Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » মেঘ রাজকন্যা || Shipra Mukherjee

মেঘ রাজকন্যা || Shipra Mukherjee

সেনরাজা,রোগ শয্যায় আসীন । রাজবৈদ্য নিয়ম করে রাজাকে দেখে চলেছে । কিছুতেই কিছু হচ্ছে না । রাজ জ্যোতিষীকে ডাকা হলো। তিনি রাজা আর রাজ পুত্রের হাত দেখলেন। তারপর রাজা ও রাজকুমার কে বললেন-।
—এ রোগ একমাত্র মেঘ রাজ কন্যা সাড়াতে পারে । যে রাজকন্যার কুচ বরণ রং আর মেঘ বরণ চুল । তাকে রাজকুমার যদি বিয়ে করে আনতে পারেন তবেই রাজা মশায় সেড়ে উঠবেন ।

রাজকুমার মেঘ রাজ্যে যাওয়ার জন্য তোড়জোড় শুরু করল । যাতে পথে কোন বিপদ না হয়। তাই রাজগুরুকে ডাকা হল। রাজগুরু ক্ষন ঠিক করে দিলেন।পক্ষীরাজ ঘোড়াকে মন্ত্রপূতঃ করা হলো ।

রাজগুরুর মত মতো রাজকুমার, পক্ষীরাজ ঘোড়ায় চেপে বসল । এই পক্ষীরাজ ঘোড়া কথাও বলতে পারে। । অবশ্য এ কথা সবাই বুঝতে পারবে না । তবে রাজ কুমার ভালো ই বোঝে তার ঘোড়ার ভাষা। রাজ
কুমারের নাম ধবল কুমার ।

রাজ্যের সীমানা পার হতে ই মীরকুমার মানে পক্ষীরাজ ঘোড়া তার পাখা মেলে উড়ে চললো । রাজ কুমার ভালো করে নিজেকে মীরকুমার এর সাথে বেঁধে নিয়েছিল । তাই উড়তে কোনো অসুবিধা হলো না ।মেঘের পরে মেঘ এর মধ্যে দিয়ে চলেছে ধবল কুমার আর তাঁর মীরকুমার । এ নাম রাজকুমারের দেওয়া ।মীর বলে ডাকলেই ঘোড়া উত্তর দেয় ।
কিছু ক্ষনের মধ্যে মেঘ সড়ে গেল । সূর্যের আলোয় ভরে গেল চারদিক । রাজ কুমার বলেন, —মেঘ তো সব গরমে গলে গেল । আমরা মেঘ রাজ্য পাব কোথায়? মীরকুমার বললো,—–চুপ করে বসে থাকো। তুমি বসে দেখো কি হয় । মেঘ রাজ্য ঠিক পাবো। তুমি সূর্যি মামার স্তব করো। মীরকুমারের কথা মতো ধবল কুমার সূর্যের মন্ত্র পাঠ  করতে লাগল ।”ওঁ জবাকুসুম সংকাশং কাস্যপেয়ং মহাধুতীং/ধন্তারিম্ সর্বপাপঘ্নং প্রনতোহস্মি দিবাকরম্।”। দেখতে দেখতে সূর্যের প্রখর তাপ কমে গেল । আবার মেঘে ঢেকে গেল চারদিক । যেতে যেতে পথে দেখা হল এক পাকা চুলের বুড়ির সাথে । তাকে জিজ্ঞাসা করল রাজ কুমার-।
— বুড়ি মা, মেঘ রাজ্যে যাওয়ার দিক কোন টা?

——-তুমি তো অনেক দুরে চলে এসেছো । পিছনে ফিরে যাও। পথে একটা ধোপানীর ঘাট পড়বে । সেই ঘাটের ধোপানী তোমাকে দেখিয়ে দেবে ।

মীরকুমার আবার উড়তে শুরু করলো । উড়তে উড়তে ধোপানীর ঘাটে এসে পৌঁছলো । ধোপানীকে জিজ্ঞাসা করলো—-মেঘ রাজ্য কোথায় বলতে পারো?

ধোপানী বলল——-কেন?সেখানে কি দরকার?

রাজ কুমার বললেন—-আমার মেঘ রাজ কন্যাকে চাই । সেই যে কুচ বরণ কন্যা যার মেঘ বরণ চুল ।তাই তাঁকেই বিয়ে করতে চাই ।

—–চাই বললে কি পাওয়া যায়?তাঁকে বিয়ে করতে কতো রাজা রাজরা বসে আছেন । তুমি তো তাদের কাছে শিশু ।
—–সে যাই হোক পথটা বলে দাও ।

ধোপানী হেসে বলল—এই বোঁচকায় রাজকন্যার শাড়ি আছে । এই শাড়ি নিয়ে গেলে তুমি রাজকন্যার কাছে পৌঁছে যাবে । রাজ কন্যার কাছে এটা দিয়ে দেবে। পথে এক গাধা র দেখা পাবে। সেই গাধা তোমাকে পথ বলে দেবে । সোজা যাবে , ডানে বাঁয়ে যাবে না ।

আবার ও উড়ে চললো মীরকুমার । রাজ কুমার বোঁচকা খুলে দেখলেন তাতে একখানা লাল সিল্কের শাড়ি । বোঁচকাটা বেঁধে সযত্নে নিজের কাছে রাখলেন। মীরকুমার চলেছে তো চলছেই । পথের যেন শেষ নেই । তখনই নজরে পড়ল একটা জলাশয় । সেখানেই একটা গাধা জল খাচ্ছে ।
রাজকুমার বললেন—-ঐ তো গাধা জল পান করছে ।মীর চলো আমরা ও জলপান করি।

মীরকুমার দাঁড়িয়ে পড়েছে । রাজ কুমার নেমে পড়ল ।
জলাশয়ের কাছে দাঁড়িয়ে গাধা কে জিজ্ঞাসা করল—–মেঘ রাজকন্যার রাজবাড়িটা দেখাতে পারো?
গাধা বললো—তোমরা ওখানে যাবে তাহলে এই ঝোলাটা নিয়ে যাও । রাজকুমারের হাতে একটা ঝোলা দিয়ে বলল।
–এটা রাজকন্যাকে দিয়ে দিয়ো । বাঁ দিকে সোজা চলে যাও। পথে একটা টিয়া দেখবে । সে ই তোমাদের পথ দেখিয়ে দেবে ।

রাজকুমার জলাশয়ের জল পান করলেন । মীরকুমারকে জল খাওয়ালেন ।

তারপর আবার মীরকুমার উড়তে শুরু করলো ।রাজকুমার ঝোলা খুলে দেখলেন ঝলমলে একজোড়া নাগরাই লাল জুতো । ঝোলাটা সাবধানে রাখলেন।বাঁয়ে চলেছে মীরকুমার । কিছুটা যাবার পর মীরকুমারের ঘাড়ে বসলো একটা টিয়া পাখি ।
রাজকুমার বলল
—-টিয়া তুমি কি আমাকে রাজকন্যার রাজবাড়িটা চিনিয়ে দেবে?
টিয়া বললো—-তোমরা তো রাজবাড়ির কাছে ই এসে পড়েছ। এই ঝোলা টা রাজকন্যা কে দিও।

টিয়া চলে যেতে রাজকুমার ঝোলা খুলে দেখলেন  একছড়া মুক্তোর মালা আর দুটো বড়ো সড়ো লাল পাথরের ঝুমকো । ঝোলার মুখ সাবধানে বন্ধ করে দিলেন । পৌঁছলেন বিশাল একখানা তোড়ণের সামনে বড়ো বড়ো করে লেখা,”মেঘ রাজ্য “।

ভেতর বাড়িতে প্রবেশ করার সময় দেখা হলো দরজায় বসা সেই পথে দেখা পাকা চুলের বুড়ির সাথে । রাজকুমার বললেন ,—আরে,বুড়ি মা না?তোমার সাথে ই তো দেখা হয়েছিল ।
বুড়ি বলল—-কে কি দিয়েছে দাও।

বুড়ি র কথায় আর পাকা চুলের ফাঁকে ফাঁকে কালো চুল দেখে রাজকুমারের সন্দেহ হলো,এ ই কি রাজ-কুমারী? কথা মতো পোটলা,ঝোলা,বোঁচকাটা তুলে দিলেন বুড়ির হাতে ।
বুড়ি বললো —- ঐ ঘরে বসে থাকো ।

একজন এসে মীরকুমার কে দানাপানী দিতে নিয়ে গেল। কিছুক্ষন পর আবার মীরকুমারকে নিয়ে এলো ।

এর কিছুক্ষন পর একটি মেয়ে সে ঘরে প্রবেশ করে বললো-।

—–আমি রাজ কন্যা ।

মীরকুমার মাথা নেড়ে বোঝালো যে এ মেয়ে রাজকন্যা নয় ।

রাজকুমার বললেন——তুমি রাজকন্যা নও।

এইভাবে একের পর একটি মেয়ে সে ঘরে প্রবেশ করে নিজেকে রাজকন্যা বলে পরিচয় দিলো। রাজকুমার কারোকে ই রাজকন্যা বলে মানতে নারাজ । শেষে যে মেয়েটি এলো তার পড়নে লাল রেশমি
শাড়ি,পায়ে ঝলমলে লাল নাগরাই আর গলায় মুক্তো মালা,কানে লাল পাথরের ঝুমকো । এক দেখায় রাজকুমারী কে চিনতে পারে রাজকুমার। রাজকুমারীর কুচ বরণ রং আর তার মেঘ বরণ চুল দেখে । হ্যাঁ । একেই তিনি নিতে এসেছেন। রাজামশাই সামনে দাঁড়িয়ে থেকে রাজকন্যার বিবাহ দিলেন রাজকুমারের সাথে । তারপর !!

মীরকুমার রাজকুমার আর তার নব বিবাহিতা স্ত্রী কে নিয়ে চললো উড়ে সেন রাজ্যের উদ্দেশ্যে । পৌঁছল যথাসময়ে । রানীমা পুত্র বঁধূকে বরণ করলেন । মেঘ রাজ কন্যার মায়া বলে সেন রাজা সুস্থ হয়ে উঠলেন। ।তারপর স্ত্রী,পুত্র ও পুত্র বঁধু নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগলেন সেন রাজা ।

কিছু দিন পর রাজ্যাভিষেক হলো । রাজ কুমার সেন রাজ্যের রাজা মশায় হয়ে সিংহাসনে বসলেন ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress