থলির ভেতর হাত ঢেকে
শাশুড়ি বিড়বিড় বিড়বিড় করে মালা জপছেন,
বউ
গটগট গটগট করে হেটে গেল |
আওয়াজটা বেয়াড়া, রোজকার আটপৌরে নয় |
যেন বাড়িতে ফেরিঅলা ডেকে
শখ করে নতুন কেনা হয়েছে |
সুতরাং
মালাটা থেমে গেল ; এবং
চোখ দুটো বিষ হয়ে
ঘাড়টাকে হেলিয়ে দিয়ে যেদিকে বউ যাচ্ছিল
সেইদিকে ঢলে পড়ল |
নীচের চোয়ালা সামনে ঠেলে
দাঁতে দাঁত লাগল |
বিলক্ষণ রাগ দেখিয়ে
পরমুহূর্তেই শাশুড়ির দাঁত চোখ ঘাড় চোয়াল
যে যার জায়গায় ফিরে এল |
তারপর সারা বাড়িটাকে আঁচড়ে আঁচড়ে
কলতলায়
ঝমর ঝম খনর খন ক্যাঁচ ঘ্যাঁষঘিঁষ ক্যাঁচর ক্যাঁচর
শব্দ উঠল |
বাসনগুলো কোনোদিন তো এত ঝাঁঝ দেকায় না—
বড় তেল হয়েছে |
ঘুরতে ঘুরতে মালাটা দাঁড়িয়ে পড়ল |
নোড়া দিয়ে মুখ ভেঙে দিতে হয়—
মালাটা একবার ঝাঁকুনি খেয়ে
আবার চলতে লাগল |
নাকে অস্ফুট শব্দ ক’রে
থলির ভেতর পাঁচটা আঙুল হঠাৎ
মালাটার গলা টিপে ধরল—
মিন্ সের আক্কেলও বলিহারি !
কোথ্বকে এক কালো অলুক্ষণে
পায়ে খুঅলা ধিঙ্গি মেয়ে ধরে এনে
ছেলেটার গলায় ঝুলিয়ে দিয়ে চলে গেল |
কেন ? বাংলাদেশে ফরসা মেয়ে ছিল না ?
বাপ অবশ্য দিয়েছিল থুয়েছিল—
হ্যাঁ, দিয়েছিল !
গলায় রসুড়ি দিয়ে আদায় করা হয়েছিল না ?
এবার মালাটাকে দয়া করে ছেড়ে দেওয়া হল |
শাশুড়ির মুখ দেখে মনে হচ্ছিল
থলির ভেতর হাত ঢুকিয়ে দিয়ে এই সময়ে
কী যেন তিনি লুকোচ্ছিলেন |
একটা জিনিস—
ক’মাস আগে বউমা
মরবার জন্যে বিষ খেয়েছিল |
ভাশুরপো ডাক্তার না হলে
ও-বউ এ-বংশের গালে ঠিক চুনকালি মাখাত |
কেন ? অসুখ করে মরলে কী হয় ?
ঢঙি আর বলেছে কাকে !
হাতে একরাশ ময়লা কাপড় নিয়ে
কালো বউ
গটগট গটগট করে সামনে দিয়ে চলে গেল |
নাঃ, আর বাড়তে দেওয়া ঠিক নয় |
‘বউমা—’
‘বলুন |’
উঁহু, গলার স্বরটা ঠিক কাছা-গলায়-দেওয়ার মতো নয়,
বড্ড ন্যাড়া |
হঠাৎ এই দেমাক এল কোথ্বেকে ?
বাপের বাড়ির কেউ তো
ভাইফোঁটার পর আর এদিক মাড়ায় নি ?
বাড়িটা যেন ঝড়ের অপেক্ষায়
থমথম করছে |
ছোট ছেলে কলেজে ;
মেজোটি সামনের বাড়ির রোয়াকে ব’সে
রাস্তায় মেয়ে দেখছ্
ফরসা ফরসা মেয়ে
বউদির মতো ভূষণ্ডি কালো নয় |
বালতি ঠনঠনিয়ে
বউ যেন মা-কালীর মতো রণরঙ্গিনী বেশে
কোমরে আঁচল জড়িয়ে
চোখে চোখ রেখে শাশুড়ির সামনে দাঁড়াল |
শাশুড়ির কেমন যেন
হঠাৎ গা ছমছম করতে লাগল |
তাড়াতাড়ি থলির মধ্যে হাতটা লুকিয়ে ফেলে
চোখ নামিয়ে বললেন আচ্ছা থাক, এখন যাও |
বউ মাথা উঁচু ক’রে
গটগট গটগট করে চলে গেল !
তারপর একা একা পা ছড়িয়ে ব’সে
মোটা চশমায় কাঁথা সেলাই করতে করতে
শাশুড়ি এ-ফোঁড় ও-ফোঁড় হয়ে ভাবতে লাগলেন
বউ হঠাৎ কেন বিগড়ে গেল
তার একটা তদন্ত হওয়া দরকার |
তারপর দরজা দেবার পর
রাত্রে
বড় ছেলের ঘরে আড়ি পেতে
এই এই কথা কানে এল—
বউ বলেছে : ‘একটা সুখবর আছে |’
পরের কথাগুলো এত আস্তে যে শোনা গেল না |
খানিক পরে চকাস চকাস শব্দ,
মা হয়ে আর দাঁড়াতে লজ্জা করছিল |
কিন্তু তদন্তটা শেষ হওয়া দরকার—
বউয়ের গলা, মা কান খাড়া করলেন |
বলছে : ‘দেখো, ঠিক আমার মতো কালো হবে |’
এরপর একটা ঠাস করে শব্দ হওয়া উচিত |
ওমা, বউমা বেশ ডগমগ হয়ে বলছে :
‘কী নাম দেব, জান ?
আফ্রিকা |
কালো মানুষেরা কী কাণ্ডই না করছে সেখানে ||’