Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » মায়াবী || Panchkari Dey » Page 65

মায়াবী || Panchkari Dey

দেবেন্দ্রবিজয়ের অকস্মাৎ পাতাল-প্রবেশের এবং নিজের বিজয় বার্তা জুমেলিয়ার শ্রুতিগোচর করিবার জন্য তাড়াতাড়ি ফুলসাহেব দ্বিতলে উঠিয়া, যে-কক্ষে জুমেলিয়া অরিন্দমকে একদম বোকা বানাইয়া অন্তর্হিত হইয়াছিল, সেই কক্ষের দিকে চলিলেন। সেইটি জুমেলিয়ার শয়ন-কক্ষ’। যখন অরিন্দম ও দেবেন্দ্রবিজয় বাড়ীর ভিতরে প্রবেশ করেন তখন ফুলসাহেব বাড়ীতে উপস্থিত ছিলেন না, অতএব তাঁহার পরম শত্রু অরিন্দমের আগমন এবং জুমেলিয়ার অন্তর্দ্ধান সম্বন্ধে ফুলসাহেব কিছুই জানিতে পারেন নাই। ফুলসাহেব জুমেলিয়ার শয়ন-গৃহের সম্মুখে আসিয়া দেখিলেন, সেখানে জুমেলিয়া নাই, কবাট জোড়া ভগ্নাবস্থায় পড়িয়া রহিয়াছে। ফুলসাহেব বিস্ময়-বিহ্বল হইয়া ঘরের ভিতরে গেলেন। ঘরের ভিতরে সম্মুখদিক্কার কোণে অরিন্দম দাঁড়াইয়া ছিলেন, সুতরাং ফুলসাহেব বাহির হইতে তাঁহাকে দেখিতে পান নাই; কিন্তু ভিতরে গিয়া সহসা অরিন্দমকে দেখিয়া স্তম্ভিত হইয়া গেলেন। সে-ভাব দমন করিয়া পরিষ্কার স্বরে বলিলেন, “একি—অরিন্দমবাবু যে! হঠাৎ কি মনে করে?”

অরিন্দম সহাস্যে বলিলেন, “অনেকদিন হইতে মহাশয়ের কোন সংবাদাদি পাই নাই—একবার দেখা করিতে আসিলাম।”

ফুলসাহেব একবার হো হো করিয়া হাসিয়া উঠিলেন। তাহার পর বলিলেন, “আমাদের উভয়ের মধ্যে বন্ধুত্ব নামক পদার্থটি যেরূপ ঘনীভূত হইয়া উঠিয়াছে, তাহাতে পরস্পরের অদর্শনে পরস্পরের যথেষ্ট কষ্ট হইবারই কথা। আমিও তোমার অদর্শনে অত্যন্ত উৎকণ্ঠিত ছিলাম। দেবেন্দ্রবিজয়ের নিকটে আমার স্নেহ-পত্র পাও নাই?”

অরিন্দম বলিলেন, “হাঁ পাইয়াছি বৈ কি।”

ফুলসাহেব। সেই পত্র পাইয়াই তুমি আসিয়াছ। খুব শীঘ্রই আসিয়াছ;এত শীঘ্র তুমি আসিবে, আমি এরূপ আশা করি নাই। তুমি যে-কাজে নিযুক্ত, তাতে সকল বিষয়ে এরূপ তৎপর হওয়া তোমার খুবই আবশ্যক। যাই হ’ক্, তুমি দেবেন্দ্রবিজয়কে সঙ্গে আনিয়া ভাল কর নাই, তাহা হইলে আজ বেচারাকে এমন অকালে প্রাণ হারাতে হইত না। লোকটা এবার অত্যন্ত গরম হইয়া উঠিয়াছিল, তা’ তাহাকে একেবারে ঠাণ্ডা করিয়া দিয়াছি।

ফুলসাহেবের কথা শুনিয়া অরিন্দমের ভয় হইল। বলিলেন, “তুমি কি তাহাকে খুন করিয়াছ?”

ফুল। আমি তাহাকে খুন করিতে যাইব কেন? সে নিজেকে নিজেই খুন করিয়াছে—লোকটা এমনই বুদ্ধিমান্! আমি তাহাকে স্পর্শও করি নাই। সে যা’ হ’ক্, অরিন্দমবাবু, তোমার নিকটে কোন অস্ত্র শস্ত্র আছে কি?

অরিন্দম। আছে। কেন?

ফুল। তা’ত থাকিবারই কথা। আমি যদি এখান থেকে চলে যাই, তা’ হ’লে বোধহয়, তন্মধ্য হইতে কোন-না কোন একটির আস্বাদ আমাকে অনুভব করাইবে, মনে করিয়াছ? এমনকি আমাকে হত্যাও করিতে পার?

অরি। সে ইচ্ছা আমার নাই।

ফু। (উপহাস করিয়া) সহসা এত দয়ালু কবে হইলে, অরিন্দম?

অ। আপাততঃ তোমার নিকটে কোন অস্ত্র আছে?

ফু। দুর্ভাগ্য আমার–আমি এখন নিরস্ত্র; নতুবা সে কথা জিজ্ঞাসা করিয়া তোমাকে কষ্ট পাইতে হইত না।

অ। (সহাস্যে) কেন?

ফু। তাহা হইলে যে মুহূর্ত্তে তুমি আমার দৃষ্টিগোচর হইয়াছিলে, সেই মুহূর্তে আমি তোমাকে এ সংসার হইতে বিদায় করিতাম।

অ। (সহাস্যে) কেন?

ফু। আরও জান বোধহয়, তোমার প্রাণ নিতে আমি প্রাণপণ করিয়াছি–হয় আমি মরিব, নয় তুমি মরিবে। আর তুমি মনেও স্থান দিয়ো না যে, জীবিত ফুলসাহেবকে তখন তুমি ধরিতে পারিবে।

অ। এখন যদি আমি তোমাকে গ্রেপ্তার করি, তুমি কি করিবে মনে করিয়াছ?

ফু। অরিন্দমবাবু, সকল সময়েই আমি নিজেকে নিজে রক্ষা করিতে পারি।

অ। আমি এখনই তোমায় গ্রেপ্তার করিব।

ফু। মুখের কথা নয়, মনে করিলেই ফুলসাহেবকে ধরিতে পারা যায় না। অনেকেই সে চেষ্টা করেছে।

অ। সে অনেকের মধ্যে আমি সে চেষ্টা সফল করিতে পারিব। তুমি আমার কয়েকটা পরিচয় পূৰ্ব্বে পাইয়াছ।

ফু। আমি তোমাকে খুব জানি; তোমার বুদ্ধি, কৌশল, কুখ্যাতি, নৈপুণ্য, শক্তি, সাহস, ক্ষমতা কিছুই আমার অপরিচিত নহে। আমি তোমাকে যতদূর জানি, তাতে তুমি যে আমার একজন যোগ্য প্রতিযোগী, সে সম্বন্ধে আমার কোন সন্দেহ নাই।

এই বলিয়া ফুলসাহেব কেথাও কিছুই নাই, একেবারে লাফাইয়া আচম্বিতে অরিন্দমের ঘাড়ে পড়িল। ফুলসাহেব সহসা যে তাঁহাকে এমনভাবে আক্রমণ করিবে, এ কথা আগে অরিন্দম মনে করেন নাই। তিনি এক হাতে ফুলসাহেবের গলাটা টিপিয়া ধরিয়া অপর হাতে তাহার ললাটে সজোরে একটি মুষ্ট্যাঘাত করিলেন। কপাল কাটিয়া রক্ত বহিতে লাগিল।

তাহার পর পরস্পরের প্রতি পরস্পরের মুষ্ট্যাঘাত বর্ষণটা প্রচুর পরিমাণেই হইতে লাগিল। এবং দুম্ দাম্, ঠক্ ঠকাস্ শব্দে ঘরটা ক্ষণে ক্ষণে প্রতিধ্বনিত এবং উত্থান-পতনের ও পদক্ষেপের দুপ দাপ ধপ্ ধপাস্ শব্দে ঘন ঘন কম্পিত হইতে লাগিল। এত চেষ্টা করিয়াও দুঃখের বিষয় কেহ কাহাকে সহজে বশে আনিতে পারিলেন না। প্রায় অর্দ্ধ ঘণ্টা এইরূপে কাটিল। তথাপি মল্লযুদ্ধটা সমানভাবেই চলিতে লাগিল।

এমন সময়ে সহসা ফুলসাহেব বস্ত্রাভ্যন্তর হইতে একটা তীক্ষ্ণমুখ লৌহ শলাকা বাহির করিল। সেটা দেখিতে অনেকটা দীর্ঘ সূচীর মতন, কেবল অগ্রভাগ একটু বাঁকা। দেখিয়াই অরিন্দমের বুঝতে বাকী রহিল না, সেই লৌহ-শলাকা বিষাক্ত, এবং তাহার এমন একটা শক্তি আছে যে, একটু আঘাতেই দেহ হইতে প্রাণটাকে অতি সহজে বিচ্ছিন্ন করিয়া দিতে পারে।

ফুলসাহেব যেমন সেই বিষাক্ত শলাকা অরিন্দমের দেহে বিদ্ধ করিতে যাইবে, অমনই অরিন্দম দুইহাতে ফুলসাহেবের হাত ধরিয়া ফেলিলেন। ফুলসাহেব অপর হস্তে অরিন্দমের মুখের উপরে, নাকের উপরে, যেখানে-সেখানে অবিশ্রান্ত ঘুসি চালাইতে লাগিল। সেইসকল ঘুসির মধ্যে একটা লক্ষ্যভ্রষ্ট ঘুসি নিজের সেই লৌহ শলাকার উপর পড়িয়া ফুলসাহেবের এত উদ্যম—এত আগ্রহ সমুদয় নিষ্ফল করিয়া দিল—সেই বিষ-শলাকা ফুলসাহেবেরই মণিবন্ধে বিদ্ধ হইল।

যেমন বিদ্ধ হওয়া, অরিন্দমকে আর কোনরূপ কষ্ট স্বীকার করিতে হইল না। ফুলসাহেব তখনই গৃহতলে পড়িয়া গেল এবং সেই মুহূর্ত্তেই তাহার সবল ও সচল অঙ্গপ্রত্যঙ্গ একেবারে অসাড় ও অচল হইয়া আসিল।

বিস্মিত হইয়া, স্তম্ভিত হইয়া, শিহরিত হইয়া অরিন্দম সরিয়া দাঁড়াইলেন। এবং তাঁহার নিজের হৃষ্টপুষ্ট দেহের সমস্ত শক্তির অপেক্ষা, সুদীর্ঘ শাণিত ছুরি অপেক্ষা, অগ্নিগর্ভ সাক্ষাৎ মৃত্যুতুল্য রিভল্ভারের অপেক্ষা সেই একখণ্ড অতি ক্ষুদ্র নগণ্য লৌহ শলাকার কত বেশী শক্তি, মনে মনে তাহারই সমালোচনা করিতে লাগিলেন। ফুলসাহেবের গায়ে হাত দিয়া দেখিলেন, তাহার সেই নিস্পন্দ দেহ তখন অত্যন্ত শীতল এবং অত্যন্ত কঠিন। এবং তন্মধ্যে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের গতিবিধি একেবারে বন্ধ হইয়া গিয়াছে; তথাপি অরিন্দম ফুলসাহেবকে বিশ্বাস করিতে পারিলেন না। হাতকড়া ও বেড়ি বাহির করিয়া ফুলসাহেবের হাতে পায়ে সুদৃঢ়রূপে সংলগ্ন করিলেন, এবং খাটখানা টানিয় আনিয়া তাহার একদিক্‌কার পায়া ফুলসাহেবের পিঠের উপরে চাপাইয়া দিলেন।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress