ছুটে এসে ছেলে বলে,মাগো কোন্
দেশটা মোর!
আসাম তথা ভারতভূমি ,না বাঙলাদেশের ক্রোড়?
মা কেঁদে সস্নেহে বলে, ওরে অবোধ ছেলে,
জন্মেছিলি এই আসামে ভারত মাতার কোলে।
বাপ ছিল তোর বাঙলাদেশি যুদ্ধ করেন কষে,
একাত্তরে জয়ী হলেও ভাসলো নদীর গ্রাসে৷
ভিটে ,স্বামী সব হারিয়ে নিঃস্ব রিক্ত বেশে,
এসেছিলাম তোকে গর্ভে নিয়ে ভারত দেশে।
কঠিন শ্রমে দুই দশক করলাম মা ,ছেলেতে পার–
আশা ভাষার স্বপ্ন বুনে মানতে হয়নি যে হার,
পড়াশোনার শেষে তুই হ’লি মস্ত অফিসার,
নিজেই দেখে করলি বিয়ে,তখন মা কোথায় আর!
বাবা ছাড়া এতদিন তো মায়ের কাছে ছিলি,
বৌয়ের সাথে শলা করে বৃদ্ধাশ্রমে দিলি,
এক ছেলের মা যে হয়েও আমি ,ভাগের মা তো নই,
তোকে মানুষ করতে করেছি নিজের জীবন ক্ষয়।
পরিচয় দিতে ঘৃণা লাগে বুঝতে আমি পারি–
তার জন্য মায়ের সঙ্গে করবি কী তোরা আড়ি!
মনে মনে রোজ’ই ভাবি আসবে আমার খোকা,
আগের মতো আমি যেন করছি বকাঝকা।
সব মায়ের ঠিকানা যদি হয় গো বৃদ্ধাশ্রমে,
তবে শিক্ষার মূল্য দিল খোকা মায়ের অশ্রুর দামে!
তোর স্বপ্নের বাগানে যদি কোনোদিন আসি চলে,
ভাবিস না খোকা ,ক্রমশ আমিও যাচ্ছি তোকে ভুলে।
জানিস স্বপনে জাগরণে তোর বাবাকে দেখি,
আঁৎকে উঠে বলি খোকাকে একা ফেলে যাবো নাকি!
তোকে একা রেখে মরে গেলেও আমার শান্তি নেই,
তবুও আমায় থাকতে হবে এই বৃদ্ধাশ্রমেই!