১৪
মড়া পুড়িয়ে বেলা দুটোর সময়ে বাড়িতে ফিরে এলে উৎপলা বললে, আজকে অফিসটা বাদ দিলে তাহলে?
কী করব, পাড়াপড়শী যদি মরে যায়।
কী করলে শ্মশানে গিয়ে।
যাই, চৌবাচ্চায় চান করে আসি–বলে, মাল্যবান দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পিঠে গামছা ঘষতে লাগল।
সত্যেনবাবু গিয়েছিলেন শ্মশানে?
ও মা, তিনি যাবেন না।
ও মা, চোখ পাল্টালে যে! শুদোচ্ছি। কতোক্ষণ ছিলেন তিনি?
কোন এক সময়ে কেটে পড়লেন, টের পেলাম না।
কেটে পড়লেন। কথার রকম দ্যাখ। ওকে তো সবাই ধরাধরি করে শ্মশান থেকে নিয়ে এসেছে। খেদার হাতির মতো কেমন অবোলা উতলা হয়ে পড়েছিলেন শুনলাম। খুব কেঁদেছেন?
হ্যাঁ, কেঁদেছেন বটে। দু-চার বাটি।
খুব লেগেছে ভদ্রলোকের, উৎপলা বললে, তবু পুরুষমানুষ তো। লেজ দিয়ে ডাঁশ উড়িয়ে আবার কলাগাছ খেতে শুরু করবে; এই তো হয়ে এলে বলে। বনের হাতি পোষা হাতি হবে এবার দোজবরে সত্যেনের বৌয়ের বিয়ের নেমন্তন্নে কলার পাৎ পড়ল বলে।
এ, বৌ তোমার বাপের বাড়ি দেশের বুঝি? নিত্ কনে হয়ে আসর আঁকিয়ে বসবার শখ? মাল্যবান শরীরটাকে, মুখটাকে (যেন তা ফোকলা হয়ে গেছে) একটু নাচিয়ে হাসিয়ে বললে। সত্যেনের বিয়েতে কলার পা দিয়ে করবে কী তুমি। হাতি হয়ে সত্যেন কলাগাছ খাবে, বলছিলে তো তুমি; কামিনী হয়ে সেই হাতিকেই খাবে তো তুমি। বাঃ, কেমন কামিনীর মতো পদ্মের ওপর দাঁড়িয়ে আছে উৎপলা।
উৎপলা উঠে দাঁড়িয়েছিল। আড়মোড়া ভাঙতে-ভাঙতে বললে, বেশ তিরিখ-তিরিখ জবাব দিচ্ছ তো তুমি, যে যাই বলুক, এই ভর-সন্ধ্যেবেলা। নাও, চান করে এসো, চা খাবে এসো।
একটি মৃতা—খুব অল্প বয়সেই—দগ্ধ হয়েষছ শ্মশানে। একটি স্বামীর শোক খুবই জায়াকেন্দ্রিক, এখনও গভীর। কিন্তু এখনই তরল হয়ে যাচ্ছে সব; সচ্ছল সফল সময় ব্যথা, বাচালতা, সরসতা, নষ্টামি, ভয়, রক্ত, বিরংসা, অনাথ অন্ধকার ও গভীরতার ভেতর মৃত্যু নয়, শূন্য নয়, ব্যক্তি জীবন নয়, অফুরন্ত অনির্বচনীয় সময়,–সময় শুধু।