মা : 07
বাইরের কলে মুখচোখ ভালো ভাবে জলে ধুয়ে ঘরে আসতেই মেরি বলে মায়ের শরীর ভালো নেই আজ জ্বর এসেছিল, আমি পাশের বাড়ির বুড়ি মাসির থেকে ওষুধ এনে দিয়েছি কাল সকালে ওষুধ এনে দিও। দ্যুলোক ঘাড় ঘুরিয়ে পাশের কামরায় তাকিয়ে বলে ঠিক আছে এনে দিব। রাতে বিছানায় শুয়ে ঘুম আসে না,চোখ বুজলেই ফেরার পথের ঘটনা ভেসে ওঠে, অস্বস্তিতে এপাশ ওপাশ করতে থাকে…. সকালবেলা মেরির ডাকে ঘুম ভাঙে, চোখের পাতা ভারী হয়ে উঠেছে যেন, আস্তে আস্তে জিগায় মা কিমন আছে? মেরি: জ্বর নেই, তবে কারখানা থেকে ফিরতি পথে ওষুধ এনে রেখো,আজ দেরি হবে ফিরতে? দ্যুলোক: না, ফেরার পথে নিয়ে আসবো। কারখানায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়, রাস্তায় জ্যাম কারখানায় পৌঁছাতে একটু দেরি হয়ে যায়, ছোটবাবুকে বলে জ্যাম ছিল বাবু তাই দেরি। ছোটবাবু ঠিক আছে কাজে যা, কাল রাতে একটা খুন হয়েছে,তুই যাওয়ার পথে দেখেছিস কিছু? দ্যুলোক চাপা গলায় উত্তর দেয় কিছু খেয়াল করতে পারছি না,পাশ থেকে বড়োবাবু বলেন নিজের জায়গায় কাজে যা,কাজ গুছিয়ে আজ সবাই তাড়াতাড়ি ঘরে যাবি,এদিকের অবস্থা সুবিধার নয়, ঝামেলা এড়িয়ে চলা ভালো। ঘাড় ঝাঁকিয়ে নিজের জায়গায় গিয়ে কাজে লেগে পড়ে কিন্তু সেই ছেলেটার মুখটা যেন ভেসে ওঠে, তবে কি ওই খুন হয়েছে না অন্য কেউ!! টুকরো খবর কানে এলেও না শোনার ভান করে দ্যুলোক, কোনোরকমে কাজ সেরে ফেরার পথে মনে হয় যেন পালিয়ে বাঁচতে চাইছে, কিন্তু এভাবে কি আদৌ বাঁচতে পারবে? পৌঁছে দেখে,বাড়িতে মায়ের জ্বর বেড়েছে,যথারীতি মায়ের ওষুধ কিনতে ভুলে গেছে, আবার বেরিয়ে পড়ে ওষুধ কিনতে। ওষুধের সাথে সস্তায় সবজি কিনে ঘরে ফিরে আসে, ওষুধ দেওয়ার কিছু সময় পর জ্বর কমে যায়। রাতে খাওয়ার পর মেরিকে বিছানায় বুকে টেনে দ্যুলোক আদর করতে করতে বলে বাচ্চাটাকে ভালো ভাবে মানুষ করবো আমরা তু দেখে লিস উ মানুষের মতো মানুষ হবে। আনন্দে আবেগে দ্যুলোকের চোখে জল নেমে আসে, মনে মনে বলে ঠাকুর যেন উর স্বপ্নপূরণ করতে পারি। দুজনের চোখে তৃপ্তির ঘুম নেমে আসে। অভাব অনটন লেগেই থাকে সংসারে, কারখানায় কিছু শ্রমিক মাইনে বাড়াতে কাজ বন্ধের হুমকি দেয় মালিকপক্ষকে, ওদের দাবি ন্যায্য, কিন্তু এখন কাজ বন্ধ হলে ওরা খাবে কি? সংসার চালাতে আপোষ করতেই হয়, দ্যুলোক ও কিছু শ্রমিক কাজ বন্ধ করে না উপরন্তু ওভারটাইম করতে থাকে, মালিক পক্ষ খুশি হয়ে ওদের বখশিস দেয়, অন্যদিকে পুলিশ এসে শ্রমিক নেতাকে তুলে নিয়ে যায়, বাকিরা ছত্রভঙ্গ হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়, কয়েকদিন পর কর্তৃপক্ষের সামনে মাথা নিচু করে কাজে যোগ দিতে বাধ্য হয়।