Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » মায়াবী || Panchkari Dey » Page 75

মায়াবী || Panchkari Dey

যোগেন্দ্রনাথের নিকট হইতে বিদায় লইয়া, অরিন্দম বাসায় আসিয়া দেখিলেন, তখনও দেবেন্দ্রবিজয় ফিরিয়া আসেন নাই। তিনি বৈঠকখানা ঘরে বসিয়া পরম নিশ্চিন্ত মনে চুরুট টানিতে ও প্রচুর ধূম উদগীরণ করিতে মনোনিবেশ করিলেন।

যথাসময়ে মুটের মাথায় বোঝাই হইয়া যোগেন্দ্রনাথের প্রেরিত অনেকগুলি ইলেকট্রীক ব্যাটারী ও অনেকগুলি হাতকড়ি ও বেড়ি আসিয়া উপস্থিত হইল। অরিন্দম প্রত্যেক জিনিষটি উল্টাইয়া পাল্টাইয়া দেখিয়া ঘরে তুলিলেন। হাতকড়ি ও বেড়িগুলি দ্বিতলের উপরে এমন একটা স্থানে রাখিলেন যে, দরকারের সময়ে সহজে পাওয়া যাইতে পারে।

তাহার পর ইলেকট্রীক ব্যাটারীগুলি দ্বিতলে উঠিবার সোপানের নীচে বসাইলেন; এবং সেই ব্যাটারীগুলির সঙ্গে তার যোগ করিয়া সোপানের চারিদিকে এবং রেলিং-এর গায়ে সংলগ্ন করিয়া দিলেন। নিজের শয়ন- কক্ষের কবাটের কড়া দুইটির সহিতও একটি তার লাগাইয়া ইলেকট্রীক ব্যাটারীর সহিত সংলগ্ন করিয়া দিলেন।

সমুদয় ঠিঠাক্ করিতে অরিন্দমের রাত্রি নয়টা বাজিয়া গেল। রাত্রি নয়টার পর দেবেন্দ্রবিজয় ফিরিয়া আসিলেন।

অরিন্দম দেবেন্দ্রবিজয়কে বলিলেন, “ফুলসাহেবের আজ এখানে শুভাগমন হইবে।”

দেবেন্দ্রবিজয় সদ্যঃ-আকাশ-বিদ্যুতের ন্যায় বলিলেন, “ফুলসাহেব! এখানে কোথায় আসবে?”

“এখানে—আমাদের বাড়ীতে।”

“এখন সে কোথায়?”

“যেখানেই থাক্, আজ আমার বাড়ীতে আসবে।”

“আপনার বাড়ীতে?”

“হাঁ, আমার বাড়ীতে।”

“ধরা দিতে নাকি?

“অনেকটা সেই রকমেরই বটে।”

“আপনার কথা আমি বুঝতে পারছি না।”

(সহাস্যে) “এস বুঝিয়ে দিই।”

অরিন্দম দেবেন্দ্রবিজয়ের হাত ধরিয়া টানিয়া, দ্বিতলে উঠিবার সোপানের সম্মুখে লইয়া আসিলেন এবং ইলেকট্রিক ব্যাটারীর সাহায্যে সিঁড়ির উপরকার তারগুলিতে সামান্যমাত্র বৈদ্যুতিক প্রবাহের সঞ্চার করিয়া দিয়া দেবেন্দ্রবিজয়কে বলিলেন, “একবার তুমি সিঁড়ির উপরে উঠে দাঁড়াও দেখি।”

দেবেন্দ্রবিজয়ের অপেক্ষা অরিন্দম বয়সে অনেক বড় বলিয়া এবং এই দুই মাসের ঘনিষ্ঠতায় তাঁহার সহিত কথোপকথনকালে “আপনি”

“আপনার” ইত্যাদি সম্ভ্রমসূচক শব্দের পরিবর্ত্তে স্নেহসূচক “তুমি”

“তোমার” শব্দ ব্যবহার করিতেন। অরিন্দমের কথা শুনিয়া দেবেন্দ্রবিজয় তাড়াতাড়ি পাশের রেলিং ধরিয়া সদর্পেই সিঁড়িতে উঠিলেন; তখনই যন্ত্রণায় তীব্রতর চীৎকারে সমস্ত বাড়ীটা আৰ্ত্তনাদ- প্রতিধ্বনিত করিয়া সিঁড়ি হইতে পাঁচ হাত দূরে লাফাইয়া পড়িলেন।

অরিন্দম তখন দেবেন্দ্রবিজয়কে সমস্ত বুঝাইয়া বলিলেন। শুনিয়া দেবেন্দ্রবিজয় বিস্মিত হইলেন। অরিন্দম বলিলেন, “তুমি একটা ব্যাটারীর তেজ দেখিলে; যথাসময়ে দশটা ব্যাটারী এক সঙ্গে কাজ করবে। তখন একবার পা দিলে আর এক পা নড়তে হবে না। ফুলসাহেব যখন ধরা পড়বে, তখন যতক্ষণ না রেবতীর সম্বন্ধে সব কথা সে বলে, ততক্ষণ তাকে এরূপ যন্ত্রণাময় অবস্থায় সিঁড়ির উপরে ধরিয়া রাখিব। দারুণ যন্ত্রণায় তখনই তাকে তার সমুদয় গুপ্তকথা আমাদের কাছে প্রকাশ করতেই হবে।”

শুনিয়া দেবেন্দ্রবিজয় মনে মনে খুব খুসী হইলেন। মুখের ভাব বুঝিয়া অরিন্দমও যে তাহা না বুঝিলেন, তাহা নহে। বলিলেন, “যেরূপ দেখছি, তাতে রেবতীর উদ্ধারটা খুব সংক্ষিপ্ত হ’য়ে এসেছে ব’লেই বোধ হয়।”

দেবেন্দ্রবিজয় বলিলেন, “আপনার কল্পনার ভিতরে আমি এখনও প্রবেশ করতে পারি নাই আপনি যা বলছেন, তা না বুঝবার মতন একরকম বুঝে যাচ্ছি। ফুলসাহেব এখানে কি করতে আসবে?”

অ। আমাকে খুন করতে।

দে। এত সাহস তার?

অ। ফুলসাহেবের পক্ষে এটা বড় বেশী সাহসের কথা নয়।

দে। কত রাত্রে?

অ। রাত দু’টার পর

দে। কিরকম ভাবে আসবে?

অ। চোরের মত চুপি চুপি আসবে না—ডাকাতেরা যেমন দল-বল নিয়ে ডাকাতি করতে আসে, ফুলসাহেব তেমনি সদলবলে আসবে?

দে। সে আবার দল-বল পেলে কোথায়?

অ। এই দুই মাস কি সে নিশ্চেষ্ট হ’য়ে চুপ করে বসেছিল? ভিতরে ভিতরে এই সব করেছে।

দে। তবে ত বড় ভয়ানক কথা! আপনি এ-সংবাদ কোথায় পেলেন?

অরিন্দম তখন মোহিনীর মুখে যাহা শুনিয়াছিলেন, সমস্তই বলিলেন। মোহিনী নাম্নী একটা উন্মাদিনীর কথায় অরিন্দমের এতটা বিশ্বাসস্থাপন করা অনেকেই মনে করিবেন, কাজটা ঠিক হয় নাই কিন্তু অনেক দিনের ডিটেক্‌টিভ অরিন্দমের এমন একটা অসাধারণ নৈপুণ্য এবং অনন্যসুলভ অনুমান শক্তি ছিল যে, একটা কথা পড়িলে ভবিষ্যতে সেটা কিরূপ দাঁড়াইবে, তাহা তিনি ঠিক অনুভব করিতে পারিতেন। নিজের সম্বন্ধে মোহিনী কোন কথা না খুলিয়া বলিলেও তাহার কথাবার্ত্তার ভাবে তিনি আরও বুঝিয়াছিলেন, মোহিনী ফুলসাহেবের নিকটে কোন বিষয়ে প্রতারিত হইয়াছে—এরূপ স্থলে অবশ্য সে বিষয়টা আদিরসাত্মক এবং কিছু মৰ্ম্মভেদী।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *