Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ম্যানহাটানে মিস্ট্রি মার্ডার || Sujan Dasgupta » Page 3

ম্যানহাটানে মিস্ট্রি মার্ডার || Sujan Dasgupta

শনিবার রাত্রে অবিনাশের বাড়িতে আমাদের সবার নেমন্তন্ন ছিল। অবিনাশ একসময় প্রমথর সঙ্গে অ্যাপার্টমেন্ট শেয়ার করত। মাস ছয়েক হল মস্ত বড়ো একটা বাড়ি কিনে লং আইল্যান্ডে চলে গেছে।

বিশাল পার্টি, কাউকেই প্রায় চিনি না। প্রচণ্ড বোর হচ্ছিলাম আর অবিনাশের মুণ্ডুপাত করছিলাম নেমন্তন্ন করেছে বলে! ওখানেই পরিচয় হল আনন্দ গুপ্ত বলে এক ভদ্রলোকের সঙ্গে। উনিই এসে আমাদের সঙ্গে আলাপ করলেন। ভদ্রলোক একজন সিএফএ, যার অর্থ সার্টিফায়েড ফাইনান্সিয়াল অ্যাডভাইজার- লোকদের টাকাকড়ি নিয়ে অ্যাডভাইস দেন। মনে হয় ওঁর মতলব ছিল আমাদের ক্লায়েন্ট বানানো। ইমপ্রেস করার জন্য স্টক মার্কেটে কী করে টাকা বানানো যায় বোঝাচ্ছিলেন- লেভারেজ বায়িং, মার্জিন, শর্ট-সেলিং, ইত্যাদি, ইত্যাদি- যার প্রায় কিছুই বুঝতে পারছিলাম না! ঠিক এইসময়ে শুনি বিকট চিৎকার! যে লোকটা চেঁচাচ্ছিল তার বয়স বছর পঁচিশেক হবে। চুলগুলো অবিন্যস্ত, চোখে-মুখে উন্মাদ উন্মাদ ভাব! কয়েক জন মিলে লোকটাকে শান্ত করার চেষ্টা করছিল। কোথায় কী, লোকটা চেঁচিয়েই চলেছে, “হি বেটার নট কাম হিয়ার ইফ হি কেয়ার্স ফর হিজ লাইফ!”

আমাদের কয়েকটা চেয়ার দূরে বসেছিলেন এক বয়স্ক ভদ্রলোক, তিনি উঠে লোকটাকে ধমক দিলেন, “অরুণ, ডোন্ট টক সিলি! এটা ছেলেমানুষি করার জায়গা নয়!”

ধমকে বোধহয় একটু কাজ হল। অরুণ ছেলেটা একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল, “কিন্তু ডক্টরসাব, আপনি তো জানেন ওই লোকটার কী জঘন্য চরিত্র! উই কান্ট ওয়েলকাম হিম হিয়ার!”

এটা শুনে দেখলাম ডক্টরসাবের চোয়ালটা শক্ত হয়ে উঠল। নিজেকে খুব সংযত রেখে বললেন, “এটা অবিনাশের বাড়ি, কে এখানে আসবে না আসবে অবিনাশের ডিসিশন। তোমার-আমার বা অন্য কারোর নয়!”

ইতিমধ্যে আরও কয়েক জন দেখলাম অরুণ ছেলেটাকে কিছু বোঝাবার চেষ্টা করছেন। কী হচ্ছে জানতে ইচ্ছে করলেও, অভদ্রতা হবে বলে যেখানে ছিলাম সেখানেই বসে রইলাম। ইতিমধ্যে অবিনাশও এসে হাজির। ও এসে কী সব বলাতে সব কিছু থিতিয়ে গেল!

আমরা একেবারে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি দেখে আনন্দ গুপ্ত বললেন, “ছেলেটার নাম অরুণ শেঠ, অবিনাশের দূর সম্পর্কের ভাই হয়।”

“ডক্টরসাব ভদ্রলোকটি কে স্যার?” একেনবাবু প্রশ্ন করলেন।

“হি ইজ মাই নেম সেক, ডক্টর আনন্দ শর্মা। ম্যানহাটানে প্র্যাকটিস করেন।” আনন্দ গুপ্ত জবাব দিলেন।

“আর অরুণবাবু, উনি কী করেন স্যার?”

