একাদশ পরিচ্ছেদ : মিত্রের কার্য্য
এমন সময়ে যোগেন্দ্রনাথ সেখানে উপস্থিত হইলেন। ব্যাপার দেখিয়া তাঁহার সর্ব্বাঙ্গ শিহরিয়া উঠিল। তিনি অরিন্দমের পত্র পান্ নাই, জমাদার পত্র লইয়া তাঁহার বাটীতে উপস্থিত হইবার আগে, তিনি বাহির হইয়াছিলেন। থানাতে গিয়া—সেখানে সেই জমাদারের মুখে যৎকিঞ্চিৎ বিবরণ অবগত হইয়া এখানে আসিতেছেন। দারোগাকে কারণ জিজ্ঞাসা করায়, সে যাহা জানিত যোগেন্দ্ৰনাথকে বলিল। অরিন্দমের সেই পত্রের কথা বলিতে মনে হইল না।
যোগেন্দ্রনাথ বিশেষ ব্যস্ততার সহিত ফুলসাহেবকে বলিলেন, “আপনি কি কোনরকমে অরিন্দমবাবুকে রক্ষা করিতে পারেন না?
ফুলসাহেব বলিলেন, “আমার আর কোন হাত নাই।”
যোগেন্দ্রনাথ বলিলেন, “তবে কি ইনি বাঁচিয়া নাই?”
ফুলসাহেব বলিলেন, “না, তাহা হইলে আমাকে নিশ্চেষ্টভাবে বসিয়া থাকিতে দেখিতেন না। কি করিব, এখন আর কোন উপায় নাই।”
যোগেন্দ্রনাথ দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলিয়া বলিলেন, “তবে আর কি হইবে! ডাক্তারবাবু, হঠাৎ এইরূপ মৃত্যুর কারণ কি? বোধহয়, অরিন্দমবাবু আত্মহত্যা করিয়াছেন।”
ফুলসাহেব বলিলেন, “সে কথা আমি ঠিক বলিতে পারিলাম না;আমার বোধহয়, হৃদয়াঘাতেই মৃত্যু হইয়াছে।”
ফুলসাহেব তখন যোগেন্দ্রনাথের নিকট হইতে বিদায় লইয়া উঠিল। যাইবার সময়ে অন্যদিকে মুখ ফিরাইয়া একবার হাসিল; সেই হিংসাতীব্র চিরাভ্যস্ত মৃদুহাসি—কেহ দেখিল না।
ফুলসাহেব চলিয়া গেলে অনতিবিলম্বে যোগেন্দ্রনাথ একখানি পাল্কীতে তুলিয়া অরিন্দমকে নিজের বাটিতে লইয়া গেলেন।
সেখানে অরিন্দমকে একটি প্রশস্ত পরিষ্কৃত গৃহমধ্যে রাখা হইল। বাটীতে আসিয়া অরিন্দমের সেই পত্র পাইয়া যোগেন্দ্ৰনাথ সকলই বুঝিতে পারিলেন। তখনই খ্যাতনামা চিকিৎসকদিগকে আনিবার বন্দোবস্ত করিলেন। তিনি তখন নিজে যাইয়া অরিন্দমের বাসা হইতে সেই অৰ্দ্ধ দগ্ধ বিষাক্ত চুরুট সন্ধান করিয়া লইয়া আসিলেন। কলিকাতা হইতে দুই-তিনজন নামজাদা ডাক্তারকে আনাইলেন। সেইদিন রাত্রিশেষে তিনজন ইংরাজ ডাক্তার যোগেন্দ্রনাথের বাটী হইতে কলিকাতাভিমুখে যাত্ৰা করিলেন।