মেঘ রাজকন্যা
সেনরাজা,রোগ শয্যায় আসীন । রাজবৈদ্য নিয়ম করে রাজাকে দেখে চলেছে । কিছুতেই কিছু হচ্ছে না । রাজ জ্যোতিষীকে ডাকা হলো। তিনি রাজা আর রাজ পুত্রের হাত দেখলেন। তারপর রাজা ও রাজকুমার কে বললেন-।
—এ রোগ একমাত্র মেঘ রাজ কন্যা সাড়াতে পারে । যে রাজকন্যার কুচ বরণ রং আর মেঘ বরণ চুল । তাকে রাজকুমার যদি বিয়ে করে আনতে পারেন তবেই রাজা মশায় সেড়ে উঠবেন ।
রাজকুমার মেঘ রাজ্যে যাওয়ার জন্য তোড়জোড় শুরু করল । যাতে পথে কোন বিপদ না হয়। তাই রাজগুরুকে ডাকা হল। রাজগুরু ক্ষন ঠিক করে দিলেন।পক্ষীরাজ ঘোড়াকে মন্ত্রপূতঃ করা হলো ।
রাজগুরুর মত মতো রাজকুমার, পক্ষীরাজ ঘোড়ায় চেপে বসল । এই পক্ষীরাজ ঘোড়া কথাও বলতে পারে। । অবশ্য এ কথা সবাই বুঝতে পারবে না । তবে রাজ কুমার ভালো ই বোঝে তার ঘোড়ার ভাষা। রাজ
কুমারের নাম ধবল কুমার ।
রাজ্যের সীমানা পার হতে ই মীরকুমার মানে পক্ষীরাজ ঘোড়া তার পাখা মেলে উড়ে চললো । রাজ কুমার ভালো করে নিজেকে মীরকুমার এর সাথে বেঁধে নিয়েছিল । তাই উড়তে কোনো অসুবিধা হলো না ।মেঘের পরে মেঘ এর মধ্যে দিয়ে চলেছে ধবল কুমার আর তাঁর মীরকুমার । এ নাম রাজকুমারের দেওয়া ।মীর বলে ডাকলেই ঘোড়া উত্তর দেয় ।
কিছু ক্ষনের মধ্যে মেঘ সড়ে গেল । সূর্যের আলোয় ভরে গেল চারদিক । রাজ কুমার বলেন, —মেঘ তো সব গরমে গলে গেল । আমরা মেঘ রাজ্য পাব কোথায়? মীরকুমার বললো,—–চুপ করে বসে থাকো। তুমি বসে দেখো কি হয় । মেঘ রাজ্য ঠিক পাবো। তুমি সূর্যি মামার স্তব করো। মীরকুমারের কথা মতো ধবল কুমার সূর্যের মন্ত্র পাঠ করতে লাগল ।”ওঁ জবাকুসুম সংকাশং কাস্যপেয়ং মহাধুতীং/ধন্তারিম্ সর্বপাপঘ্নং প্রনতোহস্মি দিবাকরম্।”। দেখতে দেখতে সূর্যের প্রখর তাপ কমে গেল । আবার মেঘে ঢেকে গেল চারদিক । যেতে যেতে পথে দেখা হল এক পাকা চুলের বুড়ির সাথে । তাকে জিজ্ঞাসা করল রাজ কুমার-।
— বুড়ি মা, মেঘ রাজ্যে যাওয়ার দিক কোন টা?
——-তুমি তো অনেক দুরে চলে এসেছো । পিছনে ফিরে যাও। পথে একটা ধোপানীর ঘাট পড়বে । সেই ঘাটের ধোপানী তোমাকে দেখিয়ে দেবে ।
মীরকুমার আবার উড়তে শুরু করলো । উড়তে উড়তে ধোপানীর ঘাটে এসে পৌঁছলো । ধোপানীকে জিজ্ঞাসা করলো—-মেঘ রাজ্য কোথায় বলতে পারো?
ধোপানী বলল——-কেন?সেখানে কি দরকার?
রাজ কুমার বললেন—-আমার মেঘ রাজ কন্যাকে চাই । সেই যে কুচ বরণ কন্যা যার মেঘ বরণ চুল ।তাই তাঁকেই বিয়ে করতে চাই ।
—–চাই বললে কি পাওয়া যায়?তাঁকে বিয়ে করতে কতো রাজা রাজরা বসে আছেন । তুমি তো তাদের কাছে শিশু ।
—–সে যাই হোক পথটা বলে দাও ।
ধোপানী হেসে বলল—এই বোঁচকায় রাজকন্যার শাড়ি আছে । এই শাড়ি নিয়ে গেলে তুমি রাজকন্যার কাছে পৌঁছে যাবে । রাজ কন্যার কাছে এটা দিয়ে দেবে। পথে এক গাধা র দেখা পাবে। সেই গাধা তোমাকে পথ বলে দেবে । সোজা যাবে , ডানে বাঁয়ে যাবে না ।
আবার ও উড়ে চললো মীরকুমার । রাজ কুমার বোঁচকা খুলে দেখলেন তাতে একখানা লাল সিল্কের শাড়ি । বোঁচকাটা বেঁধে সযত্নে নিজের কাছে রাখলেন। মীরকুমার চলেছে তো চলছেই । পথের যেন শেষ নেই । তখনই নজরে পড়ল একটা জলাশয় । সেখানেই একটা গাধা জল খাচ্ছে ।
রাজকুমার বললেন—-ঐ তো গাধা জল পান করছে ।মীর চলো আমরা ও জলপান করি।
মীরকুমার দাঁড়িয়ে পড়েছে । রাজ কুমার নেমে পড়ল ।
জলাশয়ের কাছে দাঁড়িয়ে গাধা কে জিজ্ঞাসা করল—–মেঘ রাজকন্যার রাজবাড়িটা দেখাতে পারো?
গাধা বললো—তোমরা ওখানে যাবে তাহলে এই ঝোলাটা নিয়ে যাও । রাজকুমারের হাতে একটা ঝোলা দিয়ে বলল।
–এটা রাজকন্যাকে দিয়ে দিয়ো । বাঁ দিকে সোজা চলে যাও। পথে একটা টিয়া দেখবে । সে ই তোমাদের পথ দেখিয়ে দেবে ।
রাজকুমার জলাশয়ের জল পান করলেন । মীরকুমারকে জল খাওয়ালেন ।
তারপর আবার মীরকুমার উড়তে শুরু করলো ।রাজকুমার ঝোলা খুলে দেখলেন ঝলমলে একজোড়া নাগরাই লাল জুতো । ঝোলাটা সাবধানে রাখলেন।বাঁয়ে চলেছে মীরকুমার । কিছুটা যাবার পর মীরকুমারের ঘাড়ে বসলো একটা টিয়া পাখি ।
রাজকুমার বলল
—-টিয়া তুমি কি আমাকে রাজকন্যার রাজবাড়িটা চিনিয়ে দেবে?
টিয়া বললো—-তোমরা তো রাজবাড়ির কাছে ই এসে পড়েছ। এই ঝোলা টা রাজকন্যা কে দিও।
টিয়া চলে যেতে রাজকুমার ঝোলা খুলে দেখলেন একছড়া মুক্তোর মালা আর দুটো বড়ো সড়ো লাল পাথরের ঝুমকো । ঝোলার মুখ সাবধানে বন্ধ করে দিলেন । পৌঁছলেন বিশাল একখানা তোড়ণের সামনে বড়ো বড়ো করে লেখা,”মেঘ রাজ্য “।
ভেতর বাড়িতে প্রবেশ করার সময় দেখা হলো দরজায় বসা সেই পথে দেখা পাকা চুলের বুড়ির সাথে । রাজকুমার বললেন ,—আরে,বুড়ি মা না?তোমার সাথে ই তো দেখা হয়েছিল ।
বুড়ি বলল—-কে কি দিয়েছে দাও।
বুড়ি র কথায় আর পাকা চুলের ফাঁকে ফাঁকে কালো চুল দেখে রাজকুমারের সন্দেহ হলো,এ ই কি রাজ-কুমারী? কথা মতো পোটলা,ঝোলা,বোঁচকাটা তুলে দিলেন বুড়ির হাতে ।
বুড়ি বললো —- ঐ ঘরে বসে থাকো ।
একজন এসে মীরকুমার কে দানাপানী দিতে নিয়ে গেল। কিছুক্ষন পর আবার মীরকুমারকে নিয়ে এলো ।
এর কিছুক্ষন পর একটি মেয়ে সে ঘরে প্রবেশ করে বললো-।
—–আমি রাজ কন্যা ।
মীরকুমার মাথা নেড়ে বোঝালো যে এ মেয়ে রাজকন্যা নয় ।
রাজকুমার বললেন——তুমি রাজকন্যা নও।
এইভাবে একের পর একটি মেয়ে সে ঘরে প্রবেশ করে নিজেকে রাজকন্যা বলে পরিচয় দিলো। রাজকুমার কারোকে ই রাজকন্যা বলে মানতে নারাজ । শেষে যে মেয়েটি এলো তার পড়নে লাল রেশমি
শাড়ি,পায়ে ঝলমলে লাল নাগরাই আর গলায় মুক্তো মালা,কানে লাল পাথরের ঝুমকো । এক দেখায় রাজকুমারী কে চিনতে পারে রাজকুমার। রাজকুমারীর কুচ বরণ রং আর তার মেঘ বরণ চুল দেখে । হ্যাঁ । একেই তিনি নিতে এসেছেন। রাজামশাই সামনে দাঁড়িয়ে থেকে রাজকন্যার বিবাহ দিলেন রাজকুমারের সাথে । তারপর !!
মীরকুমার রাজকুমার আর তার নব বিবাহিতা স্ত্রী কে নিয়ে চললো উড়ে সেন রাজ্যের উদ্দেশ্যে । পৌঁছল যথাসময়ে । রানীমা পুত্র বঁধূকে বরণ করলেন । মেঘ রাজ কন্যার মায়া বলে সেন রাজা সুস্থ হয়ে উঠলেন। ।তারপর স্ত্রী,পুত্র ও পুত্র বঁধু নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগলেন সেন রাজা ।
কিছু দিন পর রাজ্যাভিষেক হলো । রাজ কুমার সেন রাজ্যের রাজা মশায় হয়ে সিংহাসনে বসলেন ।