“আই অ্যাম নট শিওর অরুণ এখন কী করে! বোধহয় কোনো ব্যাঙ্কে কাজ করছে, অন্তত আগে করত। ছেলেটা বরাবরই একটু খ্যাপা।”

পরে অবিনাশের কাছে ব্যাপারটা ভালোভাবে জানতে পারলাম। অরুণের সঙ্গে বল্লভ শাহর সম্পর্ক হচ্ছে সাপে-নেউলে। হঠাৎ কে জানি ওকে খ্যাপাবার জন্যেই বোধহয় বলেছিল বল্লভ শাহও পার্টিতে আসছে। তারই রিয়্যাকশন আমরা দেখেছি!

“রিয়্যাকশনটা কি একটু অস্বাভাবিক নয়?” আমি জিজ্ঞেস করলাম।

“অরুণের পক্ষে নয়,” অবিনাশ জবাব দিল। “ও বরাবরই একটু ছিটগ্রস্ত। হঠাৎ খেপে উঠলে কী বলে না বলে- ঠিক থাকে না। তবে পাঁচ-দশ মিনিট বাদেই আবার ঠান্ডা।”

“বল্লভ শাহের ওপর ওঁর এত রাগের কারণটা কী স্যার?” একেনবাবু প্রশ্ন করলেন।

“আই ডোন্ট এক্স্যাক্টলি নো। তবে এটুকু আপনাকে বলতে পারি, বল্লভ শাহ হ্যাজ এ ভেরি ফিউ ফ্রেন্ডস ইন দ্য এন্টায়ার ওয়ার্ল্ড।”

“কেন স্যার?”

“দ্যাটস অল আই নো।” বুঝলাম অবিনাশ এ বিষয়ে আর কিছু বলতে চায় না।

আমরা যখন ফিরছি অবিনাশ বলল, “একটা উপকার করতে পারবে? আমার মায়ের এক বন্ধু কুইন্সে থাকেন, তাঁকে একটু বাড়ি পৌঁছে দিতে হবে। আমিই দিতাম, কিন্তু পার্টি চলছে তো তাই…”

“আরে তাতে কী হয়েছে, নিশ্চয়।”

ভদ্রমহিলার বয়স প্রায় সত্তরের কাছাকাছি, চুলগুলো সব সাদা, খুব শান্ত চেহারা। আমাদের বললেন, “বেটা, তোমাদের অসুবিধা হবে না তো?”

পাছে প্রমথ উলটোপালটা কিছু বলে, আমি তাড়াহুড়ো করে বললাম, “একদমই না।”

“আসলে আমার ছেলের আসার কথা ছিল, কিন্তু কাজ নিয়ে খুব ব্যস্ত। খালি কাজ, কাজ, আর কাজ। বেটার দিলে কোনো শাস্তি নেই।”

মনে মনে ভাবলাম মায়ের মন!

“কী কাজ করেন আপনার ছেলে?” প্রমথ জিজ্ঞেস করল।

“ছবি করে, ফিল্ম।”

আরে! এবার আমি বুঝতে পারলাম। আসলে চেহারা দেখেই ধরা উচিত ছিল। খুব মিল আছে দিলীপ কাপাদিয়ার সঙ্গে!

“আপনার ছেলে কি মিস্টার কাপাদিয়া?”

“হ্যাঁ, তোমরা ওকে চেনো?”

ভদ্রমহিলা ভারি সুন্দর গল্প করতে পারেন। উনি নিজেও একসময়ে সিনেমায় অভিনয় করেছেন। ছোটোখাটো রোলেই অবশ্যি। এদেশে এসে প্রায় ষাট বছর বয়সে মেক-আপ করানোর আর্ট শিখেছেন। ছেলের সব ফিল্মেই উনি কস্টিউম সিলেকশন আর মেক-আপের ভার নেন। তবে বুঝলাম এবারের এত বড়ো প্রজেক্ট নিয়ে ওঁর দুশ্চিন্তা আছে।

“আমি ওকে বলেছি, আর এরকম বড়োসড়ো ব্যাপারে যেয়ো না, মনের শান্তি সব নষ্ট হবে!” বেশ কয়েক বার বললেন কথাটা।

মিসেস কাপাদিয়াকে নামাতে গিয়ে দিলীপ কাপাদিয়ার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। উনি কোত্থেকে যেন ফিরছিলেন। ছেলেকে দেখামাত্র মিসেস কাপাদিয়া আমাদের এত অজস্র প্রশংসা শুরু করলেন, কী বলব! দিলীপ কাপাদিয়া হাসি হাসি মুখে সেগুলো শুনে বললেন, “মা, তোমাকে এঁদের সম্পর্কে কিচ্ছু বলতে হবে না, এঁদের সবাইকে আমি চিনি।” তারপর আমাদের অনেক ধন্যবাদ দিলেন, মাকে পৌঁছে দেবার জন্যে

মিসেস কাপাদিয়ার ইচ্ছে ছিল যে আমরা একটু মিঠাই খেয়ে যাই। পরে আরেক দিন আসব কথা দেবার পর মুক্তি পেলাম। গাড়িটা ঘুরিয়ে নিতে নিতে বাড়িটার দিকে এক বার তাকালাম। দোতলা বাড়ি। এদেশে এ ধাঁচটাকে বলা হয় কলোনিয়াল। কিন্তু অবিনাশের বাড়ির তুলনায় নিতান্তই সাদামাটা।

প্রমথও নিশ্চয়ই একই কথা ভাবছিল। বলল, “বাড়িটা মোটেই ইম্প্রেসিভ নয়। কিন্তু গাড়িটা দেখলি, মার্সিডিজ ৫০০ এসএল, একেবারে বাঘের বাচ্চা! কী রে, তাই না?”

‘না’ বলি কী করে! ঝকঝকে কালো মার্সিডিজটা দেখলেই বোঝা যায় আমাদের মতো স্কুলমাস্টারের গাড়ি নয়।

একেনবাবু আমার মুখের দিকে এক ঝলক তাকিয়ে প্রমথকে জিজ্ঞেস করলেন, “আচ্ছা স্যার, গাড়িটার দাম কত হবে?”

“হাজার চল্লিশেক হবে, মোর অর লেস।”

“চল্লিশ হাজার!” চটপট ক্যালকুলেশন করে একেনবাবু বললেন, “তার মানে

তো প্রায় পঁচিশ লাখ টাকা! তাই না স্যার?”

“তা তো বটেই।” আমি একটু বিরসভাবেই উত্তর দিলাম।

“মাই গুডনেস স্যার! ও গাড়িতে এমন কী আছে যা আপনার এই টয়োটা গাড়িটাতে নেই?”

প্রমথ আমার গাড়ি সবচেয়ে বেশি চড়ে, আর সবচেয়ে গালমন্দ করে! বলল, “কীসের সঙ্গে কীসের তুলনা মশাই—উটের পিঠের কুঁজ আর পূর্ণিমার চাঁদ! একবার উঠে দেখুন ও গাড়িতে। ওটা এই টয়োটা টার্সেলের মতো টিনের বাক্স নয়! মার্সিডিজে পাবেন লাক্সরিয়াস ইন্টিরিয়র, না আছে ঝাঁকুনি, না আছে শব্দ। তার ওপর প্রিসিশন ক্রুজ কন্ট্রোল, লেইন অ্যাসিস্ট, টার্বো চার্জার, সুপার-ডুপার এসি, ফ্যান্টাস্টিক অডিও সিস্টেম, আরও সব কী কী…।”

“দাঁড়ান স্যার, দাঁড়ান… ওটা কি আকাশে উড়ে যায়, না এই গাড়ির মতো রাস্তায় গড়িয়ে গড়িয়ে চলে?”

প্রমথকে সেকেন্ডের জন্যে থতমত খেতে দেখে আমি বললাম, “গড়িয়ে গড়িয়ে চলে।”

“তাহলে বলব স্যার, এসবের জন্য অতগুলো টাকা খরচা করা ফুলিশ, টোটালি ফুলিশ!”

আমার সামর্থ নেই। তবু মনে হয়, সামর্থ থাকলেও আমি কখনো গাড়িতে অত টাকা খরচা করতাম না। তাই একেনবাবুর কথা শুনে ভারি ভালো লাগল। আরও ভালো লাগল প্রমথটা গজগজ করছে দেখে!

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *