Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » মায়াবী || Panchkari Dey » Page 70

মায়াবী || Panchkari Dey

এখানে ফুলসাহেব ও জুমেলিয়ার সম্বন্ধে দুই-একটি কথা বলা বোধ করি, অসঙ্গত হইবে না। যখন জুমেলিয়াকে বাহির করিবার জন্য অরিন্দম, দেবেন্দ্রবিজয় ও সিরাজউদ্দীন তিনজনে মিলিয়া এ-ঘর ও-ঘর করিয়া ঘুরিতেছিলেন, তখন পাতালপুরীর মধ্যে একটি কক্ষে জুমেলিয়া বিষণ্ণ মুখে দাঁড়াইয়া নত-নেত্রে ফুলসাহেবের মূৰ্চ্ছাপন্ন অচেতন দেহ অতি মনোযোগের সহিত পৰ্য্যবেক্ষণ করিতেছিল। সেই পাতাল-পুরীর একপাশে একটি ছোট দীপ তথাকার গাঢ়তর অন্ধকারের মধ্যে অত্যন্ত নিস্তেজভাবে জ্বলিতেছিল। এবং তাহার ক্ষীণ শিখাটা প্রচুর অন্ধকারের মধ্যে সিন্দুরের ন্যায় ঘোর আরক্ত হইয়া উঠিয়াছিল। সেই পাতাল-পুরীর চারিদিক্ বন্ধ, কোন্ পথে যে তন্মধ্যে প্রবেশ করা যায়, তাহা জুমেলিয়াই জানে। আমাদের সেটা জানিবার তেমন কোন আবশ্যকতা নাই।

দুই-তিনবার জুমেলিয়া শিশি হইতে ঢালিয়া দুই-তিন রকমের ঔষধ ফুলসাহেবের মুখে দিল। মুখের দুই পাশ দিয়া ঔষধ গড়াইয়া মাটিতে পড়িল।

যখন কিছুতেই কিছু হইল না, তখন জুমেলিয়া একখানি বড় আকারের শাণিত ছুরি বাহির করিল। এবং সেই ছুরিকা দিয়া ফুলসাহেবের দক্ষিণ হস্তে আঘাত করিল। প্রবলবেগে রক্তধারা বহিতে লাগিল। ক্রমে যখন রক্তপাত বন্ধ হইয়া আসিল, তখন জুমেলিয়া সেই ক্ষতস্থানে মুখ দিয়া রক্তশোষণ করিয়া বাহিরে ফেলিতে লাগিল। অনেকক্ষণ ধরিয়া এইরূপ করিলে ফুলসাহেবের একটু জ্ঞান হইল। সে আসন্নমৃত্যু রোগীর ন্যায় উঠিবার জন্য বারংবার ব্যর্থ বলপ্রয়োগ করিতে লাগিল। অবশেষে নিশ্চেষ্ট অবস্থায় পড়িয়া, জুমেলিয়ার দিকে তীব্রদৃষ্টিতে চাহিয়া বলিল, “পিশাচী, তুই কে? তুই আমাকে এ কোন্ নরকে এনেছিস্? সর্—সর্—সর্, এখান হতে তুই দূর হ’য়ে যা;নরকে এসেছি এখানেও আমাকে সুখী হ’তে দিবিনে?”

এই বলিয়া, ফুলসাহেব অন্যদিকে মুখ ফিরাইয়া ঘন ঘন নিঃশ্বাস টানিতে লাগিল।

জুমেলিয়া সেই ক্ষতস্থান বাঁধিয়া দিয়া ফুলসাহেবকে আবার একটা কি ঔষধ খাওয়াইয়া দিল। তাহাতে অনতিবিলম্বে ফুলসাহেবের দুর্ব্বল দেহের অবসন্নতা অনেকটা কাটিয়া গেল। ফুলসাহেব ধীরে ধীরে উঠিয়া বসিল।

জুমেলিয়া বলিল, “এখন কেমন আছ? আর কোন কষ্ট হইতেছে?”

ফুলসাহেব ক্ষীণস্বরে বলিল, “মাথার ভিতরে বড় যন্ত্রণা হইতেছে। জুমেলিয়া, তুমি আমাকে এখানে আনিয়াছ কেন?”

জুমেলিয়া বলিতে লাগিল, “অরিন্দমের কথা কি ভুলিয়া গিয়াছ? আগে অরিন্দম আমাকে ধরিবার জন্য চেষ্টা করে, তখন তুমি এখানে ছিলে না। এমনকি, সে আমার শোবার ঘর পর্য্যন্ত তাড়া করিয়া আসে। আমি সেই ঘরে সেই আলমারীর গুপ্তদ্বার দিয়া সিরাউদ্দীনের ঘরে পালিয়ে যাই তখন সিরাউদ্দীন ঘুমাইতেছিল। কিছুক্ষণ পরে আমি আবার সেই গুপ্তদ্বারের পশ্চাতে থাকিয়া শুনিলাম, অরিন্দম আর তোমার কি কথাবার্তা হইতেছে। তখনই তোমাদের দুইজনে হাতাহাতি আরম্ভ হইল; আমি অন্তরাল হ’তে দেখিতে লাগিলাম। শেষে তুমি নিজের বিষ-কাঁটা নিজের হাতে বিঁধে অজ্ঞান হ’য়ে পড়লে। অরিন্দম তোমার হাতে-পায়ে হাতকড়ি ও বেড়ি লাগিয়ে তোমাকে ফেলে রেখে গেল। সে চ’লে গেলে আমি তোমাকে একা বুকে করিয়া এই ঘরে লইয়া আসিলাম। এখানে আসিয়া এই ঘরের পাশেই অন্ধকূপের ভিতরে একটা মানুষের গোঙানির শব্দ শুনিতে পাইলাম;কিন্তু এখান হইতে কিছুই দেখা যায় না; সেই গোঙানির কারণটাও ঠিক বুঝিতে না পারিয়া এখান হইতে উপরে গিয়া দেখিলাম, ইহার উপরের ঘরটার অন্ধকূপের দ্বারের ভিতরে একটা ম‍ই লাগান রহিয়াছে। ভিতরে উঁকি মারিয়া যাহা দেখিলাম, তাহাতে সমুদয় বুঝিতে পারিলাম। তখন সেই ভিকট্রয়েল দিয়া অরিন্দম ও দেবেন্দ্রবিজয়কে পুড়াইয়া মারিতে গেলাম; কিন্তু কাজে কিছুই হল না। সিরাজউদ্দীনের ঘর থেকে যখন বাহিরে আসি, তখন সে গুপ্তদ্বারটা বন্ধ করিয়া আসিতে ভুল হইয়াছিল। সিরাজউদ্দীন এমন সময়ে আসিয়া শিশিটা আমার হাত থেকে ছিনাইয়া লইল। তখন প্রতিশোধ নেওয়াটা সহজ হইবে না মনে করিয়া, এখানে আসিয়া তোমার শুশ্রূষা করিতে লাগিলাম। অনেক রকম চেষ্টা করিয়া, কিছুতেই তোমার জ্ঞান হয় না দেখিয়া বড়ই ভাবনা হইল। শেষে তোমার হাতের যে শিরায় সেই কাঁটা ফুটিয়াছিল, সেই শিরাটা ছুরি দিয়া কাটিয়া দিলাম; সেই ক্ষতস্থানে মুখ লাগাইয়া রক্ত শুষিয়া ফেলিতে লাগিলাম। রক্তের সঙ্গে বিষের অনেকটা তেজ বাহির হইয়া গেল, তোমার জ্ঞান হইল।”

ফুলসাহেব বলিল, “তবে সিরাজউদ্দীনও হাত-ছাড়া হইয়া গেল। মনে করিয়াছিলাম, ঐ সিরাজউদ্দীনকে মাঝে ফেলিয়া কুলসমের কাছ থেকে পাঁচ-সাত হাজার টাকা আদায় করিব; সেটা আর হইল না;” ·

জুমেলিয়া বলিল, “অরিন্দম বাঁচিয়া থাকিতে আমাদের কোন আশাই সফল হইবে না।”

ফুলসাহেব বলিল, “সেটা এখন বেশ বুঝিতে পারিয়াছি; অরিন্দমকে খুন করিতে না পারিলে আমাদের অদৃষ্ট কিছুতেই সুপ্রসন্ন হইবে না। অরিন্দম যাহাতে শীঘ্র মরে, এখন আমি প্রাণপণ করিয়া সৰ্ব্বাগ্রে সেই চেষ্টাই করিব।”

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *