মা : 03
কয়েক সপ্তাহ কেটে গেছে বিকাশের শারীরিক অবস্থায় খুব একটা পরিবর্তন হয় নি, একটা অপারেশন করতে হয়েছে, কারখানায় বিকাশের বৌকে নিয়ে অনেক কানাঘুষা চলছে,কেউ কেউ বড়ো বাবুর দিকে আকারে ইঙ্গিতে কটুক্তি করলে দ্যুলোক সরে আসে সেখান থেকে, মনে মনে গজগজ করে লোকের কেচ্ছা কাহিনী করিস লিজের ঘরের বৌ নেই!! আজকাল বড়ো চিন্তা হয়, পরিবারের দায়িত্ব বাড়ছে, সঞ্চয় সামান্য, পাশের পাড়ার কেলোর, বৌটার ওপর কুদৃষ্টি আছে। অকারণ বাড়িতে আসে, আজেবাজে বকে হ্যাংলার মতো চেয়ে থাকে। সেদিন রাস্তায় দুটো খিস্তি করতে তবে মুখ দেখায়নি কদিন,ওর নিজের কিছু হলে বৌটার বিগড়ে যেতে কতক্ষণ! ছুটির পর সাতপাঁচ চিন্তা করতে করতে চুল্লুর ঠেকে গিয়ে বসে দ্যুলোক, একটু নেশা না করলে আবার পুরুষ মানুষ হয়! রাতে টলতে টলতে বাড়িতে ফিরে,বৌ প্যান প্যান শুরু করলে বলে চুপ করে থাক ঢলানি মাগি, পোয়াতি তাই তোকে পিটবার ইচ্ছে নাই, পরপুরুষের দিকে নজর না দিয়ে সংসারে মন দে, তারপর বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। এভাবেই স্যাঁতসেঁতে বস্তিতে সকাল সন্ধ্যায় সময় এগিয়ে চলে। পরদিন ঘুম ভাঙতে দেরি হয়ে যায়, উঠে বসে দেখে প্রায় আটটা,মেরি চা দিতে দিতে বলে ছাইপাঁশ না খেয়ে নিজের শরীরের যত্ন নাও, কালকের রুটি আছে খাবে না পান্তা ভাত খেয়ে যাবে? দ্যুলোক ফুঁসে ওঠে,চুপ থাক,নিজে গিলেছিস? তোর জন্য যদি আমার বাচ্চার ক্ষতি হয়ে যায় তবে আমি ছেড়ে কথা বলবো না।মেরি বুঝতে পারে না দ্যুলোকের অস্থিরতার কারণ! শুধু বলে কি হয়েছে তোমার, এইতো সেদিন হাসপাতালে কত আনন্দে ছিলে, কি এমন ঘটে গেলো!এতো অস্থির কেন? দ্যুলোক মাথা চেপে ধরে বস থাকে,ও নিজেই বুঝতে পারছে না, কেন এতো অস্থিরতা! মাথাটা ভারি হয়ে আছে,হঠাৎ ছোট ফোনটা বেজে ওঠে, কারখানার বিলু কাঁপা কাঁপা গলায় বলে বিকাশ আর নেই,ওর বৌ জিনা নার্সিংহোমে খুব ঝগড়া করেছে, ছোটবাবু গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়, টাকাপয়সা মিটিয়ে দিয়েছে ,আমরা বডি ছাড়িয়ে শশ্মানে যাবো, তোকে ফোন করিনি,তুই এমনিতেই দেখেছি চাপ খেয়ে আছিস,তুই কি আসবি? দ্যুলোক কাঁপা গলায় মরে গেছে, কিন্তু কেন অপারেশন তো হয়েছে, আমি আমি যাচ্ছি এখনি নার্সিংহোমে।মেরির পাশ থেকে শুনছিল কথা, দ্যুলোক ফোন রাখার পর বলে কে বিকাশ? তোমার সঙ্গে কারখানায় কাজ করে? দ্যুলোক ঘাড় ঝাঁকিয়ে বলে, হ্যাঁ চুল্লুর সাথি, শেষ চুল্লিতে দিয়ে আসি,জিনা খুব ঝামেলা বাধিয়েছে,সর্বস্ব দিয়েও বাঁচাতে পারলো না বরকে। যদি কোথাও কাজ পায় তবে বেঁচে যাবে,আর তা নাহলে আদিম ব্যাবসায় ফিরে যাবে…. মেরি: কোনো কথাই বুঝতে পারি না, রুটি খেয়ে যাবে, স্নান সেরে দোষ কাটিয়ে ঘরে ঢুকবে, দ্যুলোক: শুরু হয়েছে কুসংস্কার যত কপচানো, একটা মানুষ চলে গেল, আর তুমি! তোমরা মেয়েরা স্বার্থপরের জাত! মেরি ডুকরে কেঁদে উঠে বলে হ্যাঁ, বাচ্চাটা আমার একার, দায়িত্ব আমার একার, রুটি খেয়ে তবে বেরোবে।