয়েছে, কালকে এজেন্টকে ফোন করে রিনিউ করিয়ে নেবেন! ইট ইজ নট এ বিগ ডিল।”

“কী বলছেন স্যার! আজ রাত্রে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যায়? উইদাউট এ হেলথ ইন্সিয়োরেন্স, আই উইল বি ডেড স্যার!”

দুশ্চিন্তাটা অমূলক নয়, আমেরিকাতে হেলথ ইন্সিয়োরেন্স ছাড়া থাকা বিপজ্জনক। হাসপাতালের খরচ এক এক দিনেই চার-পাঁচশো বা তার অনেক গুণ বেশি হতে পারে… এবার টাকায় হিসেব করুন! কিন্তু তাই বলে এক রাত ইন্সিয়োরেন্স ছাড়া কাটাতে এত কী ভয় বুঝলাম না!

প্রমথ ধমকাল, “মশাই, চেহারা তো টিংটিঙে, ব্লাড প্রেশার নর্মাল, কোলোস্টরালও নিশ্চয়ই লো— আপনার দুশ্চিন্তা কীসে?”

তাও একেনবাবু এমন ঘ্যানঘ্যান জুড়লেন বাধ্য হয়ে বললাম, “এতই যখন দুশ্চিন্তা, আমার এজেন্ট বব ল্যাশকে ফোন করতে পারেন। খুব হেল্পফুল, উইক এন্ডেও দিনে-রাতে ফোন ধরে। যদি সম্ভব হয় নিশ্চয় সাহায্য করবে।”

একেনবাবু উৎফুল্ল হয়ে বললেন, “নম্বরটা তাহলে দিন স্যার।”

“বলছি, ফোনটা তুলুন… আমাদের এরিয়া কোড দিন, তারপর টিপুন বব ল্যাশ।”

“বুঝলাম না স্যার, আমি তো নম্বরটা চাইছি!”

“তাই তো দিলাম, প্রথমে বি-ও-বি, তারপর এল-এ-এস-এইচ। উত্তর না পেলে আমার নাম করে একটা মেসেজ রেখে দেবেন।”

“এখনও বুঝলাম না স্যার।”

একেনবাবুর বিস্ময়টা উপভোগ করলাম। “বুঝতে পারছেন না? ল্যান্ড ফোনের বাটনগুলো দেখুন। প্রত্যেকটা বাটনে নম্বর ছাড়া তিনটে করে লেটার… দেখতে পাচ্ছেন?”

“ও, হ্যাঁ স্যার, এগুলো আগেও দেখেছি। দেশের ডায়ালে তো এগুলো থাকে না, তাই ইম্পর্টেন্সটা ঠিক বুঝিনি। কিন্তু দাঁড়ান স্যার, সবগুলো বাটনে কিন্তু লেটার নেই।”

“তাতে কিছু এসে যায় না। প্রথমে বব, মানে BOB অর্থাৎ টু সিক্স টু টিপুন, তারপর ল্যাশের নামের লেটারগুলো খুঁজে খুঁজে টিপুন, ওটাই হল ওর নম্বর।”

“আই সি! দাঁড়ান দেখি, L হচ্ছে ফাইভ, A হচ্ছে টু, S হচ্ছে সেভেন, আর H হচ্ছে ফোর। কিন্তু স্যার A আর B- দুটোই তো হচ্ছে টু?”

“ওটা নিয়ে ভাববেন না, এদেশের টেলিফোন সিস্টেম ঠিক বুঝে যাবে।”

“অ্যামেজিং স্যার! তার মানে ওঁর নম্বর হল টু সিক্স টু ফাইভ টু সেভেন ফোর। দিস ইজ ক্লেভার স্যার। নামটা মনে রাখা নম্বরের থেকে অনেক সহজ। আর নাম মনে রাখলেই নম্বরটাও জানা হয়ে গেল। নাঃ, ভেরি ভেরি ক্লেভার! এই না হলে আর ইন্সিয়োরেন্স এজেন্সি খুলেছেন!”

ফোনে বব-এর সঙ্গে কথা বলে একেনবাবু আরও ইম্প্রেসড। আমাকে বললেন, “যাই বলুন স্যার, থিংস মুভ ফাস্ট হিয়ার। আজ কলকাতা হলে… নাঃ, কীসের সঙ্গে কীসের তুলনা!”

আমি খোঁচা দিলাম, “ক’দিন আগেই তো সাহেবদের নিন্দায় পঞ্চমুখ হয়েছিলেন।”

“হয়েছিলাম বুঝি! কী করব স্যার, দোষে-গুণে হচ্ছে মানুষ। পজিটিভ থাকলেই স্যার, নেগেটিভ থাকতে হবে। ঠিক কিনা?”

চুপ করে রইলাম।

“যাই হোক, ভাগ্য করে বাপ-মা ওঁর এই নামটা রেখেছিলেন স্যার!”

“কার কথা বলছেন, বব-এর?”

“হ্যাঁ স্যার, ভেবে দেখুন যদি ওঁর আড়াই-গজি নাম হত, তাহলে সব কিছু জলে যেত!”

“আপনিও তো মশাই ভাগ্যবান,” প্রমথ টিপ্পনী কাটল। সেন একেন, এস ই এন এ কে ই এন। মাপা সাত অক্ষরে! যখন এদেশে ডিটেকটিভ এজেন্সি খুলবেন, মনে করে নিউ ইয়র্ক টেল-কে হাজার ডলার দিয়ে ফোন নম্বরটা নামের অক্ষর মিলিয়ে করিয়ে নেবেন।

“বলেন কী স্যার, অত টাকা লাগে?”

“অত লাগে কিনা জানি না, তবে আপনার কাছে হয়তো বেশি চাইবে!”

“ইডিয়টামি করিস না।” আমি প্রমথকে ধমক দিলাম। তারপর একেনবাবুকে বললাম, “কই, আপনি ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্টকে ফোন করলেন না?”

“করছি স্যার, করছি। কিন্তু একটা কথা স্যার,” বলে প্রমথর দিকে তাকিয়ে বললেন, “ক্যাপ্টেনের ইনফর্মেশনগুলো কিন্তু আর কাউকে জানাবেন না। তাহলে উনি-আমি সবাই বিপদে পড়ব।”

প্রমথ বলল, “এটা কী হল মশাই, সতর্কবাণীটা শুধু আমার দিকে তাকিয়ে করছেন কেন জানতে পারি?”

“কারণ, তোর পেট পাতলা বলে।” একেনবাবু কিছু বলার আগেই বলে উঠলাম।

মিনিট পাঁচেকের মতো ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্টের সঙ্গে একেনবাবুর কথা হল। ক্যাপ্টেনের কোনো কথা কানে না এলেও একেনবাবুর কথা থেকে ব্যাপারটা আঁচ করতে পারছিলাম। মিসিং পয়েন্টগুলো পরে একেনবাবু পূরণ করে দিলেন। যেটা বুঝলাম, বল্লভ শাহ দুপুর বারোটা নাগাদ মারা গেছেন। পোস্ট-মর্টেম শেষ হতে অবশ্য এক- আধ দিন লাগবে। তবে ক্যাপ্টেনের ধারণা মারা গেছেন অ্যাসফিক্সিয়েশনের ফলে, অর্থাৎ দড়ির ফাঁসে দম বন্ধ হয়ে। ডেডবডি পাওয়া গেছে বসার ঘরে সোফার ওপর, গলায় তখনও দড়ির ফাঁসটা লাগানো। দরজা ভেঙে বাড়িতে কেউ ঢোকেনি। বল্লভ শাহ একাই বাড়িতে ছিলেন। ওঁর বাড়িতে যে পোর্টারিকান মেয়েটি কাজ করত, সে কিছুদিনের জন্য ছুটি নিয়ে দেশে গেছে। সুতরাং মনে করা যেতে পারে বল্লভ শাহ আততায়ীকে চিনতেন, নিজেই দরজা খুলে দিয়েছিলেন। ঘরের সব কিছুই অটুট অবস্থায়। চুরি বা ডাকাতির কোনো উদ্দেশ্য ছিল বলে মনে হয় না। ধস্তাধস্তির বিশেষ কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। আরেকটা ইন্টারেস্টিং পয়েন্ট, পুলিশ বল্লভ শাহের বাড়িতে অরুণ শেঠের কোনো ফিঙ্গারপ্রিন্ট পায়নি। জজ অবশ্য অরুণ শেঠকে জামিন দেননি। যে লোকটা বুক ফুলিয়ে সগর্বে টিভি ক্যামেরার সামনে সবাইকে জানিয়েছে ‘হ্যাঁ, আমি খুন করেছি,’ তাকে জামিন দিতে যাবে কোন আহাম্মক! ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্টের লোক এখনও অরুণ শেঠকে ঠেসে ইন্টারোগেট করছে। সাইকিয়াট্রিক ইভ্যালুয়েশনও চলছে। কোনো অ্যালিবাই আছে কিনা তার খোঁজও পুলিশ করছে।

আমি একেনবাবুকে বললাম, “শুধু আপনি নয়, মনে হচ্ছে ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্ট ও অরুণ শেঠকে আততায়ী বলে মেনে নিতে পারছেন না।”

“ঠিকই ধরেছেন স্যার, ব্যাপারটা পাজলিং। কেউ যদি খুন করে সবার সামনে দোষ স্বীকার করবে বলেই ঠিক করে থাকে, তাহলে সে এত সাবধানে ফিঙ্গার প্রিন্ট না রেখে খুন করতে যাবে কেন?”

“কারণ লোকটা অর্ধোন্মাদ!” প্রমথ বলল।

“দ্যাটস দ্য ওনলি এক্সপ্ল্যানেশন স্যার। বাট ইট ইজ ইনডিড পাজলিং।” কথাগুলো বলে মাথা চুলকোতে চুলকোতে একেনবাবু শুতে চলে গেলেন।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *