মামন : পর্ব – ৭ (Mamon)
দিন যায়। গুলাটির পার্লারে যাতায়াত বেড়ে যায়। উনি প্রকাশ্যেই বলেন, শুধু ভেনাসের সঙ্গে গল্প করার লোভে উনি আসেন। উনি মামনের সাথে ঘনিষ্ঠ হতে চান তো সুমঙ্গলার জ্বলুনি বেড়ে যায়। একদিন সুমঙ্গলা সরাসরি মামনকে বলেছিল দিল যে পরের দিন থেকে গুলাটি এলে মামন যেন অজুহাত দেখিয়ে নীচে লেডিস্ গার্মেন্টসের দোকানে চলে যায়, উনি চলে গেলে ফের পার্লারে যাবে, মামন কি আর বলবে, নীরবে ঘাড় নেড়ে সায় দিল। ঠিক পরের দিন গুলাটি এসে হাই ভেনাস বলে মামনকে জড়িয়ে ধরল। মামন হাসি মুখে ওয়েলকাম জানিয়ে একটু আসছি বলে সোজা চলে গেল নীচের দোকানে।
নিজে কোনদিন তেমন ভাবে নিজের জন্য বা বাবা মায়ের জন্য কোন বড় দোকান থেকে জামা কাপড় কেনে নি। এদের দোকান আগে দেখলেও এত দাম যে মেয়েদের জামা কাপড়ের হতে পারে সেই সম্বন্ধে তার ধারনাই ছিল না। সে আরও অবাক হল এতদাম দিয়ে কেনার লোকের অভাব নেই। দোকানের কর্মচারীদের সংখ্যাগরিষ্ঠই মেয়ে, অল্প কিছু ছেলেও আছে, সবাই স্থানীয়, এরাও মামনকে যথেষ্ট খাতির করত। দিন কেটে যাচ্ছে, সেই একই রুটিন, কোন হেরফের নেই। একদিন গুলাটি মামনকে চেপে ধরে জানতে চাইল যে মামন কেন ইদানিং তাকে দেখলে অন্য কোথাও চলে যাচ্ছে। ওর প্রবলেম ঠিক কি। মামন ইতস্তত করতে লাগল, তারপর উত্তর দিল যে তার দায়িত্ব বেড়েছে, তাকে দোকানেও টাইম টু টাইম যেতে হয় আর এই কাজগুলো না করলে সে মাইনে পাবে না, তখন খাবে কি ! গুলাটি প্রথমে একচোট হেসে নিল, পরে বলল- সমঝদারোকে লিয়ে ইশারাই কাফি হ্যায়, ওকে নো প্রবলেম, সে নিজেই সলিউশন খুঁজে নেবে, আসলে সে তার ভেনাসকে খুব ভালোবেসে ফেলেছে, আর তার পছন্দ নয় যে ভেনাস এই ধরনের দাসী বাঁদির কাজ করে। মামন তো সুমঙ্গলার চেন বাঁধা কুকুর, অথচ মামনের সায় পেলেই সে মামনকে নিজের পায়ে দাঁড় করাতে পারে। সে অর্থনৈতিক দিক থেকে যেমন বর্তমানে সুরক্ষিত ঠিক ততটাই তার ভবিষ্যত মজবুত। আর সে কতদিন তার রূপ আর যৌবন বেচে খাবে, ভাঁড়মে যানে দো দুনিয়া কো। আজ যখনই মামনের এই রূপ যৌবন চলে যাবে তখন এই সুমঙ্গলাই ওর চেন খুলে তাড়িয়ে দেবে, তখন কোথায় মাইনে আর কোথায় বা আশ্রয়। ভিক্ষা করা ছাড়া মামনের ভবিষ্যতে তো আর কিছুই লেখা নেই। মামন স্তম্ভিত হয়ে গেল কথাগুলো শুনে। সত্যিই তো এমন ভাবে সে তো কোনদিন ভাবেনি। তবুও মুখে কাষ্ঠহাসি এলে শুধু হুম বলে দোকানে চলে এল।
সেদিন মহেশ দোকানে ছিল। ও মাঝেমধ্যেই আসে। সুমঙ্গলার কোনও একটা কাজ ছিল বলে আজ মহেশ পুরোদস্তুর ওই সব ব্যবসার জায়গাগুলোতে ডিউটি দেবে।
মনের আয়না মুখ, ঝানু ব্যবসাদার মহেশ ধরতে পারল যে মামন খুব চিন্তিত। সে মামনকে কাছে ডেকে অত্যন্ত সহানুভূতির সঙ্গে কেন সে চিন্তিত তার কারণ জানতে চাইল, মামন ও কিছু নয় জাতীয় উত্তর দিয়ে এড়িয়ে গেলেও মহেশের মনে একটা ছোট হলেও কাঁটা বিঁধে রইল।
মামন প্রায়দিন রাতে রূপালী বৌদিকে ফোন করে কথা বলে, আসলে রাণার বর্তমান অবস্থা জানাই তার মুখ্য উদ্দেশ্য। আজ রাতেও মামন যথারীতি রূপালীকে ফোন করে সমস্ত ঘটনা খুলে বলল। রূপালী যে উত্তর দিল তার জন্য মামন প্রস্তুত ছিল না, চমকে উঠল অনেক অকথিত, অজানা ঘটনা শুনে। চিনতে পারল মুখ আর মুখোশের তফাৎ।
রূপালীর গরীব ঘরের মেয়ে, প্রেম করে বিয়ে করলেও শ্বশুরবাড়ির চাপ ছিল পণ আনার,যেমন মামনের ছিল। একদিন ওর বর যখন বিদেশে উচ্চশিক্ষিত হতে গেছে , ওর শ্বশুড়ি আর ননদরা ওকে মেরে ধরে বের করে দেয়, ভাগ্যিস ওর ছেলেপুলে ছিল না। রাস্তায় এসে প্রথমেই এক সহৃদয় ব্যক্তির পাল্লায় পড়ে, ও সব শুনে ওকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যাবে বলে সোজা নিয়ে যায় এক রেড লাইট এরিয়াতে। সেখানে কিছুদিনের মাথাতে রূপালী বিক্রি হয়ে যায়।
মহেশ ব্যবসার কাজে প্রায় কলকাতাতে আসত। সারাদিন কাজ করে রাতে ওই পট্টিতে ফূর্তি করতে যেত, আর ওই বাড়িটাতেই। বিক্রি হবার পরে মহেশই ছিল রূপালীর প্রথম খদ্দের। তারপর থেকে মহেশ আর কোথাও যেত না। এমনকি হোটেলেও আগের মত উঠত না। এয়ারপোর্ট থেকে সোজা ওই বাড়িতে। সকালে নাস্তা করে বেরিয়ে যেত। সন্ধ্যেবেলাতে ফিরে রূপালীর ঘরে। রূপালীও এতদিনে সেয়ানা হয়ে গেছে, সে ছলাকলা করে এই ফ্ল্যাটটা মহেশকে দিয়ে কেনায়, তারপর মহেশের হাত ধরে রূপালী এখানে এসে ওঠে। মহেশের টাকাতেই সে পার্লার খুললেও, সে কাগজপত্রে মালকিন হলেও ফ্ল্যাট আজও মহেশের নামে। ও চেষ্টা করে যাচ্ছে যাতে মহেশ ওর নামে রেজিস্ট্রেশন করে দেয়, আশা করছে খুব জলদি হয়ে যাবে। মহেশ আরও যেত বাঈজি বাড়িতে। সেখানে সে পিঙ্কির নথ ভাঙে, মানে পিঙ্কি তার সতীত্ব নষ্ট করে মহেশের কাছে। পিঙ্কি খুব জেদী, ও জোর করে মহেশের সঙ্গে চলে আসে বিয়ে করবে বলে। যে কোন কারণ হোক না কেন মহেশ পিঙ্কিকে প্রথমে এই ফ্ল্যাটে এনে তোলে, তারপর সোজা রায়পুর। পিঙ্কিকে মহেশ আদৌ বিয়ে করেনি, মহেশের রক্ষিতা মাত্র । পিঙ্কি ওর এক দাদির নাম নিয়ে ঘুরছে। তবে মেয়েটার এলেম আছে নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছে। আরও একটা কথা বলল তার পার্লার আসলে একটা তথাকথিত সমাজের চোখে নষ্ট মেয়েদের ঠেক। রূপালী অবাক হল এতদিন হলেও মহেশ কেন মামনকে ভোগ করেনি !
এত কথা শুনে মামনের চোখের পাতা স্থির, সে কিছু আর ভাবতে পারছে না।