Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » মেজাজ || Subhash Mukhopadhyay

মেজাজ || Subhash Mukhopadhyay

থলির ভেতর হাত ঢেকে
শাশুড়ি বিড়বিড় বিড়বিড় করে মালা জপছেন,
বউ
গটগট গটগট করে হেটে গেল |

আওয়াজটা বেয়াড়া, রোজকার আটপৌরে নয় |
যেন বাড়িতে ফেরিঅলা ডেকে
শখ করে নতুন কেনা হয়েছে |

সুতরাং
মালাটা থেমে গেল ; এবং
চোখ দুটো বিষ হয়ে
ঘাড়টাকে হেলিয়ে দিয়ে যেদিকে বউ যাচ্ছিল
সেইদিকে ঢলে পড়ল |
নীচের চোয়ালা সামনে ঠেলে
দাঁতে দাঁত লাগল |

বিলক্ষণ রাগ দেখিয়ে
পরমুহূর্তেই শাশুড়ির দাঁত চোখ ঘাড় চোয়াল
যে যার জায়গায় ফিরে এল |
তারপর সারা বাড়িটাকে আঁচড়ে আঁচড়ে
কলতলায়
ঝমর ঝম খনর খন ক্যাঁচ ঘ্যাঁষঘিঁষ ক্যাঁচর ক্যাঁচর
শব্দ উঠল |
বাসনগুলো কোনোদিন তো এত ঝাঁঝ দেকায় না—
বড় তেল হয়েছে |

ঘুরতে ঘুরতে মালাটা দাঁড়িয়ে পড়ল |
নোড়া দিয়ে মুখ ভেঙে দিতে হয়—
মালাটা একবার ঝাঁকুনি খেয়ে
আবার চলতে লাগল |

নাকে অস্ফুট শব্দ ক’রে
থলির ভেতর পাঁচটা আঙুল হঠাৎ
মালাটার গলা টিপে ধরল—
মিন্ সের আক্কেলও বলিহারি !
কোথ্বকে এক কালো অলুক্ষণে
পায়ে খুঅলা ধিঙ্গি মেয়ে ধরে এনে
ছেলেটার গলায় ঝুলিয়ে দিয়ে চলে গেল |
কেন ? বাংলাদেশে ফরসা মেয়ে ছিল না ?
বাপ অবশ্য দিয়েছিল থুয়েছিল—
হ্যাঁ, দিয়েছিল !
গলায় রসুড়ি দিয়ে আদায় করা হয়েছিল না ?

এবার মালাটাকে দয়া করে ছেড়ে দেওয়া হল |
শাশুড়ির মুখ দেখে মনে হচ্ছিল
থলির ভেতর হাত ঢুকিয়ে দিয়ে এই সময়ে
কী যেন তিনি লুকোচ্ছিলেন |
একটা জিনিস—
ক’মাস আগে বউমা
মরবার জন্যে বিষ খেয়েছিল |
ভাশুরপো ডাক্তার না হলে
ও-বউ এ-বংশের গালে ঠিক চুনকালি মাখাত |
কেন ? অসুখ করে মরলে কী হয় ?
ঢঙি আর বলেছে কাকে !

হাতে একরাশ ময়লা কাপড় নিয়ে
কালো বউ
গটগট গটগট করে সামনে দিয়ে চলে গেল |

নাঃ, আর বাড়তে দেওয়া ঠিক নয় |
‘বউমা—’
‘বলুন |’
উঁহু, গলার স্বরটা ঠিক কাছা-গলায়-দেওয়ার মতো নয়,
বড্ড ন্যাড়া |
হঠাৎ এই দেমাক এল কোথ্বেকে ?
বাপের বাড়ির কেউ তো
ভাইফোঁটার পর আর এদিক মাড়ায় নি ?
বাড়িটা যেন ঝড়ের অপেক্ষায়
থমথম করছে |
ছোট ছেলে কলেজে ;
মেজোটি সামনের বাড়ির রোয়াকে ব’সে
রাস্তায় মেয়ে দেখছ্
ফরসা ফরসা মেয়ে
বউদির মতো ভূষণ্ডি কালো নয় |
বালতি ঠনঠনিয়ে
বউ যেন মা-কালীর মতো রণরঙ্গিনী বেশে
কোমরে আঁচল জড়িয়ে
চোখে চোখ রেখে শাশুড়ির সামনে দাঁড়াল |

শাশুড়ির কেমন যেন
হঠাৎ গা ছমছম করতে লাগল |
তাড়াতাড়ি থলির মধ্যে হাতটা লুকিয়ে ফেলে
চোখ নামিয়ে বললেন আচ্ছা থাক, এখন যাও |
বউ মাথা উঁচু ক’রে
গটগট গটগট করে চলে গেল !

তারপর একা একা পা ছড়িয়ে ব’সে
মোটা চশমায় কাঁথা সেলাই করতে করতে
শাশুড়ি এ-ফোঁড় ও-ফোঁড় হয়ে ভাবতে লাগলেন
বউ হঠাৎ কেন বিগড়ে গেল
তার একটা তদন্ত হওয়া দরকার |
তারপর দরজা দেবার পর
রাত্রে
বড় ছেলের ঘরে আড়ি পেতে
এই এই কথা কানে এল—

বউ বলেছে : ‘একটা সুখবর আছে |’
পরের কথাগুলো এত আস্তে যে শোনা গেল না |
খানিক পরে চকাস চকাস শব্দ,
মা হয়ে আর দাঁড়াতে লজ্জা করছিল |
কিন্তু তদন্তটা শেষ হওয়া দরকার—
বউয়ের গলা, মা কান খাড়া করলেন |
বলছে : ‘দেখো, ঠিক আমার মতো কালো হবে |’
এরপর একটা ঠাস করে শব্দ হওয়া উচিত |
ওমা, বউমা বেশ ডগমগ হয়ে বলছে :
‘কী নাম দেব, জান ?
আফ্রিকা |
কালো মানুষেরা কী কাণ্ডই না করছে সেখানে ||’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *