মা : 02
কাজে পৌঁছতে একটু দেরি হয়ে যায়, কারখানার মুখে জটলা দেখে এগিয়ে যায়,শোনে বাইক এক্সিডেন্ট হয়েছে বিকাশকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। বেশি কথা না বাড়িয়ে নিজের কাজ করতে থাকে, কিরকম যেন বিমর্ষ হয়ে যায় , বিকাশ কি সকালেই মদ খেয়েছিল? মাঝে মধ্যে ওরা একসাথে চুল্লুর ঠেকে যায় বটে, কিন্তু কাজ সেরে সন্ধ্যায়, সেবার দ্যুলোক এর সঙ্গে এই নিয়ে অশান্তি হয়েছে,দুঘা পিঠে দিলে তবে মেয়েমানুষ সিধে হয়, তবে পরে বৌটার করুণ মুখ দেখে কষ্ট হয় তারপর দুটো ইমিটেশনের দুল দিয়ে মান ভাঙাতে হয়েছিল, তবে ঝগড়ার পর দুজনেরই সোহাগ যেন বেড়ে যায় । তবে এখন দ্যুলোক জানে মেরি পোয়াতি নিজের হুঁশ না রাখলে বড়ো ক্ষতি হয়ে যেতে পারে ।কাল বৌকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা কিভাবে যে বলবে! বহু অপেক্ষার দুপুরে মাংস ভাত যেন তিতো ঠেকে!বিকাশ,ওর বৌএর কেচ্ছা কাহিনীতে সবাই মশগুল, ছোটবাবুর ধমকে থেমে যায়। সন্ধ্যায় বিকাশের বৌ কারখানায় এসে দাঁড়িয়েছে এমন সময় বড়বাবু এগিয়ে যান,কি কিরকম অবস্থা এখন? বিকাশের বৌ চোখের জল মুছতে মুছতে বলে ভালো নেই, পুলিশ কেশ হবে বলে নার্সিংহোমে নিয়ে গেছি, নিজের গয়না বন্দক দিছি, যদি কিছু টাকা দেন! ডাক্তার এলেন অনেক পরে,অনেক পরীক্ষা লিখেছে । বড়োবাবু মানুষ ভালো, কিছু টাকা দিয়ে বলেন চিন্তা করোনা,ওর পাওনা কি আছে দেখে রাখব, বাড়িতে মেয়েটাকে সামলে রেখো। সাহস করে দ্যুলোক আস্তে আস্তে এগিয়ে যায়,বড়োবাবু কাল যদি ছুটি দেন বৌকে হাসপাতালে দেখাতে নিয়ে যাবো, তারপর নার্সিংহোমে বিকাশকে দেখে আসবো।বড়োবাবু একবার দ্যুলোকের মুখের দিকে তাকিয়ে বলেন সেই ভালো, তুমি আমাদের পক্ষ থেকে দেখা করে এসো। কাজ সেরে বাড়িতে ফেরার পথে টেস্ট কার্ড কেনে, মেরিকে বলে এটা সকালে দেখে নিতে হবে, হাসপাতালে কার্ড করিয়ে নেওয়া যাবে তবে, তারপর নার্সিংহোমে যাবো বলতে গিয়ে থেমে যায়, অ্যাক্সিডেন্টের কথা মেরিকে বলা যাবে না চিন্তা করবে, একটু থেমে বলে তারপর একটা কাজে যাবো। পরদিন মেরির রিপোর্ট পজিটিভ আসে, দ্যুলোক মেরিকে চেপে ধরে বলে সব নেশা ছেড়ে দিব,তুই নিজের যত্ন লিবি, আমি পড়ালেখা শিখে একটা পাশ দিয়েও কারখানায় ঘাড় গুঁজে কাজ করি, তাকে আমি মানুষের মতো মানুষ করবো, মাথা উঁচু করে বাঁচতে শেখাবো।মেরি অল্প হেসে বলে আগে আসতে দাও তারপর ভাবা যাবে। সকালবেলা দুজনে হাসপাতালে যায়,ভিড় জমায় একটু দেরি হয়ে যায়, মেরিকে ঘরে নামিয়ে কোনোরকমে দুটো ভাত গলার্ধকরণ করে বিকাশকে দেখতে বেরিয়ে পড়ে। ঘন্টাখানেক পর নার্সিংহোমে পৌঁছে দেখে বিকাশের বৌ বসে আছে, দ্যুলোক বলে ডাক্তারের সাথে কথা হয়েছে? জিনা (দুচোখে জল): মাথায় , বুকে চোট পেয়েছে, একটা হাতের আঙুল,পায়ের হাঁটুর ফ্র্যাকচার অপারেশন করতে হবে,অতটাকা কুথায় পাবো। দ্যুলোক চুপ করে বসে পড়ে, তারপর বলে বড়োবাবুকে বলবো ধার দিবে,পরে বিকাশ সুস্থ হলে আস্তে আস্তে শোধ করে দিবে । জিনা: আদৌ আর কাজে ফিরতে পারবে! দেখি আশপাশের থেকে যদি ধার পাই, তুমি দাদা বড়োবাবুকে একটু জানিও আমি ফোন করে লিব।